নির্বাচনে অনিয়মের নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি
৩০ এপ্রিল ২০১৫সিটি নির্বাচনের এই গণতান্ত্রিক বিপর্যয়ে তাঁরা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে দায়ী করছেন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নও সিটি নির্বাচনের সকল অনিয়ম ও সহিংসতার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে৷
নির্বাচনের দিন প্রকৃত অর্থে সকাল ১১টার মধ্যেই তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন শেষ হয়ে গেলেও ৪৪ ভাগ ভোট পড়েছে বলে নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে৷
নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল, জালভোট আর ব্যালট পেপারে ইচ্ছামত সিল মারার ঘটনা এখন সরকারও অস্বীকার করছেনা৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন নির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপি হয়ে থাকলে তা তদন্ত করা হবে৷
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ এবং সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একটি স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ কমিশন করে এবারের নির্বাচনের সব অনিয়ম তদন্ত করা উচিত৷ তদন্ত শেষে দায়ীদের চিহ্নিত এবং ভবিষ্যতে যাতে এরকম ঘটনা না ঘটে তার ব্যবস্থা নিতে হবে৷ তা না হলে বাংলাদেশে নির্বাচন আর ভোট ব্যবস্থা বলে কিছু থাকবে না৷''
তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে থেকেই শাসক দল নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে সত্য, তবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচন শুরুর তিন ঘণ্টার মধ্যেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বিএনপি ঠিক করেনি৷ তাদের এই সিদ্ধান্ত হঠকারীমূলক৷''
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘‘২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন ছিল একতরফা৷ বিএনপি নির্বাচনেই যায়নি৷ কিন্তু এবার সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়ায় সকাল থেকেই ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গেছেন৷ ভোটের লড়াই তাই হতে পারত, যদি বিএনপি মাঠ না ছাড়ত৷''
তিনি বলেন, ‘‘যদি বিএনপি ভোটের মাঠে থাকত তাহলে চিত্রটা কেমন হত তা এখন বলা না গেলেও এটা বলা যায় যে শাসক দলের লোকজন এত সহজে ভোটকেন্দ্র দখল এবং জালভোট দিতে পারত না৷''
সুজন সম্পাদক মনে করেন, ‘‘শাসক দল আওয়ামী লীগের আগ্রাসী মনোভাব, বিএনপির পৃষ্ঠ প্রদর্শন এবং নির্বাচন কমিশনের নিষ্ক্রিয়তা এবারের সিটি নির্বাচনকে হাস্যকর করে ফেলেছে৷''
‘সবার ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়েছে'
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ, জানিপপ এর প্রধান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এবারের নির্বাচনে সবার ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়েছে৷ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, নির্বাচন কমিশন ও সরকার সবাই মিলে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়াকে পন্ড করেছে৷ আর এতে নাগরিকরা যে উৎসাহ নিয়ে সকালে ভোট দিতে গিয়েছেন৷ কয়েক ঘণ্টা পরেই সেই উৎসাহে ভাটা পড়েছে৷''
ড. কলিমুল্লাহ বলেন, ‘‘এই ঘটনায় নির্বাচন ব্যবস্থা আবারো কলুষিত হলো৷ আর এতে সবার আগে ক্ষতিগ্রস্ত হলো সাধারণ মানুষ, সাধারণ ভোটার৷ সব পক্ষই নির্বাচন নিয়ে খেলেছে৷ যার যার সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করেছে৷ কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে কারুরই আগ্রহ ছিল না৷''
তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন ব্যবস্থাটা ফিরিয়ে আনা জরুরি৷ এজেন্ট নির্ভর যে নির্বাচন ব্যবস্থা সেখানে পেশিশক্তির প্রভাব থাকবেই৷ বিএনপি এজেন্ট দিতে পারেনি৷ যেখানে দিতে পেরেছে সেখানে শাসক দলের সমর্থক এজেন্টদের সামনে টিকতে পরেনি৷ তাই নির্বাচন ব্যবস্থার মধ্যেই পেশিশক্তির সুযোগ রয়ে গেছে৷ এটার বিকল্প কিছু ভাবা উচিত৷''
ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ উভয়ই মনে করেন বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় আর কোনো আলো দেখা যাচ্ছেনা৷ তাই সবার স্বার্থেই পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে হবে৷ নয়তো দেশ অগণতান্ত্রিক শক্তির দখলে চলে যাবে, নৈরাজ্য ঠেকানো যাবেনা৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিবৃতি
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশে তিন সিটি নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি ও সহিংসতার বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্ট পেয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে৷
ইইউ বলছে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ভোটারদের পছন্দমতো ভোটদানের সুযোগ দেয়া হয়নি৷ যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল৷
সিটি নির্বাচনের সকল অনিয়ম ও সহিংসতার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তেরও দাবি জানিয়েছে ইইউ৷ বিবৃতিতে তারা আশা প্রকাশ করে রাজনৈতিক দলগুলো সকল প্রকার সহিংসতা, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা পরিহার করে একটি শক্তিশালী গণতন্ত্রের জন্য গঠনমূলক রাজনৈতিক আচরণ করবে৷