1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুর্গাপূজার বিশ্বজনীন স্বীকৃতি ঘিরে সম্ভাবনা

২৩ ডিসেম্বর ২০২১

ইউনেস্কো দুর্গাপূজাকে ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অফ হিউম্যানিটি' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর ফলে উজ্জ্বল হল বাংলার পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা। কিন্তু তালিকাভুক্তির কৃতিত্ব কার, রাজ্য না কেন্দ্রের?

https://p.dw.com/p/44kRN
Indien UNESCO Durga Puja Festival in Kalkutta
ছবি: Satyajit Shaw/DW

 

বেলজিয়াম, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল, বলিভিয়ার মত ৬টি দেশের উৎসব এখনো পর্যন্ত এই স্বীকৃতি পেয়েছে। ধর্মের গণ্ডি পার করে উৎকৃষ্ট শিল্প প্রদর্শনীর চেহারা নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপূজা। চোখ ধাঁধানো মন্ডপ, প্রতিমা থেকে আলোকসজ্জায় কলকাতা উৎসবের সময় হয়ে ওঠে আস্ত এক প্রদর্শনশালা। শুধু থিমের জৌলুস নয়, বনেদি বাড়ির প্রাচীন পুজো এই উৎসবে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেল তৈরি করেছে। ইউনেস্কো তাই দুর্গাপূজাকে দেখেছে ধর্ম ও শিল্পের মিলন ক্ষেত্রের এক সর্বোত্তম উদাহরণ হিসেবে।

বাংলা তথা ভারতের সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত দুর্গোৎসব। এ বিষয়ে আলোকপাত করে বিশিষ্ট কলকাতা গবেষক হরিপদ ভৌমিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ভারতে বিভিন্ন শক্তিপীঠ রয়েছে। তা সত্ত্বেও বাংলা সযত্নে এই কালচারকে অন্য রূপ দিয়েছে। বাংলার দুর্গাপূজা কখনোই শক্তিপূজা নয়। বরং সন্তানের মাতৃ আরাধনা। এটাকে বিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছে। আমি মনে করি, এটা সমগ্র মাতৃজাতির স্বীকৃতি।”

ইউনেস্কোর স্বীকৃতি লাভের পর কলকাতাবাসী উচ্ছ্বসিত। তার নমুনা মিলেছে বুধবার শহরের রাজপথে এই স্বীকৃতিকে উদযাপনে হয়েছে পদযাত্রা। একই সঙ্গে আশা তৈরি হয়েছে, পর্যটন শিল্পে দুর্গোৎসব এমনিতেই বিদেশি পর্যটকদের টেনে আনে। এবার ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পুজোকে আরো বেশি প্রচারের আলোয় এনে ফেলল। এর ফলে আরো বেশি সংখ্যায় বিদেশি পর্যটকরা উৎসব দেখতে এই শহরে আসবেন, এমনটাই আশা করছেন পর্যটন শিল্পের কর্তা ব্যক্তিরা। অনেকেরই মতে, উৎসবের সময় পর্যটনের ক্ষেত্র প্রসারিত করতে নতুন প্যাকেজ আসবে। পর্যটক বাড়লে উপকৃত হবেন এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। এতে কোভিড পরবর্তী সময়ে অর্থনীতির হাল কিছুটা উন্নত হবে। পর্যটন সংস্থা টুইনস ট্যুর –এর অন্যতম কর্ণধার অরিজিৎ দত্ত বলেন, "ইউনেস্কো স্বীকৃতি দেওয়ায় আরো গরিমা বাড়ল দুর্গোপুজোয়। কোভিডের আগে ২০১৯ সালে বহু বিদেশী পর্যটককে আমরা পুজোর সময় শহরে ঘুরিয়েছি।অতিমারি না থাকলে ভবিষ্যতে এটা আরো বাড়বে।”

তবে পর্যটন সংস্থার একাংশ মনে করেন, ইউনেস্কোর তকমা বাড়তি কোনো সুবিধা দেবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা বলেন, "বিদেশে ভারতীয় দূতাবাসকে উৎসব নিয়ে প্রচার চালাতে হবে। আমাদের পাড়ার বারোয়ারি তো প্রচার করবে না। সেক্ষেত্রে এটা ঐতিহ্যের তালিকাতেই থেকে যাবে। পর্যটনশিল্পের সম্ভাবনা বাড়াবে না।” যদিও কেন্দ্রীয় সরকার কোভিড পরবর্তী সময়ে পর্যটনের পরিধি বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে। কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রকের আঞ্চলিক অধিকর্তা(পূর্ব) সাগ্নিক চৌধুরী বলেন, "বিদেশ মন্ত্রক ইতিমধ্যে ২০টি দেশের দূতাবাসে আধিকারিকদের নিযুক্ত করেছে, যারা পর্যটনের বিষয়টি প্রচার করবে। তাদের দায়িত্বই হবে দেশের সাংস্কৃতিক গরিমা তুলে ধরে বিদেশীদের ভারত ভ্রমণে উৎসাহিত করা।”

হরিপদ ভৌমিক

ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে স্বীকৃতির পিছনে অবদান রাজ্য না কেন্দ্রের? এ নিয়েও চাপান-উতোর দেখা যাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে হেরিটেজ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের কাছে। কেন্দ্র এই প্রস্তাবকে সমর্থন করে বিষয়টি ইউনেস্কোর কাছে পাঠায়। তারই ফলস্বরূপ স্বীকৃতি পেয়েছে দুর্গোৎসব। পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এটাকে তাদের কৃতিত্ব হিসেবে দেখছে। দলের মুখপাত্র বিশ্বজিৎ দেব ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এর কৃতিত্ব ২০০% মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাপ্য। তিনি গত ১১ বছর ধরে দুর্গোৎসবকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী রেড রোডে বিসর্জনের কার্নিভাল শুরু করেছেন, বিশ্বে দরবারে উৎসবকে আরো ব্যাপক আকারে তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছেন। তারই ফল ইউনেস্কোর স্বীকৃতি।”

বাম সরকারের তুলনায় এখন ক্ষমতাসীন তৃণমূল উৎসব আয়োজনে বেশি উদ্যমী। এই কথা বিরোধীদের অভিযোগ উঠে আসে। কোভিড পরিস্থিতিতে দুর্গোৎসব আয়োজন জন্য ৩৬,০০০ পুজো কমিটিকে ৫০ হাজার টাকা করে দিয়েছে মমতার সরকার। তাই উৎসবের নয়া শিরোপায় তৃণমূল কি বাড়তি কৃতিত্ব দাবি করতে পারে না? রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এ নিয়ে কৃতিত্ব দাবি করে আমরা তরজায় জড়াতে চাই না। প্রধানমন্ত্রীও কৃতিত্ব দাবি করেননি। কেন্দ্রের সংস্কৃতি মন্ত্রকের উদ্যোগের ফলেই জাপান সহ ১৬টি দেশ আমাদের প্রস্তাবের পক্ষে মত দিয়েছে। সে কারণেই এই সাফল্য মিলেছে। তৃণমূল এটাকে নিজেদের সাফল্য বলে যে প্রচার করছে সেটাই হাস্যকর।”

এ নিয়ে বিতর্ক চাইছেন না শহরের পুজো উদ্যোক্তারা। টালা বারোয়ারি-র পক্ষে অভিষেক ভট্টাচার্য বলেন, "স্বীকৃতি কার উদ্যোগে, সেটা বড় কথা নয়। রাজ্য সরকার, কেন্দ্র সরকার, উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের ইচ্ছে, আন্তরিকতা ছাড়া সম্ভব হতো না।”

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য