পশ্চিমবঙ্গে প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিজেপিতে ব্যাপক ডামাডোল
১৬ মার্চ ২০২১কলকাতায় বিজেপি অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন দলের কর্মীরা। পছন্দের আসনে প্রার্থী হতে না পেরে দল ছেড়েছেন কলকাতার সাবেক মেয়র ও মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় ও তার বন্ধু বৈশাখী চট্টোপাধ্যায়। এমনকী বিজেপি-র কর্মীরা দলের এক প্রার্থীকে তোলাবাজ, মধুচক্রের কারবারি বলে অভিহিত করেছেন। কলকাতার বিক্ষোভ জেলাতেও ছড়িয়েছে। পথ অবরোধ হচ্ছে, দলের অফিসে তালা পর্যন্ত লাগিয়ে দিয়েছেন কর্মীরা। সবমিলিয়ে অত্যন্ত শৃঙ্খলাবদ্ধ, ক্যাডারভিত্তিক দল বলে পরিচিত বিজেপি-র অন্দরের এই ছবি দেখে কেন্দ্রীয় নেতারা রীতিমতো অস্বস্তিতে বলে সূত্র জানাচ্ছে।
দিল্লিতে একটা চালু কথা আছে, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির চাল-চরিত্র-চেহারা অন্য রাজ্যের থেকে একেবারে আলাদা। সে কথাটা বোধহয় ভালোভাবেই টের পাচ্ছেন বিজেপি নেতারা। কারণ, প্রার্থী নিয়েই যেরকম ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে, যেভাবে দলের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে রাস্তায় বসে পড়ছেন দলের কর্মীরা, তাতে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতাদের চিন্তা বাড়াটা স্বাভাবিক। কলকাতায় বিক্ষোভের ফলে মুকুল রায়, অর্জুন সিং-এর গাড়ি আটকে যায়। শিবপ্রকাশকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখানো হয়। বেশ কিছু জেলায় বিক্ষোভ হয়েছে, এমনকী ভাঙচুরও হয়েছে। কর্মীরা পথ অবরোধ পর্যন্ত করেছেন।
আসলে তৃণমূল ভাঙিয়ে বা মমতার দলের প্রার্থী হতে না পারা বিক্ষুব্ধদের বিজেপি যেভাবে স্বাগত জানিয়েছে এবং দলে ঠাঁই দিয়ে প্রার্থী করেছে, তাতে বিক্ষোভ আরো বেড়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনের আগেও আদি(যারা আগে থেকে বিজেপি করছেন) এবং নব্য(যারা সদ্য তৃণমূল বা অন্য দল থেকে সবে এসেছেন) ঝামেলা ছিল। কিন্তু তার তীব্রতা এতটা বেশি ছিল না। কিন্তু এবার সিঙ্গুরে তৃণমূল ছেড়ে আসা ৮৯ বছর বয়সী মাস্টারমশাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। তার বিরুদ্ধে বিজেপির নেতা-কর্মীরা সোচ্চার হয়েছেন। রায়দিঘিতে তৃণমূল ছেড়ে আসা আরেক নেতা শান্তনু বাপুলিকে প্রার্থী করা নিয়েও ক্ষোভ ছড়িয়েছে। একইরকমভাবে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেয়া প্রবীর ঘোষালকে প্রার্থী করা নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে।
কলকাতার হেস্টিংসে রাজ্য বিজেপি-র প্রধান নির্বাচনী অফিসের সামনে প্রবল বিক্ষোভ হয়েছে। করেছেন হাওড়ার পাঁচলা ও উদয়নারায়ণপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। তাদের দাবি, প্রার্থীবদল করতে হবে। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের বিক্ষোভের আঁচ টের পেয়েছেন। হুগলিতে বিজেপি অফিস ভাঙচুর হয়েছে।
শোভন চট্টোপাধ্যায় পূর্ব বেহালায় তার পুরনো কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। তৃণমূল সেখান থেকে প্রার্থী করেছে তার স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়কে। স্ত্রীর সঙ্গে এখন সম্পর্কচ্ছেদ হয়েছে শোভনের। বিজেপি সেখান থেকে শোভনকে প্রার্থী করেনি। তিনি ও বৈশাখী ক্ষুব্ধ হয়ে দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নানা জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে। মন্দিরবাজারে প্রার্থীর বিরুদ্ধে মিছিল করেছেন দলের কর্মীরা। হুগলির চন্দননগরে পথ অবরোধ করেছিলেন বিজেপি কর্মীরা। আলিপুরদুয়ারে একের পর এক অফিসে তালা লাগিয়ে দেন কর্মীরা।
দলের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, বিজেপি যে বড় হয়েছে, ক্ষমতায় আসতে চলেছে, এ সব তারই ইঙ্গিত। এটা অনভিপ্রেত সন্দেহ নেই। কিন্তু এটা বড় সমস্যা নয়। খুব তাড়াতাড়ি মিটে যাবে।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, আনন্দবাজার)