1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দীর্ঘ চল্লিশ বছর ডাব স্পর্শ করেন না মুক্তিযোদ্ধা লক্ষী

৮ নভেম্বর ২০১১

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মুক্তিযোদ্ধা কমলা রানী কর ওরফে লক্ষী৷ শহীদ এক মুক্তিযোদ্ধার করুণ স্মৃতি আজো কাঁদায় তাঁর হৃদয়৷ এমনকি সেই ঘটনা থেকে এখন পর্যন্ত ডাবের পানি স্পর্শ করেন না তিনি৷

https://p.dw.com/p/136eX
‘আমরা তোমাদের ভুলবো না...’ছবি: AP

‘‘একদিন বিকেলে আমাদের দায়িত্ব শেষ হচ্ছে৷ আমরা বাড়ির দিকে রওয়ানা দেব৷ এমন সময় একটি অ্যাম্বুলেন্স আসল৷ ফলে আমরা একটু দাঁড়ালাম ঘটনা জানার জন্য৷ দেখি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের এক আহত মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে আসা হয়েছে৷ অ্যাম্বুলেন্সে ভারতীয় সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক এবং সেবিকাও ছিলেন৷ আসলে ঐ মুক্তিযোদ্ধার অবস্থা ছিল খুব আশঙ্কাজনক৷ সম্মুখ যুদ্ধে একটি গোলা তাঁর বুকে এসে লাগে৷ ফলে সামনে দিয়ে গোলাটি ঢুঁকে পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়৷ এমনকি গোলার আঘাতে তাঁর ফুসফুসও পেছন দিকে চলে গিয়েছিল৷ সেই মুক্তিযোদ্ধা মা মা বলে চিৎকার করছিলেন এবং ডাবের পানি খেতে চাচ্ছিলেন৷ কিন্তু আমাদের যেহেতু তখন দায়িত্বের পালা শেষ তাই আমাদেরকে চলে আসতে হলো৷ অন্যান্য যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা তাঁকে দেখাশোনা করতে লাগলেন৷ আমাদের ব্যাচের এবং সূর্যমনি নগর শিবিরের আমরা চার জন ছিলাম৷ আমরাও সেসময় শরণার্থী শিবিরে থাকি৷ সবকিছু মিলিয়ে আমাদের কাছেও তেমন অর্থবিত্ত ছিল না৷ আমরা ২৫ পয়সা করে চাঁদা দিলাম৷ সেই টাকা দিয়ে একটি ডাব কিনে তাঁর জন্য নিয়ে গেলাম৷ কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখলাম সেই যোদ্ধা মারা গেছেন৷ শহীদ হয়েছেন তিনি৷ এই যে দুঃখ, স্মৃতি আমার অন্তরে এমনভাবে আঘাত করল যে, সেই মুক্তিযুদ্ধ থেকে এখন পর্যন্ত ডাবের পানি আমি স্পর্শ করি না৷ ডাবের পানি কিংবা ঐ ধরণের পানীয় আমি বর্জন করি এবং ডাব দেখলেই সেই গৌরাঙ্গ বল্লভ হাসপাতালের স্মৃতি আমার চোখের সামনে ভাসে৷''

এভাবেই ডয়চে ভেলের কাছে মুক্তিযুদ্ধের করুণ স্মৃতি তুলে ধরলেন মুক্তিযোদ্ধা কমলা রানী কর৷ অবশ্য লক্ষী নামেই তিনি সমধিক পরিচিত৷ বাবা নলিনী রঞ্জন কর এবং মা আশা লতা কর৷ মুন্সিগঞ্জ জেলায় ১৯৫৭ সালের ০৭ আগস্ট জন্ম কমলা রানীর৷ পিতার চাকুরির সুবাদের নারায়ণগঞ্জেই বড় হয়েছেন৷ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাক বাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ শুরুর সময় দশম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন তিনি৷ তবে ছাত্র ইউনিয়নের সাথে জড়িত ছিলেন বলে স্কুল জীবন থেকেই রাজনীতি এবং অধিকার সচেতন কমলা রানী৷

Bangladesh Unabhängigkeitsbewegung Flash-Galerie
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনারা...ছবি: Public domain

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বাবা-মা'র সাথে গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জে চলে যান৷ কিন্তু পাক বাহিনী তাঁদের গ্রামেও হানা দিলে ভারত পাড়ি দেন কমলা রানী৷ প্রথমে সূর্যমনি নগর শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় গ্রহণ করেন তাঁরা৷ সেখানে যাওয়ার পরই স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ত্রাণ সংস্থা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাথে কাজ শুরু করেন৷ এসময় বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে দুধ, বিস্কুট, খাবার বিতরণসহ প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ করেন৷

এরপর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য অস্ত্র চালনা প্রশিক্ষণের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন কমলা৷ কিন্তু সেসময় বিভিন্ন অভিযানে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামসহ সহযোগী দল পাঠানোর কথা চিন্তা করা হয়৷ ফলে তাঁকে নার্সিং প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত করা হয়৷ প্রশিক্ষণ শেষs আগরতলার গৌরাঙ্গ বল্লভ তথা জিবি হাসপাতাল এবং ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ছিলেন৷ ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত তিনি মুক্তিযুদ্ধের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন৷ চিকিৎসা সেবাসহ বিভিন্ন কাজে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন কমলা রানী৷

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে শিক্ষকতা পেশায় জড়িত ছিলেন তিনি৷ সম্প্রতি অবসর গ্রহণ করেছেন৷ তবে তিনি দীর্ঘ চল্লিশ বছর যাবত বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাথে জড়িত থেকে সমাজসেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান