1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা বিপদ মাথায় নিয়ে দুর্গা যাবেন বার্লিনে

১ জুলাই ২০২১

ছন্দে ফিরছে জীবন৷ করোনার ডেল্টা সংক্রমণ নিয়ে বিশ্বজুড়ে নৈরাশ্যের মধ্যেও আনন্দের বার্তা কলকাতার কুমোরটুলিতে৷ করোনার তৃতীয় ঢেউ আসার আগেই এখানকার দুর্গা প্রতিমা পৌঁছে যাবে বিদেশে৷

https://p.dw.com/p/3vrtz
Kalkutta Durga Idol Versand nach Berlin
ছবি: Payel Samanta

করোনার তৃতীয় ঢেউ আসতে চলেছে খুবই তাড়াতাড়ি৷ ডাক্তারদের সতর্কবাণী, দ্রুত টিকাকরণ, অক্সিজেন, বেড, এসব নিয়ে সারা রাজ্য জুড়েই হুলুস্থুল চলছে৷ এই পরিস্থিতিতে পূজা হবে কিনা সে নিয়ে অনেকেই সংশয়ে৷ গতবারের থেকে অনেক পূজা কমিটিরই অর্ডার কমে গিয়েছে৷ এমনই অভিযোগ কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের৷ কোভিড তাদের কাজে থাবা বসিয়েছে রুজিরোজগারেও টান পড়েছে৷ গত বছর পূজাতেও তেমন আয় হয়নি শিল্পীদের৷ তারা আশঙ্কায়, প্রবাসীরা লকডাউনে অনেকেই দেশে ফিরে এসেছেন৷ করোনার জন্য নিয়মকানুনেও এখন অনেক কড়াকড়ি৷ তাই বিদেশে প্রবাসীদের বাঙালি সংগঠনগুলি সেভাবে পূজা করবে কি? এদিকে তৃতীয় ঢেউ আসার সম্ভাবনাও রয়েছে, তাই অনেকে পূজা নিয়ে সন্দিহানও৷ তবে যেখানে করোনার প্রকোপ কম, সেখানে পূজা নিয়ে উৎসাহ তৈরি হয়েছে৷ বলা যায়, মৃৎশিল্পী মহলে বাড়তি অক্সিজেন জোগাচ্ছে বিদেশের পূজা৷

দুর্গা চললো বিদেশ

আপাতত প্রতিমা বিদেশ পাড়ি দিলে শিল্পীরা আয়ের মুখ দেখবেন৷ আগের থেকে বিদেশে দু্র্গা প্রতিমার চাহিদা ইদানীং বেড়েছে৷ কিন্তু করোনার জন্য এখন ছবিটা আলাদা৷ তিরিশ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজে জড়িত শিল্পী মিন্টু পালের তৈরি দুটি ফাইবার গ্লাসের প্রতিমা বার্লিন এবং নিউ জার্সি পাড়ি দিচ্ছে৷ মৃৎশিল্পীরা চাইছেন, ছোট করে হলেও যেন পূজা হয়৷ কলকাতার কয়েকটি ক্লাব ইতিমধ্যে প্রতিমার বায়না দিতে শুরু করেছে৷ তবে বিদেশের সঙ্গে কুমোরটুলির যোগ আরও সহজ করে দিয়েছে প্রযুক্তি৷ মৃৎশিল্পীরা জানান, আগে ফোনের মাধ্যমেই অর্ডার আসত৷ এখন অনলাইনে কথা হয়৷ হোয়াটসঅ্যাপ বা ভিডিও কনফারেন্সেই অর্ডার আসে, প্রতিমা পছন্দ করেন কমিটির কর্মকর্তারা৷ মিন্টু পাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গতবছর আমি প্রায় ছ'খানা দুর্গা প্রতিমা বিদেশে পাঠিয়েছি৷ প্রতি বছরই প্রায় আট-দশটা করে প্রতিমা বিদেশে পাঠাতাম৷ গোটা কুমোরটুলি থেকে ৫০টার মত প্রতিমা বিদেশ পাড়ি দেয়৷ কিন্তু এবার এই অতিমারির জন্য সেটা ৫০ শতাংশেরও বেশি কমে গিয়েছে৷''

‘‘এবার এই অতিমারির জন্য সেটা ৫০ শতাংশেরও বেশি কমে গিয়েছে’’: মিন্টু পাল

কলকাতার প্রতিমা যাচ্ছে বার্লিনে

কলকাতার মিন্টু পালের ফাইবার গ্লাসের তৈরি এক চালচিত্রের সাবেকি ঘরানার মৃন্ময়ী দুর্গা জাহাজে চেপে বার্লিনে যাচ্ছে৷ ‘ইগনাইট বেঙ্গলিজ ইন বার্লিন' নামক স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংস্থা প্রথমবার পুজো করার উদ্যোগ নিয়েছে৷ করোনা পরিস্থিতিতে এমন উদ্যোগ কেন? সংগঠনের তরফে পুজো কমিটির সম্পাদক, প্রবাসী বাঙালি অভিজিৎ সাহা ডয়চে ভেলেকে ফোনে বলেন, ‘‘গত বছর থেকেই আমাদের পথ চলা শুরু হয়েছে৷ বলা ভাল, কোভিডের মধ্যে আমাদের যাত্রা শুরু৷ ২০২০-তে কোভিড এখানে খুবই বেড়ে যাওয়ায় আমরা পুজোর আয়োজন করতে পারিনি৷ এখন অনেকটাই নিয়ম শিথিল হয়ে গেছে৷ তাই পুজোর আয়োজন করতে পারব আশা করি৷'' অনলাইনেই প্রতিমা দেখে পছন্দ করেছেন উদ্যোক্তারা৷ পুজো মানে কি কলকাতার মতো নিয়মের দফারফা প্রবাসেও? না, এমনটা নয়৷ অভিজিৎ বলেন, ‘‘এখন এখানে দেড় মিটার দূরত্ব মেনে ৫০ জনকে পুজোর হলে ঢোকাতে পারি৷ আস্তে আস্তে নিয়ম শিথিল হচ্ছে৷ অক্টোবরে আরও শিথিল হবে আশা রাখি৷ এছাড়া একটা কোভিড টেস্ট সেন্টারের কথাও ভাবছি৷ সেই সময় সরকার যা নিয়ম করবে, সেটা মেনে আয়োজন হবে৷''

‘‘গত বছর থেকেই আমাদের পথ চলা শুরু হয়েছে’’: অভিজিৎ সাহা

দেড়শ থেকে দুশো মানুষের আগমন হবে, এমনটাই অনুমান উদ্যোক্তাদের৷ এক টুকরো কলকাতার উৎসবমুখর ছবি বার্লিনেও ফুটে উঠবে, এই আশায় বুক বাঁধছেন প্রবাসের বঙ্গসন্তানরা৷ বুক বাঁধছেন মিন্টুর মতো অনেক মৃৎশিল্পীও৷ তারা বিদেশে পূজার সূচনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন৷ মিন্টু বলেন, ‘‘আমাদের এই প্রতিমা তৈরি করেই জীবিকা নির্বাহ হয়৷ আমরা সরকারের সাহায্য তেমন পাই না৷ করোনার পরে একটু সামলে নিয়েছিলাম৷ আবার যদি সেই পরিস্থিতি হয়, তা হলে আমাদের খুবই সমস্যা হবে৷ বিদেশে কিছু প্রতিমা গেলে আমাদের সঙ্কট কিছুটা দূর হবে৷''

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷