দেশে শিশু পর্নোগ্রাফির থাবা!
২০ অক্টোবর ২০২০সর্বশেষ ঢাকায় এই চক্রের আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, বোরহান উদ্দিন এবং অভি হোসেন তিনজনই বেসরকারি বিশ্বিবিদ্যালয়ের ছাত্র৷ প্রায় আট মাস অনুসন্ধান চালিয়ে ১৫ অক্টোবর তাদের আটক করে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)৷ তিনজনই এরই মধ্যে আদালতে তাদের অপরাধের ব্যাপারে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন৷ সিটিটিসি জানিয়েছে, আটকদের মধ্যে বোরহানের কম্পিউটার থেকে এ সংক্রান্ত ফাইল ও ছবি পেয়েছেন তারা৷ চক্রটি যে কৌশলে শিশুদের অনলাইনে পর্নোগ্রাফির ফাঁদে ফেলে তার টিউটোরিয়ালও পাওয়া গেছে তাদের কম্পিউটারে৷
সিটিটিসি এই চক্রটির সন্ধান পায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের বাইরে থেকে পাওয়া একটি অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে৷ তারা যে পর্নো ছবি উদ্ধার করেছে তারমধ্যে অভিযোগকারীর ছবিও রয়েছে৷ হোয়্যাটস অ্যাপের মাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে তারা এক পর্যায়ে তার পর্নো ছবি তুলে তা ‘ব্যবসার’ কাজে লাগায়৷
সিটিটিসির সহকারী পুলিশ কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ জানান, ২০১৫ সাল থেকে তারা শিশুটিকে ব্ল্যাকমেইল করে অনেক ছবি তুলতে বাধ্য করে৷ এক পর্যায়ে তারা ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে তার বাবা মায়ের সাথেও ওই ছবি শেয়ার করে৷ তারা ইনস্টাগ্রামে বেশ কয়েকটি ক্লায়েন্ট গ্রুপেও ছবি দেয়৷
তিনি আরো জানান, তাদের কাছ থেকে ৩০ জিবি পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট উদ্ধার করা হয়৷ তাদের ক্লাউড এবং ড্রপ বক্সে স্টোরেজ আছে৷ আর কম্পিটারে ভিন্ন ভিন্ন নামে ৪৫টি ফোল্ডার পাওয়া গেছে৷ তাতে ইউএসএ, ইউকে, অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশি মেয়েদের ভিকটিম হিসেবে ছবি আছে৷ আর তাদের কাছে যে ম্যানুয়ালটি পাওয়া গেছে তাতে মেয়েদের ফাঁদে ফেলার ১৫টি কৌশলের কথা বলা আছে৷
তিনি জানান, ‘‘আমরা নিশ্চিত হয়েছি এরকম আরো অনেক শিশু পর্নোগ্রাফির চক্র ঢাকায় সক্রিয়৷ আমরা আরো কিছু অভিযোগ পেয়েছি৷ আমরা তাদের পেমেন্ট মেথডও জানতে পেরেছি৷ তারা ক্রিপ্টো কারেন্সি ব্যবহার করে৷’’
এই গ্রুপটি ২০১৫ সাল থেকে এই অপরাধে যুক্ত৷ তারা কি পরিমাণ অর্থ আয় করেছে তাও অনুসন্ধানে বের হয়ে আসবে বলে জানান তিনি৷
সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক তানভীর হাসান জোহা বলেন, ‘‘এখন আর শিশু পর্নোগ্রাফি সারফেস ওয়েবে হয়না৷ এর বাজার ডার্ক ওয়েবে৷ এটা মনিটর করার জন্য ডিপ এন্ড ডার্ক ওয়েব মনিটরিং প্লাটফর্ম আছে৷ কিন্তু বাংলাদেশে সেই প্লাটফর্মটি নেই৷ ফলে সরাসরি সেটা এখান থেকে মনিটর করা যায় না৷ তদন্ত বা অভিযোগের ভিত্তিতে কিছু চক্র মাঝে মাঝে চিহ্নিত হয়৷’’
তবে তিনি সাধারণ পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে বলেন, ‘‘কিছু চক্র আছে যারা শিশুদের নিয়ে নানা ধরনের কাজ করার নামে শিশু পর্নোগ্রাফিতে যুক্ত৷ কারা এই শিশু পর্নোগ্রাফির অবৈধ বাজারটি এখন সবচেয়ে লাভজনক৷’’
তার মতে, ‘‘ভালো করে তদন্ত করলে দেশীয় চক্রের সাথে যুক্ত আন্তর্জাতিক চক্রটিও চিহ্নিত করা সম্ভব৷’’
তবে ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘‘সিটিটিসি এখন ডার্ক ওয়েব মনিটরিং-এ সক্ষম৷ এ নিয়ে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে৷’’
অপরাধ বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুধু সাইবার অপরাধের ব্যাপারে পুলিশের তৎপরতাই যথেষ্ঠ নয়৷ এব্যাপারে অভিভাবকসহ সবাইকে সচেতন হতে হবে৷ আর সরাসরি পর্নো তৈরিতে অসচ্ছল পরিবারের শিশুদের টার্গেট করা হয়৷ সে ব্যাপারেও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন৷ একই কথা বলেন ইশতিয়াক আহমেদ৷ তার মতে, অভিভাকদের উচিত হবে তাদের সন্তানদের ডিভাইস ব্যবহারে সতর্ক করা এবং তাদেরও সতর্ক থাকা৷ কারণ শিশুরা এখন সব ধরনের অনলাইন ডিভাইস ব্যবহার করছে৷
২০১৪ সালে ঢাকায় একই রকম আরেকটি চক্রকে আটক করে সিআইডি৷ ওই চক্রটি শিশুদের নিয়ে এসে সরাসরি পর্নো তৈরি করত৷ টিপু কিবরিয়া নামে একজন কথিত শিশু সাহিত্যিক ও তার তিন সহযোগীকে তখন গ্রেপ্তার করা হয়৷ তারা খিলগাঁও এর একটি স্টুডিওতে শিশুদের নিয়ে গিয়ে পর্নোগ্রাফি তৈরি করত৷ তাদের এসব ছবির ক্রেতা জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডের৷ ওই অভিযুক্তেরা এখন কারাগারে৷