সরকার ও পুলিশের মধ্যে সংঘাত চরমে
২১ জানুয়ারি ২০১৪কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে ধর্ণা দিতে যাবার পথে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও তাঁর চারজন মন্ত্রীকে আটকে দেয় দিল্লি পুলিশ৷ পুলিশের বক্তব্য, ২৬শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে গোটা রাজপথ এলাকায় ১৪৪ ধারা বলবৎ৷ তাই সেখানে জমায়াত নিষিদ্ধ৷ ধর্ণার স্থল অন্যত্র, অর্থাৎ যন্তরমন্তরে সরিয়ে নিয়ে যেতো বলা হয়৷ লাউডস্পিকারের তার কেটে দেয় পুলিশ৷ এ নিয়ে আম আদমি পার্টির সমর্থক এবং পুলিশের মধ্যে বচসা হয়, শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি৷ মধ্যদিল্লির চারটি মেট্রো স্টেশন বন্ধ রাখা হয়৷ যার ফল, নিত্যযাত্রিদের হয়রানির একশেষ৷
কিসের জন্য ধর্ণা? দক্ষিণ দিল্লির একটি স্থানে যেখানে মূলত আফ্রিকান বসতি, সেখানে নাকি চলে ড্রাগ ও দেহ ব্যবসা৷ দিল্লির আইনমন্ত্রী সোমনাথ ভারতী মধ্যরাতে সেখানে দাঁড়িয়ে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারকে ঐ সব বাড়িগুলিতে হানা দেবার নির্দেশ দেন৷ পুলিশ অফিসার সে কথায় কান না দিয়ে উল্টে মন্ত্রীকে তল্লাসি ওয়ারেন্ট দেখাতে বলেন৷ তথ্যপ্রমাণ ছাড়া স্রেফ মন্ত্রীর কথায় তল্লাসি চালানো সম্ভব নয় বলে পুলিশকর্তা৷ এরপর মন্ত্রী স্বয়ং তাঁর দলবল নিয়ে সেই সব বাড়িতে তল্লাসি চালান৷ মন্ত্রী ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ, আফ্রিকান মহিলাদের তাঁরা নাকি বাড়ি থেকে বের করে দেন এবং মহিলাদের বিরুদ্ধে কটুক্তি করেন৷ বর্ণবিদ্বেষী কথাবার্তা বলেন৷ দিল্লির উপ-রাজ্যপালের কাছে এই রকম রিপোর্টই নাকি পুলিশ দিয়েছে৷
দিল্লি সরকারের মন্ত্রীর নির্দেশ কি অমান্য করতে পারে পুলিশ? এক অর্থে পারে৷ কারণ জাতীয় রাজধানি কেন্দ্র-শাসিত৷ দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে, দিল্লি সরকারের অধীনে নয়৷ যদিও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আইন-শৃঙ্খলা রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারেই পড়ে৷ আম আদমি পার্টি সরকারের অভিযোগ দিল্লির রাস্তাঘাটে মহিলা হেনস্থা বা ধর্ষণের ঘটনা যেভাবে বাড়ছে, তা বন্ধ করতে দিল্লি পুলিশ সহযোগিতা করছে না৷ ড্রাগ, দেহ ব্যবসা, ধর্ষণ ইত্যাদির মতো ঘটানা ঘটে চলেছে দিল্লির বুকে আর পুলিশ জানে না, এটা মানা যায় না৷ নির্দেশ দেয়া সত্ত্বেও মন্ত্রীর আদেশ অগ্রাহ্য করতে পুলিশ সাহস পায় কী করে? জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল৷ তাঁর দাবি, অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারকে হয় সাসপেন্ড করা হোক, না হয় বদলি করা হোক৷ মহিলাদের নিরাপত্তা রক্ষায় পথে নেমেছে আম আদমি পার্টি৷ এর হেস্থনেস্থ করেই ছাড়বো৷ দরকার হলে দিনের পর দিন ধর্ণা চলবে৷ কেন্দ্রীয় স্বার্ষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্ডের বক্তব্য তদন্ত শেষ না হলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয়৷ আর দিল্লি পুলিশকে দিল্লি সরকারের অধীনে আনার প্রশ্নই নেই, বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷
আম আদমি পার্টি সরকারের এই আচরণের সমালোচনা কোরেছে বিভিন্ন মহল৷ কংগ্রেসের তরফে বলা হয়েছে, কেজরিওয়ালের উচিত এইসব ‘‘নাটকবাজি'' বন্ধ করে প্রশাসনের দিকে নজর দেয়া৷ আন্না হাজারের সমর্থক দিল্লি পুলিশের প্রাক্তন শীর্ষ অফিসার কিরণ বেদি মনে করেন, এক উচ্ছৃঙ্খল রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনে চলছে দিল্লি সরকার৷ এটাকে প্রশাসন বলে না৷ ওদিকে পর্যবেক্ষক মহল বলছে, আগামী সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত চলবে আম আদমি পার্টির এই কৌশল নীতি৷