দুনিয়া বদলে দিয়েছিল যে দিন
১১ সেপ্টেম্বর ২০১১বদলেছে কি কিছু? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তো আজও দুনিয়ায় যা কিছু দুঃখকষ্ট, সব কিছুর জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়৷ ওদিকে জার্মানি নিজেকে নিয়ে মশগুল৷ যদি না হঠাৎ একটা কমান্ডো অভিযানে আল-কায়েদার মাথা ওসামা বিন লাদেন নিহত হয়৷ তখনই নীতিবাদরা মাথা চাড়া দেয়৷ কেতাব লিখে প্রমাণ করার চেষ্টা করে, ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরের ফলে দুনিয়া বদলে যায়নি৷ কিন্তু এ' হল মানবিক মাপকাঠিতে অপরিমেয় একটি বিপর্যয়কে সাদামাটা ঐতিহাসিক ঘটনা বলে ঘোষণা করার অসহায় প্রচেষ্টা - যা মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বোধগম্য হলেও, রাজনৈতিকভাবে ভ্রান্ত এবং নৈতিক বিচারে একেবারেই নিন্দনীয়৷ কেননা ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর দুনিয়াকে যেভাবে বদলেছে, তার আগের কয়েক দশকে, কিংবা তার পরের এক দশকে তার কোনো তুলনা নেই৷ এই তারিখটায় অনেক পুরনো বিশ্বদর্শন, চিন্তাধারা এবং রাজনৈতিক তত্ত্বের ভরাডুবি ঘটেছে৷
বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে৷ বিগত ১০ বছরে বারংবার চেষ্টা করা হয়েছে, স্পষ্ট নীতি এবং প্রকল্পের মাধ্যমে ইসলামি সন্ত্রাসের মোকাবিলা না করে, সমঝদারি ও আপোষের মনোভাব দিয়ে পরিস্থিতি সামলে দেওয়ার৷ হজরত মোহাম্মদকে নিয়ে কয়েকটা বাজে কার্টুন পশ্চিমে যে ভীত প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল, সেটাই তার সবচেয়ে হাস্যকর উদাহরণ৷ কিন্তু সেটাও ছাড়িয়ে যায় যখন ওসামা বিন লাদেনের মতো একজন গণহত্যাকারী, যে সংস্কৃতি এবং ধর্মের নামে ইসলামের অপব্যবহার করেছে, তাকে হত্যা আন্তর্জাতিক আইনসঙ্গত হয়েছে কিনা, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, জার্মানিতে যেমন হয়েছে৷
অথচ এই ধরনের অনর্থক বিতর্ক থেকেই বোঝা যায়, ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের সেই আক্রমণ পশ্চিমের মূ্ল্যবোধকে ধরে কিভাবে নাড়া দিয়েছে৷ জর্জ ডাবলিউ বুশ নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রের সেরা প্রেসিডেন্টদের মধ্যে পড়েন না৷ কিন্তু ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার্সের উপর আক্রমণের দু'দিন পরে তিনি বলেছিলেন: ‘‘আমরা স্বাধীনতা এবং যা কিছু শুভ ও ন্যায্য, তাকে রক্ষা করব৷'' অতঃপর গুয়ান্তানামো, আবু ঘ্রেইবের মতো অন্যায়, এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ যাওয়ায় বুশের কথার সরল, দ্ব্যর্থহীন তাৎপর্যটা ঢাকা পড়ে গেছে৷ আরো বড় কথা, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে যারা প্রাণ হারিয়েছে, তাদের প্রতিও এ'ভাবে অন্যায় করা হচ্ছে৷ কেননা যারা অন্যায় করেছে এবং যাদের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে, এই দুই'এর মধ্যে পার্থক্যটাই যেন হারিয়ে যাচ্ছে৷
বুশ যা বলেছিলেন তার বাস্তব ফলশ্রুতি হল: আফগানিস্তান আর একদল গোঁড়া ঈশ্বরভজা মনুষ্যবিদ্বেষীদের হাতে নেই৷ ইরাক এক স্বৈরাচারি একনায়কের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে৷ এমনকি আজ যে আরব বিপ্লবের ঢেউ চলেছে, তা'ও বারংবার গণতন্ত্র আর স্বাধীনতার মন্ত্রোচ্চারণের পথ ধরে৷ - অপরদিকে সন্ত্রাসকে কোনোদিন মেনে নেওয়া উচিৎ নয়৷ সমঝদারি দেখিয়ে সন্ত্রাসকে ‘সহিংস বার্তা' বলেও নয়৷ বিভীষিকাময় ১১ই সেপ্টেম্বরের দশম বার্ষিকী উপলক্ষে ডয়চে ভেলের মাল্টিমিডিয়া পরিবেশনা সেটাই তুলে ধরতে চেয়েছে৷
প্রতিবেদন: মার্ক কখ
ভাষান্তর: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ