ধর্ষণ প্রতিরোধক ব্রা
২৪ জুলাই ২০১৪এক মেডিকেল শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণ এবং হত্যার খবর গোটা ভারতবাসীকে নাড়িয়ে দিয়েছিল৷ ২০১২ সালের ডিসেম্বরের সেই ঘটনার পর ধর্ষণ বিষয়ক আইনেও পরিবর্তন আনতে বাধ্য হন ভারতের আইনপ্রণেতারা৷ ধর্ষণের সেই ঘটনা মনীষা মোহনকেও নাড়িয়ে দিয়েছিল৷ তিনি তখন অপ্রচলিত এক ধর্ষক প্রতিরোধক পদ্ধতি তৈরির কথা চিন্তা করেন৷ এ জন্য বেছে নেন ব্রা বা বক্ষবন্ধনীকে৷
২২ বছর বয়সি এই শিক্ষার্থী আরো দুই সহপাঠীকে সঙ্গে নিয়ে একাধিক সমীক্ষা পরিচালনা করেন৷ এরপর তাঁরা ইলেকট্রিক ব্রা তৈরি করেন যা ধর্ষককে আঘাতে সক্ষম৷ মূল ধারণাটা হচ্ছে, মেয়েদের স্তনের উপর একটি নির্দিষ্ট মাত্রার চাপ তৈরি হলে ৩,৮০০ কিলো-ভোল্ট সমপরিমাণ বৈদ্যুতিক শক সৃষ্টি হবে৷ এতে আক্রমণকারী মারাত্মকভাবে আহত হবে৷ একইসঙ্গে একটি জিপিএস সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই ঘটনা পুলিশকে জানিয়ে দেবে৷
ইলেকট্রিক ব্রা-য় ব্যবহৃত এই প্রযুক্তি কঠিন কিছু নয়৷ আর কাউকে সাধারণভাবে জড়িয়ে ধরলে যে চাপ সৃষ্টি হয়, তাতে পদ্ধতিটি সক্রিয় হবে না৷ বরং স্তনে শক্তভাবে চাপ দিলে কিংবা চিমটি কাটলে সেটি সক্রিয় হবে৷ আর এই পদ্ধতি সক্রিয় করার একটি বোতাম রয়েছে৷ ফলে পরিধানকারী নারী নিজের প্রয়োজনমতো সেটি চালু বা বন্ধ করতে পারবেন৷
নিরাপদ এবং আরামদায়ক
পরীক্ষামূলকভাবে যারা এই ব্রা পরেছেন, তারা মনে করছেন এটি নিরাপদ এবং আরামদায়ক৷ নতুন দিল্লীর কলেজ শিক্ষার্থী রেবতী এই বিষয়ে বলেন, ‘‘ আমি মনে করি মেয়েরা কিংবা নারীদের জন্য এই ব্রা অত্যন্ত সহায়ক হবে৷ কেননা এটি পরে তারা রাতের বেলায়ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে রাস্তায় বের হতে পারবে৷''
মনীষাও মনে করেন, এই ব্রা আরামদায়ক হবে৷ আর মেয়েদের এ ক্ষেত্রে কোন ক্ষতি হবার আশঙ্কা নেই বলেই দাবি করেন তিনি৷ কেননা বক্ষবন্ধনীতে এমনভাবে ইলেকট্রনিক উপকরণ রাখা আছে যাতে সেটি পরিধানকারীর দেহে কোনোভাবে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে না পারে৷ এজন্য পানি রোধক একটি লেয়ার বা স্তরও ব্যবহার করা হয়েছে৷
মনীষার এই উদ্ভাবনের স্বীকৃতিও মিলেছে৷ ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখোপাধ্যায় আয়োজিত ‘ইনোভেশন স্কলারদের' নিয়ে ২০ দিনব্যাপী প্রোগ্রামে অংশ নেয়ার সুযোগ পান তিনি৷ এই প্রোগ্রামে উদ্ভোবকরা তাদের নিত্য নতুন বিভিন্ন আবিষ্কার প্রদর্শনের সুযোগ পান৷
প্রসঙ্গত, ভারতে নারী নির্যাতনের হার ক্রমশ বাড়ছে৷ জাতীয় অপরাধ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০১৩ সালে ভারতে নারীর বিরুদ্ধে অপরাধের ৩০৯,৫৪৬টি ঘটনা পুলিশ নথিভুক্ত করেছে৷ ২০১২ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৪৪,২৭০টি৷
ইলেকট্রিক ব্রা হয়ত সামগ্রিকভাবে ভারতীয় নারীকে নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হবে না৷ বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরা সহসাই এটির সুবিধা পাবেন না৷ তবে নতুন এই উদ্ভাবন ভারতীয় নারীকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস এনে দেবে বলেই মনে করছেন উদ্ভাবকরা৷ ইলেকট্রিক ব্রা বাণিজ্যিকভাবে কবে নাগাদ বাজারে পাওয়া যাবে সে ব্যাপারে অবশ্য নিশ্চিতভাবে কিছু জানাতে পারেননি মনীষা৷ তিনি আশা করছেন, শীঘ্রই এটি মানুষের কাছে পৌঁছানো যাবে৷