1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুদিনেই পালটে গেল করোনার জার্মানি!

২৫ মার্চ ২০২০

করোনা ঠেকাতে কী ঘোষণা আসতে যাচ্ছে, গত দুই সপ্তাহ জার্মানিতে এই নিয়ে উৎকণ্ঠা৷ উদ্বিগ্ন জার্মানরা ঢুকে গেলেন ঘরের ভেতর৷ কিন্তু যখন সত্যিই ঘোষণা এলো, পালটাতে শুরু করলো পরিস্থিতি৷ এখন অনেক জার্মানই ঘরের বাইরে৷

https://p.dw.com/p/3a0q4
শুরুর দিকে জার্মানির ট্রামগুলো এমন ফাঁকা থাকলেও এখন অনেকেই বের হচ্ছেন বাসার বাইরেছবি: DW/A. Deb Kanunjna

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সব দেশের মতো জার্মানিও নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ কিন্তু অন্য সব সরকারের সঙ্গে জার্মান সরকারের একটা জায়গায় রয়েছে মৌলিক তফাত৷ অন্য সরকারদের মতো ‘আতঙ্কিত হবেন না' বলছে না জার্মানি৷ বরং, মুখের ওপর সত্যি কথা বলে দেয়ার সাহসটা দেখাচ্ছে৷

দুই সপ্তাহ আগে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বললেন, ৭০ শতাংশ জার্মান এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন৷ ততদিনে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়েছে৷ প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও৷ মূলত এর পরেই জার্মানদের চোখে-মুখে আতঙ্ক দেখা দেয়৷ সুপারমার্কেটগুলোতে শুরু হয় হামস্টারকাউফ বা ভয়ে অতিরিক্ত কেনাকাটা করে মজুত করে রাখা৷

এর মধ্যে অফিস-আদালত, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেয়া হয়৷ প্রায় সব অফিস তাদের কর্মীদের বাসা থেকে কাজ করার সিদ্ধান্ত জানায়৷ কথায় না, কাজেই আতঙ্ক দেখা দেয় জার্মানদের মধ্যে৷ ডয়চে ভেলেতেও ৩০টি ভাষা বিভাগ ছাড়াও আরো নানা বিভাগে নেয়া হয় একই ব্যবস্থা৷ যেমন এই মুহূর্তে আমিসহ দুজন ছাড়া বাংলা বিভাগের বাকি সবাই বাসা থেকে অফিস করছেন৷ আমরাও বাসা এবং অফিস ছাড়া আপাতত আর কোথাও যাচ্ছি না৷

বেশিরভাগ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের না হলেও, অপেক্ষাকৃত তরুণরা স্বভাবসুলভ চাপল্যে আড্ডা, খেলাধুলার জন্য বের হতে থাকেন৷ এর মধ্যে আরো বেড়েছে আক্রান্ত, মৃত্যুর সংখ্যা৷ এরই মধ্যে বাভারিয়াসহ বেশ কয়েকটি রাজ্য ও শহর কর্তৃপক্ষ নিজেরাই লকডাউন, কারফিউ জারি করেছে৷ কিন্তু সারা দেশের কী হবে?

২২ মার্চ রোববার৷ সপ্তাহান্তে এমনিতেই রাস্তায় লোকজন কম থাকে৷ তবে বিকেলে পরিবার- বন্ধুবান্ধবসহ ঘুরতে বের হওয়া, পার্টি করার যে ব্যাপারটি, এদিন বন্ধ থাকে সেটিও৷ ১৬ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোন বৈঠকে বসেন৷ সে বৈঠকে আবার দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে এক প্রকার ঝগড়াই শুরু করেন বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী৷ এক গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন বাভারিয়ার মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস স্যোডার, তার সমর্থকেরা চাচ্ছিলেন পুরো দেশজুড়ে ‘করোনা কারফিউ' জারি করতে৷ অন্য দলে ছিলেন নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়ার মুখ্যমন্ত্রী আরমিন লাশেট৷ তার মন্তব্য ছিল, একটি গণতান্ত্রিক দেশে কারফিউ হওয়া উচিত ‘সবশেষ অবলম্বন'৷

সেদিন বিকেলে চ্যান্সেলর ম্যার্কেল বলেন, করোনা সংক্রমণ একটা ‘সিরিয়াস বিষয়, আপনারা সিরিয়াস হোন'৷ জার্মানিতে জারি করা হলো ‘কনটাক্ট ব্যান'৷ জরুরি কাজ ছাড়া কেউ বাসা থেকে বের হতে পারবে না, রাস্তায় দুজনের বেশি একসঙ্গে চলতে পারবে না, সবার সঙ্গে অন্তত দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে৷ তবে পরিবার ও একই বাসায় বসবাস করা সদস্যদের জন্য এ আইন শিথিল৷

HA Asien | Anupam Deb Kanunjna
অনুপম দেব কানুনজ্ঞ. ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Böll

এই ঘোষণার পর বিষয়টা বুঝে উঠতে একদিন সময় নিয়েছে অনেকে৷ সোমবার সপ্তাহের কর্মদিবস অফিস যাওয়ার সময় বাস-ট্রাম, রাস্তাঘাটে বেশ মানুষজন থাকেন৷ কিন্তু এই সোমবার পুরো ট্রামে আমিই ছিলাম একমাত্র যাত্রী৷

কিন্তু পরেরদিন মঙ্গলবার থেকেই পালটাতে থাকে পরিস্থিতি৷ কেবল জার্মানরা নন, জার্মানিতে বাস করা বিভিন্ন দেশের অভিবাসীরাও বুঝতে থাকেন, দেশ যেহেতু লকডাউন হয়নি, কারফিউও জারি হয়নি, তাহলে দুজন মিলে তো বাইরে বের হওয়াই যায়৷ জরুরি কাজেও বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তাই অনেকে বাজারে যাওয়ার পথেও একটু আড্ডা দিয়েই ফিরছেন৷ ফলে রেস্টুরেন্ট, বার বন্ধ থাকলেও সন্ধ্যার সময়েই অনেককে দেখলাম বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে বের হচ্ছেন৷

বুধবারে সকালে অফিসের উদ্দেশে ট্রামে উঠে আমি পুরোই থ৷ এর আগের এক-দেড় সপ্তাহ যেখানে হাত-পা ছড়িয়ে প্রায় ‘প্রাইভেট' ট্রাম নিয়ে অফিস এসেছি, বুধবার ট্রামে এত মানুষ যে বসারই জায়গা পেলাম না৷ আইনের চেয়ে আইনের ফাঁক আমরা বেশি পছন্দ করি৷ ম্যার্কেলের ঘোষণার আসল উদ্দেশ্য না বুঝে এখন অনেকেই ‘সবাই মিলে একা একা' বের হচ্ছেন৷ তাতে লাভটা কী হলো?

এদিকে, এই লেখা যখন লিখছি জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি বলছে জার্মানিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩ হাজারেরও বেশি মানুষ, মারা গিয়েছেন ১৬৪ জন৷

কিছু জার্মানের এমন আচরণে বাকি জার্মানদের মধ্যেও বেশ ক্ষোভ দেখেছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে৷ অনেকে মনে করছেন, এমন আচরণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকায় জার্মান সরকারও হয়ত বাধ্য হবে ইটালি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, স্পেনসহ পশ্চিম ইউরোপের অন্য সব দেশের মতো সম্পূর্ণ লকডাউন জারি করতে৷

আমরা আর কবে সচেতন হবো?