নির্বাচন, না করোনা ছড়ানোর উদ্যোগ?
২০ মার্চ ২০২০ডয়চে ভেলেকে ঠিক এ কথাই বলেছেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম৷ তিনি আরো বলেন, ‘‘নির্বাচন না হলে বরং উল্টো আতঙ্ক ছড়াবে। বিশ্বে খারাপ মেসেজ যাবে। আমাদের এখানে এখনো তেমন কিছু হয়নি। নির্বাচন করাই ভালো।''
কিন্তু আইইডিসিআর বলেছে এই নির্বাচনের কারণে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে।
শনিবার বাগেরহাট-৪ও এবং গাইবন্ধা-৩ আসনে উপ-নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশনের যুক্তি, প্রচার-প্রচারণার ওপর আগেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আর উপ নির্বাচনে ভোটারও কম যায়। যারা ভোট দিতে আসবেন, তাদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ সব স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এর আগে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. আলমগীর বলেন, ‘‘ভোটাররা হাত ধুয়ে ভোট দেবেন। ভোট দিয়ে আবার হাত ধোবেন।''
এদিকে বাংলাদেশে আরো তিনজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এখন করোনা রেগীর সংখ্যা ২০। একজন মারা গেছেন। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে আছেন ৭৭ জন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৯৩ জন। আর সারাদেশে হোম কোয়রান্টিনে আছেন ১০ হাজার। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৩৫ জন।
মাদারীপুরের শিবচর লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। আরো কিছু এলাকা লকডাউন হতে পারে।
প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরকারের আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত,। কারণ তারা নির্বাচনের নামে করোনা ছাড়ানোর ব্যবস্থা করছে। বাংলাদেশ করোনা তৃতীয় সপ্তাহে প্রবেশ করছে। এই সময়টি খুবই জটিল। এখন অতি প্রয়োজন না হলে সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। দেশের মানুষ আতঙ্কের মধ্যে আছে। এই সময়ে নির্বাচন করা নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় নির্বুদ্ধিতা। এটা ক্ষতিকর নির্বুদ্ধিতা বলেই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছি।''
এদিকে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর নিয়মিত ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘‘নির্বাচনের কারণে লোক সমাগম হলে সংক্রমণের আশঙ্কা আছে। কিন্তু নির্বাচন বন্ধ করাতো আমাদের হাতে নেই। এটা তো উপরের বিষয়।''
আইইডিসিআর-এর এই আশঙ্কার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘চিকিৎসকরা একেকজন একেক রকম কথা বলেন। কোনটা বিশ্বাস করবেন? বাস কি বন্ধ হয়েছে? দেশ কি শেষ হয়ে যাচ্ছে? অফিস আদালত বন্ধ হয়েছে? মসজিদ কি বন্ধ করতে পেরেছেন? তাহলে নির্বাচন বন্ধ করতে চান কেন? কাল ভোট। সবকিছু রেডি৷ এখন কিভাবে নির্বাচন বন্ধ হবে? আমরাও তো সেখানে থাকবো। তাহলে ভোটারদের ভয়ের কী আছে?'' তবে তিনি স্বীকার করেন, নির্বাচন বন্ধ বা স্থগিত করায় কোনো সাংবিধানিক বাধা ছিল না।
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘‘ইভিএমে ভোট হবে৷ সেখানে যারা ভোট দেবেন, তাদের সবাইকে একই মেশিনে থাম্ব প্রেস করতে হবে। আবার নির্বাচনি কর্মকর্তারা থাকবেন। আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে লোকজন থাকবে। তাই করোনা ছড়ানোর ব্যাপক আশঙ্কা আছে। এটা আমার মতে ভোট নয়, করোনা ছড়ানোর উদ্যোগ।''
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেককে মোবাইল ফোনে বারবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই পরিস্থিতিতে তারা অনেকেই ভোট দিতে যাবেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নির্বাচনি কর্মকর্তাও ভোটের দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করেছেন৷ তবে তারা জানান, চাকরি করেন বলে দায়িত্ব পালন করতেই হবে৷
এদিকে আগামী ২৯ মার্চঅনুষ্ঠেয় চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের ব্যাপারেও এখনো অনড় রয়েছে নির্বাচন কমিশন।