পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পালাবদল
১৩ মে ২০১১শুক্রবার দুপুর একটা৷ রাজভবনে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিলেন বিদায়ী বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হল পশ্চিমবঙ্গে গত ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট শাসন৷ বিভিন্ন বুথফেরত জনমত সমীক্ষার ফলাফলে আগেই আভাস পাওয়া গিয়েছিল যে প্রত্যাবর্তন নয়, এবার পরিবর্তন ঘটতে চলেছে রাজ্যে৷ কিন্তু সেই পরিবর্তনের হাওয়া যে এমন প্রবল ঝড় হয়ে বামফ্রন্টকে একেবারে সমূলে উচ্ছেদ করবে, সেটা সম্ভবত বাম নেতা-কর্মীরা অতি দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি৷ এমনকি খোদ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের লজ্জাজনক হার হল৷ জনাদেশ এভাবেই বুঝিয়ে দিল, গত সাড়ে তিন দশকে শাসক বাম জোট কী তীব্র বিতৃষ্ণা তৈরি করেছিল মানুষের মনের মধ্যে৷
এদিন সকাল থেকেই ভিড় জমতে শুরু করেছিল দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাটে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে৷ হাজির হয়েছিল দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যম৷ সকাল আটটায় ভোটগণনা শুরু হতেই পরিষ্কার হয়ে যায়, জনতার রায় কোন দিকে যাচ্ছে৷ দুপুর ১২টায় দলীয় কর্মী-সমর্থকদের তুমুল উচ্ছ্বাস আর শঙ্খধ্বনির মধ্যে প্রথমবার ঘরের বাইরে আসেন মমতা৷ ততক্ষণে তাঁর কাছে অভিনন্দন জানিয়ে ফোন চলে এসেছে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, ইউপিএ নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর৷ জনতার সামনে মমতা বিরোধী জোটের এই ঐতিহাসিক জয় উৎসর্গ করলেন মানুষের উদ্দেশ্যে৷
তৃণমূল কংগ্রেস যে একক শক্তিতেই সরকার গড়তে চলেছে, এটা ভোটগণনার মাঝামাঝি পর্যায়েই পরিষ্কার হয়ে যায়৷ তা সত্ত্বেও তৃণমূল নেত্রী এদিন কংগ্রেসকে আহ্বান জানিয়েছেন সরকারে যোগ দেওয়ার জন্য৷ এবং মমতা বারেবারে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে আবেদন জানান শান্তি, শৃঙ্খলা বজায় রাখতে৷ বারণ করেন, যেন স্থানীয় স্তরেও কোনও বিজয় মিছিল বার না করা হয়৷ মমতা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা অত্যন্ত দায়িত্বশীল সরকার গডতে চান৷
এদিন চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মণি ফোন করে পশ্চিমবঙ্গের ভাবী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানান৷ আশা প্রকাশ করেন, বাংলা এবং বাঙালির উন্নয়নে ভবিষ্যতে একযোগে কাজ করার৷
প্রতিবেদন: শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী