‘আইনের শাসন না থাকাতেই এমন ঘটনা ঘটেছে’
৯ মার্চ ২০১৮যৌন নিপীড়নেরশিকার কলেজছাত্রী ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার পর থেকেই বিষয়টি সবার নজরে আসে৷ তারপর ঐ দিনই আরো কয়েকটি মেয়ে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে স্ট্যাটাস দেন৷ বিষয়টি দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি করে৷ ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও কথা বলতে হয় বিষয়টা নিয়ে৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভিডিও ফুটেজ পাওয়ার কথা বললেও, তা তাদের কাছে নেই বলে জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷
রমনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী মাঈনুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার সেই ঘটনায় ছাত্রীর বাবা বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন৷ মামলায় তিনি অজ্ঞাতনামা ১৭-১৮ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ করেছেন৷ কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে ওসি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে৷ তবে এই মুহূর্তে মামলার অগ্রগতি নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি৷
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষ্যে বুধবার বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভা ছিল৷ ক্ষমতাসীন দলটির বিভিন্ন ওয়ার্ড শাখা এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগের মতো সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে জনসভায় যোগ দেন৷ বাংলামোটরে এ রকমই একটি মিছিলের মধ্যে পড়ে একদল যুবকের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার কথা ফেসবুকে পোস্ট করে এক তরুণী, যা সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হয়ে যায়৷ সেখানে সে অভিযোগ করে যে কলেজ থেকে ফেরার সময় এই জনসভার কারণে বাস না পেয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাংলামোটরে আসার পর একটি মিছিলে থাকা একদল যুবক তাকে ঘিরে ফেলে যৌন নিপীড়ন করে৷ পরে এক পর্যায়ে এক পুলিশ সদস্য তাকে উদ্ধার করে একটি বাসে তুলে দেয়৷
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেশে আইনের শাসনের অনুপস্থিতির কারণেই এইসব ঘটনা ঘটেছে৷ এই উচ্ছৃঙ্খলতার বিচার করা না গেলে দেশে এমন ঘটনা আরো ঘটতেই পারে৷'' তাই তিনি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করার উপর জোর দেন৷ বলেন, ‘‘অনেকক্ষেত্রে এই উচ্ছৃঙ্খল কর্মীদের নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রধানমন্ত্রী বললেও কাজ হচ্ছে না৷ কোথায় যেন আটকে যাচ্ছে৷''
বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘পুলিশ কর্মকর্তারা বুধবার রাতেই ওই তরুণীর বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে এসেছেন৷ বাংলামোটরে শিক্ষার্থীকে হয়রানির ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পাওয়ার পর জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টাও চলছে৷ ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের আইডেনটিফাই করার চেষ্টাও হচ্ছে, যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ আপনারাও জানতে পারবেন, কারা কারা এতে জড়িত৷ অপরাধী যে দলেরই হোক, ছাড় দেওয়া হবে না৷'' ওদিকে র্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে যে, এই ফুটেজ তাদের কাছে নেই৷
এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ-র ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ৭ মার্চ ঢাকার রাস্তায় যৌন হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়েছেন এক হ্যাকার৷ বৃহস্পতিবার বিআরটিএ-র ওয়েবসাইট হ্যাক করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এক পুরুষ কণ্ঠের অডিও বার্তা প্রচার করা হয়৷ সেখানে হ্যাকার নিজের পরিচয় দিয়েছেন, ‘স্বাধীন দেশের পরাধীন এক নাগরিক' হিসেবে৷ হ্যাকার উল্লেখ করেন, ‘‘স্বাধীন হয়েছি বহু আগে৷ তবে এ কেমন স্বাধীনতা, যে স্বাধীনতায় ১০ বছরের মেয়ে ধর্ষিত হয়ে খুন হয়? কলেজ থেকে আসা কোনো ছাত্রীর গায়ে হাত দেওয়া হয়? এ কেমন স্বাধীনতা?''
আপনার মন্তব্য লিখুন নীচের ঘরে৷