বছরে ১৫টি সন্তান!
৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪থাইল্যান্ডের এক নারী অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেখেন যে, এক দম্পতি সন্তান চান এবং তাঁদের সন্তান গর্ভধারণ করলে সেই নারীকে ১০ হাজার মার্কিন ডলার দেয়া হবে৷ বস্তিবাসী ওয়াসানা অর্থের বিনিময়ে কোনো শর্ত ছাড়াই নয় মাসের জন্য গর্ভ ভাড়া দিতে রাজি হন৷ এবং যথাসময়ে একটি ফুটফুটে সন্তানের জন্ম দেন৷
অনলাইনে এই বিজ্ঞাপনটি দেন মিতসুটোকি শিগেতা৷ তিনি জাপানের এক কোটিপতির সন্তান৷ পুলিশ জানিয়েছে, শিগেতা কেবল ওয়াসানার গর্ভেই নয়, থাইল্যান্ডের আরো ১০ জন নারীর গর্ভ ভাড়া করেন সন্তান উৎপাদনের জন্য৷ প্রায় ৫ লাখ ডলার খরচ করে ১৬টি শিশু জন্ম দেয়ার চেষ্টা করছেন তিনি৷
বলা বাহুল্য, সংবাদ মাধ্যমে এমন একটা খবর আসার পর, ‘সারোগেট' মা নিয়ে রীতিমত গুজব শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে৷ ফলে থাইল্যান্ডের সামরিক সেনা সরকার এই ব্যবসা বন্ধ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে৷ ওয়াসানা তাঁর জীবনের কাহিনি জানিয়েছেন সংবাদ সংস্থা এপিকে৷ তবে শর্ত ছিল তাঁর পদবী যাতে উল্লেখ করা না হয়, কারণ এর ফলে তাঁর পরিবারের সম্মানহানি হতে পারে৷
এদিকে এরই মধ্যে থাই পুলিশ শিগেতার বিরুদ্ধে মানব পাচার ও শিশু হয়রানির তদন্ত করেছে৷ তবে পুলিশের কথায়, এখনো তাঁর বিরুদ্ধে কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ ওদিকে এ মুহূর্তে পলাতক ২৪ বছর বয়সি শিগেতা তাঁর আইনজীবীকে জানিয়েছেন যে, একটা বৃহৎ পরিবারের স্বপ্ন তাঁর৷ আর সে কারণেই এ কাজটি করছেন তিনি৷ সেই সাথে নিজের ১২টি সন্তানকে ফেরতও চেয়েছেন৷ শিগেতার ১৬টি সন্তানের মধ্যে ১২টি এখন মানবাধিকার কর্মীদের হেফাজতে রয়েছে৷ এই শিশুদের ডিএনএ পরীক্ষা করে জানা গেছে যে, শিগেতাই তাদের বাবা৷ তবে ওয়াসানা ছাড়া বাকি শিশুদের মা কারা এ সম্পর্কে কিছুই জানতে পারেনি পুলিশ৷
ওয়াসা কেন বেছে নিলেন এই পথ?
৩২ বছর বয়সি ওয়াসানা ব্যাংককের একটি বস্তিতে বসবাস করেন৷ থাই মিষ্টি বিক্রি করে তাঁর দিন চলে৷ প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ ডলার আয় হয় তাঁর৷ বাবার চিকিৎসার কারণে নেয়া ঋণের বোঝা মেটাতে না পারায় ঘর ছেড়ে বস্তিতে আশ্রয় নিতে হয়েছে তাঁকে৷ ২০১২ সালে তাঁর বোন সারোগেট মাদারের বিজ্ঞাপনটির ব্যাপারে তাঁকে জানায়৷
বার্তা সংস্থা এপিকে ওয়াসানা জানান, ‘‘আমার মনে হয়েছিল এ দম্পতির হয়ত সন্তান হয় না, তাই যে কোনো মূল্যেই তাঁরা সন্তান চান৷ এজেন্টও আমাকে বলেছিল যে, এই বিদেশি দম্পতি সন্তান চায়৷ তবে চিকিৎসক আমার ডিম্বানু না অন্য কোনো নারীর ডিম্বানু ব্যবহার করেছিল – তা আমার জানা নেই৷''
২০১৩ সালের ২০শে জুন ওয়াসানা একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন৷ সেখান থেকেই এজেন্ট ছেলেটিকে নিয়ে যায় এবং ছয়দিন পর ওয়াসানা তাঁর বাড়িতে ফিরে আসে৷ হাসপাতালে শিগেতার সাথে দু'বার দেখা হয়েছিল তাঁর৷ তবে কোনো কথা হয়নি৷ এমনকি শিগেতা তাঁকে ধন্যবাদ পর্যন্ত দেননি৷ এর এক মাস পর আইনজীবী তাঁকে শিশুর অভিভিবকত্ব হস্তান্তরের জন্য আদালতে যেতে বলেন৷ থাই আইন অনুযায়ী, এ ধরণের শিশুর ক্ষেত্রে সারোগেট মা ও তাঁর স্বামী থাকলে দু'জনেরই অনুমতি লাগে৷
বৃহৎ পরিবারের স্বপ্ন, নাকি অন্য কারণ?
পরবর্তীতে একই ব্যক্তির নামে অনেকগুলো ফাইল জমা পড়লে, তা নিয়ে থাই গণমাধ্যমে হৈ চৈ পড়ে যায়৷ তবে জাপানে এই সংবাদ প্রচার না করার জন্য শিগেতার বাবা চাপ দেন৷ সেখানকার বিশিষ্ট আইনজীবী স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোকে ‘লিগাল নোটিস' পাঠান৷ এরপরও প্রথমসারির বেশ কয়েকটি জাপানি পত্রিকা জাপানের প্রভাবশালী ধন্যাঢ্য ইয়াসুমিতশু শিগেতার নাম উলেখ করে তাঁর পুত্রের কাহিনি ছাপিয়ে দেয়৷ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ইয়াসুমিতশু-র কাছে এ বিষযে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷
নিউ লাইপ নামে এক পত্রিকাকে শিগেতা জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচনে দাঁড়াতে চান৷ তাই অনেক ব্যক্তির সমর্থন তাঁর দরকার৷ আর সেটা যদি পরিবার থেকে পাওয়া যায়, তাহলে মন্দ কী? তাই তিনি প্রতি বছর ১০ থেকে ১৫টি সন্তান চান৷ এবং নিজের মৃত্যু পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবেন৷
এপিবি/ডিজি (এপি, রয়টার্স)