স্কুলছাত্রী উদ্ধার এবং কিছু প্রশ্ন
২০ মে ২০১৬নাইজেরিয়া, তথা সারা বিশ্বের মানুষ দু'বছরেরও বেশি সময় ধরে যে দিনটির অপেক্ষায় ছিল অবশেষে সেই দিনটি এলো৷ অবশেষে ২০১৪ সালের এপ্রিলে অপহৃত হওয়া স্কুলছাত্রীদের দু'জন ফিরে এসেছে৷ মেয়ে দু'টির পরিবারের জন্য এটি খুবই আনন্দের, কেননা, এর মাধ্যমে তাঁদের এতদিনের অপেক্ষা এবং প্রার্থনা সার্থক হয়েছে৷
অপহৃত মেয়দের পরিবারকে যাঁরা এতদিন সমর্থন জুগিয়ে এসেছেন, বিশেষ করে ‘ব্রিং ব্যাক আওয়ার গার্লস' গ্রুপও মেয়ে দু'টি ফিরে আসায় খুশি হতে পারে, কারণ, এতগুলো দিন ধরে কেউ যাতে অপহৃত মেয়েদের ভুলে না যায়, সেই লক্ষ্যে অবিরাম কাজ করেছে৷ প্রথম মেয়েটির ফিরে আসার ছবি বড় একটা আশাও জাগিয়েছে, কারণ,সে জানিয়েছে, তার অন্য জিম্মি সঙ্গীদের অধিকাংশই এখনো জীবিত৷
কিন্তু উত্তর নাইজেরিয়ার পরিস্থিতি গত দু'বছর ধরে যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছিল সেটাকে সমর্থনই করছে৷ জঙ্গল থেকে মেয়েটি বেরিয়ে এসেছে কোলে একটি শিশু নিয়ে৷ একটি পুরুষ মানুষও এসেছে, যাকে আবার মেয়েটি নিজের স্বামী হিসেবেই পরিচয় করিয়েছে৷ সেনাবাহিনীর সন্দেহ, লোকটি বোকো হারাম জঙ্গি৷
অপহরণ কাণ্ডের পর থেকেই বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করে আসছেন, মেয়েগুলোকে সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যরা হয় জোর করে বিয়ে করবে, নয়ত নাইজেরিয়ার ভেতরেই কোথাও বিক্রি করে দেবে৷ তথাকথিত জঙ্গি সংগঠনটির নেতা আবু বকর শেকাউকেও এক ভিডিও বার্তায় এমন কথা বলতে শোনা গেছে, পালিয়ে আসা মেয়েরাও আগে একই কথা বলেছে৷
তাই আশা আর আনন্দ জাগানো এই সময়েও বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে আসছে৷ স্থানীয় তদারকি সংস্থা এবং সেনাবাহিনী তো মেয়ে দু'টিকে উদ্ধারের ঘটনাকে নিজেদের বড় সাফল্য হিসেবে দেখছে৷ সাম্বিসা বনের কাছে একজন পুরুষ, একজন নারী এবং এক শিশুকে উদ্ধারের কৃতিত্বও দাবি করছে তারা৷
সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, লোকটি ওই মেয়ে আর শিশুটিকে নিয়ে বোকো হারামের আস্তানা থেকে না খেয়ে মরার হাত থেকে বাঁচতে বেরিয়ে এসেছে৷ তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, বোকো হারামের কাছে এখনো দু'শরও বেশি স্কুলছাত্রী এখনো জিম্মি আছে৷
তবে প্রশ্ন হলো, বোকো হারাম যেখানেএতজন অপহৃতকে আটকে রাখতে পারছে, সেখানে এতদিন পর হঠাৎ একজন কেমন করে বেরিয়ে এলো? কয়েকজন বিশ্লেষক এবং সেনাবাহিনী মনে করে, মেয়েরা কোনোভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল আর সে কারণে তাঁদের খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যায়৷ আমরা কি এই ব্যখ্যাকেই ঠিক ধরে নেবো?
তথাকথিত জঙ্গি সংগঠনটির কাছে কি চিবকের মেয়েগুলো সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেনদরবারের শেষ টোপ? কারণ তারা তো জানে, মেয়েগুলোও মারা যেতে পারে এই আশঙ্কা মেনে নিয়ে সেনাবাহিনী কখনো আক্রমণ করবে না৷ মেয়েগুলোকে মুক্ত করতে সরকার বোকো হারামের সঙ্গে আলোচনা করছে – এমন একটি কথা তো প্রায়ই শোনা যাচ্ছে৷ সাম্প্রতিক সময়ে জিম্মি মেয়েদের নিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশিত হওয়া হয়ত তারই আলামত৷ অনেকেই বলছেন, মেয়েরা যে জীবিত আছে এটা জানানোর জন্য সরকার পক্ষের মধ্যস্থতাকারীদের কাছে ভিডিওটি পাঠানো হয়৷
সেনাবাহিনী এবং রাজনীতিবিদরা যেভাবে মেয়ে দু'টির ফিরে আসাকে নিজেদের জয় হিসেবে উদযাপন করছে এ নিয়েও প্রশ্ন তোলা উচিত৷ সরকারের দেয়া তথ্যেও তো এটা পরিষ্কার যে, এটা যতটা না সামরিক বা রাজনৈতিক সাফল্য, তার চেয়ে অনেক বেশি সৌভাগ্যপ্রসূত৷ সুতরাং বাকি ২১৭ জন চিবক কন্যা এবং আরো শহস্র অজ্ঞাতনামা নারীর অজানা নিয়তির কথা মনে রেখে আনন্দ উদযাপন একটু সংযতভাবেই করা উচিত৷ মনে রাখতে হবে, বোকো হারাম হয়ত কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে, তবে এখনো কিন্তু প্রতিদনই তারা মানুষ হত্যা করছে৷
ভুলে গেলে চলবে না যে, বোকো হারামের কবল থেকে মুক্ত করে আনা অনেক নারী, পুরুষ, শিশু এখন সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে দিন কাটাচ্ছে৷ গত সপ্তাহেই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টির একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে৷ সেখানে বলা হয়েছে, মাইদুগুরির কাছের একটি ডিটেনশন সেন্টারেই আটক রয়েছে ১,২০০ জন৷ তাদের মধ্যে অনেকে মারাও যাচ্ছে৷ শুধু এ বছরেই মারা গেছে ১২০ জন৷ চিবকের মেয়েদের প্রত্যাবর্তনের আনন্দ যেন ভুলিয়ে না দেয় যে, বোকো হারাম অধ্যায় শেষ হওয়ার আগে নাইজেরিয়ার সরকার এবং সেনাবাহিনীকে অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে৷