নাইন ইলেভেনের দশ বছর পর পাকিস্তানই সবচেয়ে বিপজ্জনক ফ্রন্ট
২৩ আগস্ট ২০১১সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এলড়াই-এর শরিক পাকিস্তানও৷ ইতোমধ্যে পাকিস্তান হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসের সবচেয়ে বিপজ্জনক ফ্রন্ট৷ বেড়েছে তালেবানি হামলা৷ আর তার মাঝে পড়ে মারা যাচ্ছে নিরপরাধ মানুষ৷
কুলসুম বিবির চার সন্তান৷ সবচেয়ে বড় ছেলেটি একটি বোমা হামলায় দুটি পা হারিয়েছে৷ বাকি তিন সন্তান ছোট৷ কোন অবস্থাতেই একা সংসার চালাতে পারছেন না কুলসুম বিবি৷ যে বোমা হামলায় তার ছেলে দুটি পা হারিয়েছে সেই একই বোমা হামলায় কুলসুম বিবি তার স্বামীকে হারিয়েছেন৷
স্বামী মারা যাওয়ার পর কুলসুম বিবি এখন বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করেন, মাঝে মাঝে সেলাইয়ের কাজ করেন৷ কিন্তু তা যথেষ্ট নয়৷ গত মার্চ মাসে তালেবান জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছে ফয়সলাবাদে৷ তখন থেকেই শুরু হয়েছে কুলসুম বিবির বেঁচে থাকার সংগ্রাম৷
কুলসুম বিবি জানান,‘‘আমার স্বামী ছিলেন মিস্ত্রি৷ তিনি যা উপার্জন করতেন তা দিয়ে কোনভাবে আমাদের দিন চলতো৷ আমি কখনো কাজ করিনি, আমার কোন কাজের অভিজ্ঞতা নেই৷ আমি যা উপার্জন করি তা যথেষ্ট নয়৷''
৩৫ বছর বয়স্কা কুলসুম বিবি কাঁদতে কাঁদতে বললেন,‘‘আমরা একদিন খেলে পরের দিন না খেয়ে থাকি৷ আমি এখন কি করবো? শরীর বেচে খাবো? চাইলে আমি তা করতে পারি কিন্তু মনুষ্যত্ববোধ থাকার কারণে সে পথে যেতে পারছি না৷ ''
কুলসুম বিবির একটিই প্রশ্ন - কেন তার পরিবারকে সন্ত্রাসী হামলার মূল্য দিতে হচ্ছে? তার পরিবারের কেউই তালেবানের সদস্য না৷ তিনি শুধু আক্ষেপ করেন, যে বোমা তার স্বামীর জীবন কেড়ে নিয়েছে সেই বোমায় কেন পরিবারের সবার মৃত্যু হল না৷
শুধু কুলসুম বিবি নয়, পাকিস্তানের হাজার হাজার পরিবার এ ধরণের ঘটনার শিকার হয়েছে৷ পাকিস্তানের ইন্সটিটিউট ফর পিস স্টাডিজ জানিয়েছে, বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলায় ২০০৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজারেরও বেশি পাকিস্তানি মারা গেছে৷ আহত হয়েছে ২৩ হাজারেরও বেশি৷
লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রসুল বক্স রাইস জানান, ‘‘গত দশ বছরে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে পাকিস্তানের ভীষণ ক্ষতি হয়েছে৷ মানুষ মারা গেছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়েছে, সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে এবং দেশে তালেবানসহ অন্যান্য সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড বেড়েছে৷''
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: অব্দুল্লাহ আল-ফারূক