1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঘরেই নিরাপদ নয় নারী

৮ মার্চ ২০১৮

বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন বা নারীর উন্নয়ন নিয়ে অনেক কথা হয়৷ সুখবরও আছে অনেক৷ কিন্তু বিপরীত চিত্রটি আরো ভয়াবহ৷ ঘরে-বাইরে বলতে গেলে সর্বত্রই চলছে নারী নির্যাতন আর নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা৷ বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রেও নারী পিছিয়ে৷

https://p.dw.com/p/2tvvh
প্রতীকী ছবিছবি: picture alliance / Photoshot

পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বিবাহিত নারীদের শতকরা ৮০ জনই কোনো-না-কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার৷ স্বামীদের হাতেই সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন তাঁরা৷ কিন্তু কথিত পারিবারিক সম্মান, সন্তান এবং নানা সামাজিক দিক চিন্তা করে তাঁদের অধিকাংশই এই নির্যাতনের কথা প্রকাশ করেন না৷

আর ব্র্যাকের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, নির্যাতনের শিকার নারীদের শতকরা ৮২ ভাগই বিববাহিত নারী৷ অর্থাৎ, বিবাহিত নারীরাই নির্যাতনের শিকার হন বেশি৷ নারী নির্যাতনের মধ্যে হত্যা, ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন অন্যতম৷ শারীরিক নির্যাতনের হার শতকরা ৬১ ভাগ৷ ২০১৭ সালে নারী নির্যাতনের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে৷ নারী নির্যাতনকারী হিসেবে পরিবারের সদস্যরাই সবচেয়ে বেশি এগিয়ে৷ পরিবারের সদস্যদের হাতেই শতকরা ৭৭ ভাগ নারী নির্যাতনের শিকার হন৷

ব্র্যাকের গবেষণায় আরো বলা হয়েছে প্রায় ৬৬ শতাংশ নারী দেশের ৪১ থেকে ৬০ বছরের পুরুষদের সবচেয়ে বেশি যৌন নির্যাতনকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন৷ তবে গণপরিবহনে বেশি হয়রানি করে ১৯ থেকে ২৫ বছর বয়সি পুরুষ৷

আমাদের পারিবারিক কালচার ও কাঠামো ঘরে নারী নির্যাতনকে উৎসাহিত করে: সুলতানা কামাল

নারীনেত্রী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের পারিবারিক কালচার এবং কাঠামো ঘরে নারী নির্যাতনকে উৎসাহিত করে৷ নারীদর পুরুষ কর্তৃত্ব শাসন করার নামে মারধর যেন স্বাভাবিক নিয়ম৷ ভাত রান্না থেকে শুরু করে সন্তান পালন সবক্ষেত্রেই কোনো ব্যত্যয় হলে নারীকে দায়ী করা হয়৷ আমরা ২০১০ সাল পর্যন্ত ডমেস্টিক ভায়োলেন্সকে অপরাধ হিসেবেই আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আনতে পারিনি৷ তখন বলা হতো, এটা পরিবারের নিজস্ব ব্যাপার৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘আরো একটি ব্যাপার ঘটেছে, তা হলো, পরিবর্তনের কারণে নারী এখন ঘরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হচ্ছে৷ এই প্রতিবাদ মেনে নিতে পারছে না পুরুষ৷ ফলে ঘরে নির্যাতন আরো বেড়ে যাচ্ছে৷’’

তবে বাইরেও নারী নিরাপদ নয়৷ বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, সারা দেশে গত ১৩ মাসে গণপরিবহনে ২১ নারী ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, গত ১৩ মাসে বাস চালক-হেলপার ও তাদের সহযোগীরা ৯টি সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ৮টি ধর্ষণ ও ৪টি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটিয়েছে৷ এসব ঘটনায় ৫৫ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে৷

আর ‘এস্টেট অব রাইটস ইমপ্লিমেন্টেশন অব ওম্যান রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়াকার্স’ শিরোনামে এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিকদের শতকরা প্রায় ১৩ ভাগ যৌন হয়রানির শিকার৷ শারীরিক নির্যাতনের শিকার ২০ ভাগ৷ নারী শ্রমিকদের ৮৪ দশমিক ৭ ভাগ মৌখিক হয়রানির শিকার হন৷ ৭১ দশমিক ৩ ভাগ শিকার হন মানসিক নির্যাতনের৷ আর এই নির্যাতনের কাজে শীর্ষে রয়েছেন সুপারভাইজাররা৷

আসলে সমস্যা হচ্ছে নারীর কর্তৃত্ব না থাকা: শিরিন আক্তার

বাংলাদেশে রপ্তানি আয়ের ৮০ ভাগেরও বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে৷ আর এই খাত মূলত টিকে আছে নারী কর্মীদের ওপরই৷ এছাড়া বাংলাদেশে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নারীদের হয়রানি এবং যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যায় নিয়মিত৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই৷

নির্যাতনের বড় একটি কারণ হিসেবে বাল্য বিবাহকেও চিহ্নিত করা হয়৷ বাংলাদেশের নতুন আইনে আইনগতভাবেই ‘বিশেষ পরিস্থিতি’ বিরচেনায় ১৮ বছরের  কম বয়সি মেয়েদের বিয়েকেও বৈধতা দেয়া হয়েছে৷ আর ইউনিসেফের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারাবিশ্বে বাল্যবিবাহের হার কমলেও বাংলাদেশে শতকরা ৫২ ভাগ থেকে বেড়ে ৫৯ ভাগ হয়েছে৷

বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের ঘটনায় যাঁরা সাহস করে মামলা করেন তাঁরাও বিচার পান না৷ শতকরা ৯৭ ভাগ মামলায়ই আসামিরা সাজা পান না৷

সংসদ সদস্য এবং নারী নেত্রী শিরিন আক্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আসলে সমস্যা হচ্ছে নারীর কর্তৃত্ব না থাকা৷ যে নারী নির্যাতন করে সে পুরুষ৷ আইন যে করে সে পুরুষ৷ বিচার যে করে সে-ও পুরুষ৷ ফলে নির্যাতনের বিচার হয় না৷ নারীর ক্ষমতায়ন এবং সমাজের সবক্ষেত্রে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব সমান করা প্রয়োজন৷’’

তিনি বলেন, ‘‘কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ নেয়ার জন্য সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকলেও  তা কার্যকর হচ্ছে না৷ নারী অভিযোগ করতে গিয়ে উল্টো হয়রানির মুখে পড়ছে৷ আইন আছে৷ কিন্তু তা বাস্তবায়নেই সমস্যা৷ যাঁরা বাস্তবায়ন করেন, তাঁদের মধ্যেই সমস্য৷’’