ধর্ষণ বন্ধে সমাজ
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৩ভারতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের মামলায় যখন অভিযুক্তদের রায় দেয়া হচ্ছে, তার ঠিক একদিন আগে মঙ্গলবার ধর্ষণ নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করল জাতিসংঘ৷ বাংলাদেশ, চীন, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং পাপুয়া নিউগিনির পুরুষদের সাক্ষাৎকার নিয়ে তৈরি করা হয়েছে প্রতিবেদনটি৷
এসব দেশের অন্তত ১০ হাজার পুরুষের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে, যাদের বয়স ১৮ থেকে ৪৯ বছর৷ বিশ্বে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এই গবেষণাটি করেছে জাতিসংঘ৷
জাতিসংঘ নারী বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক রবার্টা ক্লার্ক মঙ্গলবার ব্যাংককে এই রিপোর্টটি প্রকাশ করে বলেন, নারী সহিংসতার বিষয়টি একটি কঠিন বাস্তব, যা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই৷ পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষরা যাতে শক্তি প্রয়োগ করে নারীর ক্ষমতায়নে বাধা দিতে না পারে সেজন্য সাংস্কৃতিক পরিবর্তন দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
গবেষণা চলাকালে বেশিরভাগ ব্যক্তিই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল, তাই তাদের ঘুরিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে৷ যেমন – এমন কোন নারীকে তুমি সহবাসে বাধ্য করেছ, যিনি তোমার স্ত্রী বা সঙ্গী নন? অথবা, এমন কোন নারীর সাথে তুমি সহবাস করেছ, যিনি মাদকাসক্ত ছিলেন এবং তার চাওয়া না চাওয়ার বিষয়টি জানানোর ক্ষমতা ছিল না? এমনকি তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কেন তারা সেটা করেছে৷
এক তৃতীয়াংশ পুরুষ বলেছে, যৌন চাহিদার কারণে বাধ্য হয়েছে৷ ৫৯ ভাগ বলেছে, আনন্দ পাওয়ার জন্য আর ৩৮ ভাগ পুরুষ বলেছে, কোন নারীকে শাস্তি দেয়ার জন্য তাকে ধর্ষণ করেছে তারা৷
গবেষণায় দেখা গেছে, ১১ ভাগ পুরুষ এমন নারীদের ধর্ষণ করে, যারা তাদের সঙ্গী নয়৷ আর ২৪ ভাগ পুরুষ তার সঙ্গীদের ধর্ষণ করে৷ একাধিক নারীদের ধর্ষণ করার সংখ্যাটা রীতিমত চমকে দেয়ার মত, ৪৫ ভাগ৷
যেসব নারী এসব পুরুষদের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তারা বেশিরভাগই কিশোরী এবং তাদের বয়স ১৫ বছরের নীচে৷ আর এসব ঘটনার জন্য বেশিরভাগ পুরুষকেই কোন আইনি ঝামেলা পোহাতে হয়নি৷
সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে পাপুয়া নিউগিনির বোগেনভিল এলাকায়, যেখানে প্রায় এক দশক ধরে যুদ্ধ চলছে৷ সেখানে বেশিরভাগ আইনি প্রক্রিয়া হয় স্থানীয় সালিশীর মাধ্যমে৷ আর তাই ৬২ ভাগ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে সেখানে৷
তবে, স্থানভেদে ধর্ষণের ঘটনা যে ভিন্ন তার প্রমাণ হল, পাপুয়া নিউগিনিতে গ্রামাঞ্চলে যেখানে ২৭ ভাগ নারী ধর্ষণের শিকার হয়, সেখানে বাংলাদেশে ৩ ভাগ ধারী ধর্ষণের শিকার হয়৷ আর জাকার্তায় এর হার ২৬ ভাগ৷
গবেষক এমা ফুলু বললেন, যদিও এই ঘটনাটা ব্যাপক, কিন্তু এর প্রতিরোধের উপায় আছে৷ কেননা বেশিরভাগ ঘটনা ঘটেছে এমন এলাকায়, যেখানে শিশুদের হয়রানি বেশি হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিম্নমানের অথবা সামাজিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে৷ তাই এই ফ্যাক্টরগুলোর দিকে খেয়াল রেখে সমাজ পরিবর্তন করলে ধর্ষণের হার কমানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি৷
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, বেশিরভাগ পুরুষ কিশোর বয়সে প্রথম কোন নারীকে ধর্ষণ করেছে৷ এমনকি যেসব পুরুষ তার ছেলেবেলায় যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে, তাদের মধ্যে ধর্ষণের প্রবণতাটা অনেক বেশি৷
এপিবি/এসবি (এএফপি)