অ্যাবোটাবাদে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টার, নতুন বিতর্কে পাকিস্তান
২০ আগস্ট ২০১১গত মে মাসে পাকিস্তান সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশে বসবাসরত আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে মার্কিন বিশেষ অভিযানে হত্যার পর থেকেই মূলত পাক-মার্কিন সম্পর্কে বেশ ফাটল ধরতে শুরু করে৷ উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে বেশ কিছু কূটনৈতিক বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে৷ তবে শুধু অভিযোগ তোলা নয়, গ্রহণ করে পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ৷
ওসামাকে হত্যার পরই পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের কর্মদক্ষতা এবং তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে৷ ওয়াশিংটনের অভিযোগ, সামরিক অ্যাকাডেমির কাছে দীর্ঘ সময় ধরে বসবাসকারী ওসামা বিন লাদেনের খবর নিশ্চয়ই পাকিস্তান সরকার জানতো৷ অন্যথা পাক গোয়েন্দাদের কর্মদক্ষতায় রয়েছে ব্যাপক ঘাটতি৷ অন্যদিকে, পাক সরকারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে অ্যাবোটাবাদে ঢুকে অভিযান চালিয়েছে মার্কিন বিশেষ বাহিনী নেভি সিলস৷ এছাড়া পূর্ব অনুমতি ছাড়াই পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর রাডারকে ফাঁকি দিয়ে বিশেষ হেলিকপ্টার নিয়ে অ্যাবোটাবাদে প্রবেশ করে তারা৷ অবশ্য তাদের একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার ওসামা বিন লাদেনের বাড়ির দেওয়ালে বিধ্বস্ত হয়৷
এই প্রেক্ষিতে পাকিস্তানে মার্কিন সামরিক প্রশিক্ষকদের সংখ্যা কমিয়ে ফেলে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ৷ একইসাথে পাকিস্তানে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা - সিআইএ'র কর্মকাণ্ডের উপর কড়া সীমাবদ্ধতা টেনে দেয় ইসলামাবাদ৷ বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয় পাকিস্তানে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের জন্য ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রেও৷ ফলে পাকিস্তানে তালেবান বিরোধী তৎপরতায় ঢিলেমির জন্য আগে থেকেই অসন্তুষ্ট মার্কিন কর্তৃপক্ষ আরো কড়া অবস্থানে চলে যায়৷ আর পাকিস্তানের জন্য প্রতিশ্রুত ২.৭ বিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তার প্রায় এক তৃতীয়াংশ হ্রাস করার সিদ্ধান্ত নেয় ওয়াশিংটন৷
তবে কূটনৈতিক এমন টানাপোড়েন দূর করতে উভয় পক্ষই সচেষ্ট৷ তারই অংশ হিসেবে সম্প্রতি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমাদ সুজা পাশা অ্যামেরিকা সফর করেন৷ আর ওসামা বিন লাদেনকে হত্যায় বিশেষ অভিযানের পর ইসলামাবাদ সফর করেন মার্কিন সিনেটর জন কেরি৷ সেই সফরে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়, পাকিস্তান যেন চীন বা অন্য কোন দেশের কাছে অ্যাবোটাবাদে বিধ্বস্ত হেলকপ্টারের কোনো তথ্য, ছবি কিংবা অংশবিশেষ হস্তান্তর না করে৷ একইসাথে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ যুক্তরাষ্ট্রকে ফেরত দেওয়ার জন্যও চাপ দেওয়া হয়৷ সে অনুসারে মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে ইতিমধ্যে ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ ফেরত দিয়েছে ইসলামাবাদ৷
কিন্তু এবার, ‘দ্য ফাইনান্সিয়াল টাইমস' এবং ‘নিউইয়র্ক টাইমস' প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন অভিযোগ৷ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার বেনামি সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকা দু'টি বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন তথ্য রয়েছে যে, পাকিস্তান এবং বিশেষ করে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই চীনকে ঐ বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ছবি তোলার সুযোগ দিয়েছে৷ এছাড়া ধ্বংসাবশেষের কিছু বিশেষ অংশ চীনকে নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে৷
তবে পাকিস্তান এবং চীন উভয় দেশই ওয়াশিংটনের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷ চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘এই প্রতিবেদনগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং অদ্ভুত৷'' এছাড়া পাকিস্তানের চিফ অফ আর্মি স্টাফ জেনারেল আশফাক কায়ানিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বলে পত্রিকাগুলো উল্লেখ করেছে৷ তবে এই অভিযোগ নিশ্চিত হলে ইতিমধ্যে টানাপোড়েনে থাকা পাক-মার্কিন সম্পর্ক আরো এক ধাপ ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ