ছাড় দিতে রাজি
১০ ডিসেম্বর ২০১৩তারানকো মঙ্গলবার বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে৷ ঢাকার গুলশানে ইউএনডিপির এক কর্মকর্তার বাসায় তারানকো দুই মহাসচিবকে এক সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করেন৷ দুপুরে এই বৈঠকের পর দুই মহাসচিব অবশ্য বৈঠকের বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি৷ তবে ধারণা করা হচ্ছে দুই দলের মধ্যে তারানকো দূরত্ব কিছুটা কমিয়ে আনতে পেরেছেন৷ তাই বৈঠকের পরই মঙ্গলবার তাঁর ঢাকা ত্যাগের সিদ্ধান্ত বাতিল করে সফর সময় আরো ২৪ ঘণ্টা বাড়ানো হয়৷ আর মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তারানকোর নির্ধারিত বৈঠকটি হবে বুধবার৷ একই সঙ্গে মঙ্গলবার বিকেলে তারানকোর সংবাদ সম্মেলনও বাতিল করা হয়৷ তবে এক বিবৃতিতে তারানকো বলেছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে৷ দুই দলই ছাড় দিতে রাজি হয়েছে, রাজি হয়েছে আলোচনা করতে৷ বুধবার এ বিষয়ে তিনি আরো বিস্তারিত জানানোর কথা বলেছেন৷
জানা গেছে তারানকো সংবিধানের মধ্যে থেকেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধানে সমঝোতার চেষ্টা করছেন৷ চূড়ান্ত সমঝোতা না হলেও দূরত্ব কমিয়ে দুই দলকে কিছু বিষয়ে সমঝোতার জন্য আলোচনার টেবিলে নিয়ে আনতে চাইছেন তিনি৷ তবে এজন্য সময় খুব বেশি নেই৷ কারণ ১৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন৷ এই সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে সমঝোতা জটিল এবং কঠিন হয়ে উঠবে৷
প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা কমিয়ে তাঁর অধীনেই জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণে নির্বাচনের একটি ফর্মুলা নিয়ে কাজ করছেন তারানকো৷ তবে এনিয়ে আওয়ামী লীগ এখনই সংলাপ শুরুর ব্যাপারে নমনীয় হলেও বিএনপি রাজি নয়৷ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কোনোভাবেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে নির্বাচনে রাজি নন৷ এই বিপরীতমুখী অবস্থানের ভেতর তারানকো নতুন কোন ফর্মুলায় দূরত্ব ঘোচানোর চেষ্টা করছেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷
প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা কমিয়ে তাঁর অধীনেই নির্বাচনের প্রস্তাব প্রথম দেয় সুশীল সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধি৷ ২৬ নভেম্বর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সুশীল সমাজের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন৷ জাতিসংঘ দূত, এর সঙ্গে, নির্বাচনের সময় জাতিসংঘের বড় আকারের পর্যবেক্ষক দল পাঠিয়ে নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের কথা বলছেন৷
২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করা সুশীল সমাজের অন্যতম প্রতিনিধি সুজন-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁরা কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ এরমধ্যে একটি প্রস্তাব ছিল প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা খর্ব করে তাঁর অধীনেই নির্বাচনকালীন সরকার গঠন৷ তিনি জানান, তাঁরা প্রস্তাব করেন ‘রুলস অব বিজনেস' সংশোধন করে প্রধানমন্ত্রীসহ পুরো মন্ত্রিসভার নির্বাচনকালীন কাজকে আসলেই রুটিন কাজে পরিণত করা, আর মূল ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দেয়া৷ তাঁর মতে, এটা সম্ভব হলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে রেখেই নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন সম্ভব৷ আর এটা নির্বাচনকালীন সংকটের একটা স্থায়ী সমাধানও হতে পারে৷ তিনি মনে করেন এ বিষয় নিয়ে সংলাপ করা যেতে পারে৷
তারানকো ঢাকায় আসেন শুক্রবার রাতে৷ এরপর তিনি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন৷ যাদের সঙ্গে প্রয়োজন তাঁদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকও করেছেন৷ বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও তাঁর দু'বার বৈঠক হয়েছে৷ আর বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় দফা বৈঠক হবে৷ এই বৈঠকের পরই জানা যাবে তারানকোর চেষ্টা সফল হলো কিনা, রাজনৈতিক সমঝোতা-সংলাপের কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা৷