নেকড়ের হাত থেকে ভেড়া উদ্ধার
২৭ জানুয়ারি ২০১৬যতদূর চোখ যায়, ভেড়ার পাল৷ একটা দু'টো নয়, সতের'শ৷ তাদের খেয়াল রাখতে দশটা রাখালিয়া কুকুর হিমশিম৷ দিনে তারা ঘাসের উপর পড়ে ঘুমোয়, রাখালের কথা শোনে না৷ সব চেষ্টাই বৃথা৷ কুকুররা সবাই ক্লান্ত৷
ভেড়ার পালের মালিক ওতার ফারেউলিদসে বলেন, ‘‘রাত্রে কুকুরদের অনেক কাজ থাকে৷ সারাক্ষণ পাহারা দিতে হয়৷ এই এলাকায় অনেক নেকড়ে আছে৷ ওরা এখানে ঘোরাফেরা করে, কাজেই কুকুরদের খুব সতর্ক থাকতে হয়; প্রয়োজনে নেকড়েদের ধাওয়া করে তাড়িয়ে দিতে হয়৷ কাজেই যতটা সহজ মনে হয়, ওদের জীবন ততটা সহজ নয়৷''
গত গ্রীষ্মে একটা ভাল্লুক ওতার-এর ১৩টা ভেড়া মেরেছে৷ এ বছর এসেছে নেকড়েরা, প্রতিবছরই যেমন হয়, যখন রাখালরা হাজার হাজার ভেড়া নিয়ে এখানে আসে৷
‘নেকড়ে মানুষ'
টেমো পপিয়াশভিলি ‘নাক্রেস' বন্যপ্রাণী সুরক্ষা সংগঠনের হয়ে কাজ করেন৷ রাখালরা তাঁকে বলেন ‘নেকড়ে মানুষ'৷ রাখালরা তাঁর কাছে অভিযোগ করেন, ভেড়া চরানোর জায়গা কীভাবে কমে আসছে৷ ক্রমেই আরো বেশি রাস্তা, আরো বেশি বেড়া, এখন আবার নেকড়েদের কথাও ভাবতে হবে, কুকুরদের ধরে রাখতে হবে, নেকড়েদের দিকে গুলি চালালে চলবে না৷
‘নাক্রেস' বন্যপ্রাণী সুরক্ষা সংগঠনের টেমো পপিয়াশভিলি বলেন, ‘‘ওরা আমার সম্পর্কে কী ভাবেন, তা জানি না৷ আশা করি, ওরা আমাকে বুঝতে পারেন; বুঝতে পারেন যে, আমাদের সংগঠন ওদের সাহায্য করার চেষ্টা করছে৷ কিন্তু আমরা যখন শিকারি জীবজন্তুদের নিয়ে কথা বলি, তারা যে জর্জিয়ার প্রকৃতি ও পরিবেশের অঙ্গ, তখন মাঝেমধ্যে বিতর্ক হয় বৈকি৷''
বিষ্ঠা কিন্তু ‘ব্যাজার' কৈ?
হেমন্তে পরিস্থিতি গ্রীষ্মের চেয়ে একটু সহজ৷ তখন নাকি উঁচু ঘাসের মধ্যে দিয়ে গেলে অন্তত সাপের কামড় খাবার ভয় থাকে না – বলেন রাখালরা৷ গবেষকরা কিন্তু সাপের বদলে খুঁজে পেলেন পশুর বিষ্ঠা৷ তা থেকে এই ন্যাশনাল পার্কে যে সব জীবজন্তু থাকে, তাদের শনাক্ত করা যায়৷ ‘নাক্রেস'-এর গেয়র্গে গরগাদসে বলেন, ‘‘আমরা সবসময় বিষ্ঠার আকার আর তার গন্ধ দেখি৷ সব জীবজন্তুর একটা নিজস্ব গন্ধ আছে৷ এটা যেমন একটা ইউরোপীয় ব্যাজার-এর বিষ্ঠা৷''
কিন্তু এই সব জীবজন্তুগুলো থাকে কোথায়? তাদের তো কোনো দেখা নেই? অথচ নাক্রেস যে সব ক্যামেরা ট্র্যাপ লাগিয়ে থাকে, তার ছবি থেকে এই সব জীবজন্তুর অস্তিত্বের স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়৷ বুনো বেড়াল, খ্যাঁকশেয়াল, ইউরেশীয় লিনক্রস, আর হাল্কা রঙের যাদের-বলা-হয় সিরিয়ান ভাল্লুক, তারা অন্তত গোটা বিশেক৷ এমনকি কয়েক বছর আগে একটা পার্শিয়ান চিতাবাঘেরও দেখা পাওয়া গিয়েছিল৷ তারপরেই সে উধাও হয়৷
জীবজন্তুরা পার্কের ঠিক কোথায় রয়েছে, তা জানার জন্য একটা ড্রোনের ব্যবস্থা করেছে নাক্রেস৷ বেআইনি শিকারি অথবা যারা বিনা অনুমতিতে কাঠ কাটছে, তাদের খোঁজ পেতেও এই ড্রোন কাজে লাগে৷ সুবিশাল খাদগুলোতে নাকি ভাল্লুকরা থাকে, মাঝেমধ্যে ওপরে উঠে ভেড়া মারে৷
ড্রোনটা ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে, জিপিএস দিয়ে চালানো হয়৷ নাক্রেস সবে এই কাজ শুরু করেছে৷ কাজেই দুর্ঘটনাও ঘটে থাকে৷ চিন্তা নেই, ড্রোন মেরামত করে নেওয়া যায়৷ দ্বিপ্রহরে প্রথম ভেড়ার পালগুলো এসে পৌঁছায়৷ শীতে এখানে জর্জিয়ার অন্যান্য জায়গার চেয়ে বেশি গরম, তাই আবার ঘাস গজায়৷ কিন্তু একটা ভেড়া মরলে মালিকের ক্ষতি হয় মোট একশ ইউরো, যা এর আগের দিন ঘটেছে৷
ভেড়ার পালের মালিক বেসো খোসিকারিদসে বলেন, ‘‘এই কাছেই ঘটনাটা ঘটেছে, দিনের বেলা৷ আমরা আবার ছিলাম দু'জন, কিন্তু ভেড়ার পালের অন্যদিকে দাঁড়িয়ে ছিলাম, নেকড়েটা যেদিক থেকে আক্রমণ করেছে, সেদিকে নয়৷ কুকুররাও খেয়াল করেনি যে, নেকড়েটা একটা ভেড়াকে আক্রমণ করেছে৷ আমরা যখন এসে পৌঁছাই, তখনও ভেড়াটা বেঁচে ছিল৷ আমরাই সেটাকে মেরে খাই৷''
হাড়গুলো পেল কুকুররা, কাজেই শেষমেষ সকলেরই লাভ – এক ভেড়াটার ছাড়া৷ নেকড়েটাও যে কবে মাঠঘাট পার হয়ে কোথায় গেছে, কে জানে৷ তবে তাকে মানুষের গুলিতে মরতে হয়নি৷ সেটাই বা কম কীসের?