1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে আবারো যৌন নিগ্রহ

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি৩০ মে ২০১৪

ধর্ষণ বা যৌন নিগ্রহের তালিকায় ভারত উঠে এসেছে বিশ্বের তৃতীয় স্থানে৷ কার্যত প্রতি ২২ মিনিটে ভারতের কোথাও না কোথাও একজন সাবালিকা বা নাবালিকাকে যৌন নিগ্রহের শিকার হতে হচ্ছে৷ বলা বাহুল্য, এর দায় দেশের পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থার৷

https://p.dw.com/p/1C9Qz
Protest nach Gruppenvergewaltigung und Ermordung zweier Mädchen in Indien 30.05.2014
ছবি: picture-alliance/AP

২০১২ সালে দিল্লির একটি বাসে বিবেক মথিত করা গণধর্ষণকাণ্ডে মেডিক্যাল ছাত্রীর মৃত্যুর ক্ষত শুকায়নি৷ অথচ একই রকমভাবে নিত্যদিন ঘটে চলেছে সাবালিকা বা নাবালিকার ওপর ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা, বরংবার৷ বলতে গেলে প্রতি ২২ মিনিটে ভারতে যৌন নিগ্রহের ঘটনা ঘটছে আর রাজধানী দিল্লিতে ধর্ষণের হার গড়ে দৈনিক চার থেকে পাঁচটি করে৷

অধিকাংশ ঘটনা রক্তহীম করা৷ কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে পশ্চিমবঙ্গের কামদুনিতে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনা, মধ্যমগ্রামে এক কিশোরীকে দফায় দফায় ধর্ষণ করার ঘটনার পর গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করে মেয়েটি৷ হালে দমদমের এক তরুণী গণধর্ষণের শিকার হয়ে সামাজিক লজ্জা আর ঘেন্নায় ট্রেনে গলা দিয়ে জ্বালা জুড়াতে চেয়েছিল৷ ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে চার বছরের এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা যায়৷ ঐ বছরেরই জুলাই মাসে ১৭ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণ করার পর, তাঁর জিভ কেটে দেয় ঐ ধর্ষক যাতে সে আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দিতে না পারে৷ সেই একই মাসে দু'বছরের এক শিশুর ওপর যৌন অত্যাচার করায় শেষ অবধি শিশুটি মারা যায়৷ পুলিশের কাছে শিশুর মা-বাবা অভিযোগ জানাতে গেলে বলা হয় যে, রাস্তার কুকুর কামড়ানোতে নাকি সে মারা গেছে৷ পাঞ্জাবের ১৮ বছরের এক তরুণী তাঁর ধর্ষককে গ্রেপ্তার করার দাবি জানালে পুলিশ তা করতে অস্বীকার করে৷ আর তরুণীটি বেছে নেয় আত্মহননের পথ৷ হালে উত্তর প্রদেশে এক দলিত পরিবারের দুই বোনকে গণধর্ষণ করে গলায় ফাঁস দিয়ে গাছের ডালে ঝুলিয়ে পালিয়ে যায় নরপশুরা৷ তাঁদের অপরাধ, অজগ্রামে বাড়িতে টয়লেট না থাকায় তাঁরা দুই বোন গিয়েছিল কাছের জঙ্গলে৷

Gruppenvergewaltigung Proteste Urteil gegen Teenager in Neu Delhi Indien
২০১২ সালে দিল্লিতে এক তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে ফেটে পড়ে সারা ভারতছবি: Reuters

এ সবের জন্য কাকে দায়ী করা উচিত? পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিকৃত মানসিকতা নাকি পুলিশ প্রশাসনের উদাসীনতা নাকি দেশের বিচার ব্যবস্থার ত্রুটি? ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের ঘটনার অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ প্রথমে চেষ্টা করে অভিযোগ না নিয়ে লোকলজ্জার ভয় দেখিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে টাকা-পয়সা দিয়ে ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলতে৷ উত্তর প্রদেশের ঐ দুই কিশোরীর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে পুলিশ থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ তা নিতে টালবাহানা করে৷ পরে জনরোষ ছড়িয়ে পড়লে তদন্ত শুরু করে পুলিশ৷ আরো আছে, দিল্লির এক মহিলাকে যে ব্যক্তি ধর্ষণ করেছিল তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করার কয়েকদিন পর ঐ মহিলা দেখেন যে ঐ ধর্ষক দিব্যি পুলিশ অফিসারের সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মেতে রয়েছে খোশগল্পে৷ অনেক সময় পুলিশের চাপে ধর্ষককেই বিয়ে করতে বাধ্য হয় ধর্ষিতা৷

Indien Vergewaltigung Uttar Pradesh Proteste
ছবি: picture-alliance/dpa

দিল্লির মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার মনে করেন, অনেকক্ষেত্রে রক্ষকই হয়ে ওঠে ভক্ষক৷ সাধারণভাবে বলতে গেলে মেয়েদের ভোগ্যপণ্য হিসেবে দেখার ‘ভাইরাস' আছে পুরুষ শাসিত সমাজের অস্থিমজ্জায়৷ ২০১১ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলা ঝুলে আছে দেশের বিভিন্ন আদালতে৷ তার মধ্যে মাত্র ২৬ শতাংশ দোষী সাব্যস্ত হয়েছে৷ এই দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার দরুণ মহিলাদের বারংবার আদালতে হাজিরা দিয়ে ধর্ষণের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিররণ দিতে হয় আসামি পক্ষের কৌশুলির জেরায়৷ তখন অনেক নারী ব্যথা, বেদনা আর হতাশায় আত্মহননকেই মনে করেন শ্রেয়৷

১৬ই ডিসেম্বর দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডের পর বিচারপতি ভার্মা কমিটি আইন সংশোধন করে ফাস্ট-ট্র্যাক কোর্টের সুপারিশ করেন৷ তাতে দিল্লি গণধর্ষণ মামলার চারজন আসামির ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়৷ কিন্তু আইনি জটিলতায় এখনো তা কার্যকর হয়নি৷ হবে কিনা তাও অনিশ্চিত৷ পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ধর্ষণের ঘটনায় প্রথমেই লোকেরা আঙুল তোলে ধর্ষিতা নারীর দিকে৷ কেন তিনি রাতে বাইরে গিয়েছিলেন? তাঁরা ভুলে যান আজ শিক্ষিত মহিলাদের বাইরে বের হতে হয় নানা কাজকর্মে৷ তার জন্য তাঁকে যৌন নিগ্রহের শিকার হতে হবে? সমাজটা কি একটা জঙ্গল নাকি?''

সমাজবিজ্ঞানী দেবদাস ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আইন কঠোর করাটাই যথেষ্ট নয়, দেখতে হবে দ্রুত বিচারে তাঁরা দোষী সাব্যস্ত হচ্ছে কিনা৷ দোষী সাব্যস্ত না হলে আইন কঠোর করে লাভ কী?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য