দু'শো কোটি মানুষ ‘‘গোপন ক্ষুধায়'' পীড়িত
১৪ অক্টোবর ২০১৪ক্ষুধা বলতে যেমন অন্নাভাব, তেমনি অপুষ্টি৷ কাজেই সর্বাধুনিক বিশ্ব ক্ষুধা পরিমাপকে সুখবর না দুঃস্বপ্ন বলা উচিত, সে বিষয়ে ভাষ্যকাররা একমত নন৷ পৃথিবীর প্রতি দশম নাগরিক ক্ষুধিত; প্রতি দশ সেকেন্ডে একটি করে শিশুর মৃত্যু ঘটছে ক্ষুধা ও অপুষ্টির কারণে৷ তা সত্ত্বেও বলতে হয় যে, বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার বিরুদ্ধে সংগ্রামে প্রগতি ঘটেছে৷
সারা বিশ্বে ৮০ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের পর্যাপ্ত খাদ্য নেই৷ ১৬টি দেশের ‘‘ক্ষুধা'' পরিস্থিতি ‘‘গুরুতর'' কিংবা ‘‘উদ্বেগজনক''৷ সেই সঙ্গে রয়েছে ‘হিডেন হাঙ্গার', গোপন ক্ষুধা, যা চোখে পড়ে না – এক কথায়, অপুষ্টি, বিশেষ করে ভিটামিন এবং মিনারালের ক্ষেত্রে, সেই সব মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট, যা না থাকলে মানুষের বৃদ্ধি থেকে বুদ্ধি, সব কিছু প্রভাবিত হতে পারে৷
মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট অপুষ্টি
শুধু পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য পেলেই চলবে না, সেই সঙ্গে অতি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর পদার্থগুলি গ্রহণ করতে হবে৷ নয়ত নাগরিকদের উৎপাদনক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে, যার ফলে দেশের অর্থনীতির হানি ঘটতে পারে৷ বলতে কি, ‘‘গোপন ক্ষুধা'' একদিকে ধনি দেশ অথবা দরিদ্র দেশ, অন্যদিকে ধনি-দরিদ্রের মধ্যে ভেদাভেদ করে না: উন্নয়নশীল বিশ্বের বহু দেশ আজকাল অপুষ্টি, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট-এর অভাব এবং মেদবাহুল্য, এই তিনটি বিপদের বিরুদ্ধে লড়ছে; অপরদিকে পশ্চিমের ধনি দেশগুলিতেও অনেক মেদবহুল শিশু ও ব্যক্তি ‘‘গোপন ক্ষুধায়'' ভুগছে৷
তবে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট অপুষ্টির মূল শিকার হচ্ছে উন্নয়নশীল বিশ্বের সেই আনুমানিক ১১ লাখ শিশু, যারা প্রতিবছর শুধুমাত্র অপুষ্টির কারণে প্রাণ হারাচ্ছে৷ প্রতিবছর প্রায় এক কোটি ৮০ লক্ষ শিশু মস্তিষ্কের ত্রুটি নিয়ে জন্মাচ্ছে আয়োডিন ডেফিসিয়েন্সির কারণে৷ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ডেফিসিয়েন্সি রোখার জন্য ‘‘বায়োফোর্টিফায়েড'' খাদ্য গ্রহণ করা যেতে পারে; আবার শিশুদের ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট দেওয়া যেতে পারে৷
জিএইচআই স্কোরে দক্ষিণ এশিয়া
সর্বাধুনিক বিশ্ব ক্ষুধা পরিমাপ রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ক্ষুধাত্রাণের ক্ষেত্রে এশিয়ার দেশগুলি লক্ষণীয় প্রগতি করেছে৷ দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে ক্ষুধার পরিমাণ কমেছে ১২ পয়েন্ট, যা কিনা এশিয়ায় বৃহত্তম হ্রাস৷ বাংলাদেশে এনজিও-গুলির তৎপরতায় এবং সরকারি কর্মসূচির ফলে সমাজের দরিদ্রতম স্তরে শিশু অপুষ্টি অনেকটা হ্রাস পেয়েছে৷ বাংলাদেশ শিশুদের পুষ্টি নিয়মিতভাবে মনিটর করে থাকে৷ ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে বয়সের তুলনায় কম ওজনের শিশুদের অনুপাত ছিল ৬২ শতাংশ, ২০১১ সলে যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৭ শতাংশে৷
ভারতেও পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুদের মধ্যে যাদের ওজন বয়সের তুলনায় কম, তাদের অনুপাত কমেছে গত ন'বছরে প্রায় ১৩ শতাংশ৷ ভারতের সামগ্রিক জিএইচআই স্কোরও ২৬ শতাংশ কমেছে৷ ‘‘ক্ষুধার'' পরিমাপে ভারতের পরিস্থিতিকে ‘‘উদ্বেগজনক'' থেকে ‘‘আন্তরিক''-এ নামিয়ে আনা হয়েছে৷ ভারত এখন ৭৬টি দেশের মধ্যে ৫৫ স্থানে – বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে, কিন্তু নেপাল ও শ্রীলঙ্কার থেকে পিছনে৷
এসি/ডিজি (ডিপিএ, পিটিআই, ডাব্লিউএইচএইচ)