দামের চাকায় পিষ্ট বাংলাদেশের মানুষ
২০ নভেম্বর ২০২২কম কিনে, কম খেয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে৷ কেউ কেউ মাংস খাওয়া ছেড়েই দিয়েছেন৷ সরু চাল থেকে নেমে এসেছেন মোটা চালে৷
সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশনের(টিসিবি) হিসাবই বলছে চিনি, তেল, চাল, ডাল, আটা, ডালসহ নিত্যপণ্যের দাম আরো এক দফা বেড়েছে৷
এক সপ্তাহে মোটা চাল কেজিতে বেড়েছে দুই টাকা, আটার দাম বেড়েছে তিন টাকা, মসুর ডাল বেড়েছে পাঁচ টাকা আর সয়াবিন তেল বেড়েছে লিটারে ১২ টাকা, চিনি বেড়েছে ১৩টাকা৷ সরকার ঘোষণা দিয়ে তেল ও চিনির দাম বাড়ানোর পর বাজারে এই দুইটি পণ্যের সংকট তৈরি হয়েছে৷
অভিযোগ ব্যবসায়ীরা আরো দাম বাড়ানোর টার্গেট নিয়ে পণ্য মজুত করে রাখছে। সরকার ওএমএসের আটার দামও কেজিতে ছয় টাকা বাড়িয়েছে৷
টিসিবির হিসাবে, ২০২১ সালে সয়াবিন তেলের লিটার ছিল ১৫৩ টাকা আর এখন লিটার ১৯০ টাকা আর ২০২০ সালে ছিল ১১৪ টাকা৷ চিনি গত বছর কেজি ছিল ৭৮ আর এখন ১০৮ টাকা৷ ২০২০ সালে ছিল ৬৮ টাকা৷
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ(সিপিডি) গত অক্টোবরে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাজারে অনেক পণ্যের দাম শতকরা ২০ থেকে ৫০ ভাগ বেড়েছে৷ ঢাকায় চারজনের একটি পরিবারের অক্টোবর মাসের খাবারের হিসাব তুলে ধরে সিপিডি জানায়, মাছ ও কোনো প্রকার মাংস না খেলে ওই পরিবারকে মাসে খাবার কিনতে খরচ করতে হয় গড়ে নয় হাজার ৫৯ টাকা৷ এর সঙ্গে মাছ ও মাংস যুক্ত হলে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২২ হাজার ৪২১ টাকা৷গত এক মাসের ব্যবধানে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে৷
টিসিবির দামে বাস্তবে কোনো পণ্য নেই
টিসিবির যে পণ্য তালিকা ও দাম আছে তা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় তাদের তালিকাভুক্ত ১০৭টি ভোগ্য পণ্যের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগের দামই নতুন করে বেড়েছে৷ আর এই বৃদ্ধির হার পাঁচ থেকে ২০ ভাগ৷
অন্যদিকে বাস্তবে টিসিবি যে দাম লিখে রাখে সেই দামে কোথাও পণ্য পাওয়া যায় না৷ দাম তার চেয়ে বেশি৷ যেমন টিসিবি বলছে গরুর মাংসের কেজি ৬৬০ টাকা কিন্তু ৭০০ টাকার নিচে ঢাকায় কোথাও গরুর মাংস নেই৷ টিসিবির দামের সঙ্গে বাজারে কোথাও মিল পাওয়া যাচ্ছেনা৷
কলবাগানের দোকানদার মিন্টু মিয়া জানান, বাজারে এখন সরু চালের কেজি ৮৫ টাকা, প্যাকেট আটা কেজি ৭৫ টাকা, মসুর ডাল কেজি ১৬০ টাকা, পেঁয়াজ ৬০ টাকা, রসুন ১৬০ টাকা কেজি৷ কিন্তু টিসিবি বলছে সরু চাল কেজি ৭২ টাকা, আটা ৬৫ টাকা, মসুর ডাল ১৪৫ টাকা , পেঁয়াজ ৪৫ এবং রসুন ১৩০ টাকা৷ প্রতিটি পণ্যের দাম সিবির লেখা দামের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ ভাগ বেশি৷
মিন্টু মিয়া জানান," এখন প্যাকেটজাত চিনি বাজারে নেই৷ আর সয়াবিন তেলও চাহিদা মত পাওয়া যায়না৷ এই দুইটি পণ্যের দাম নাকি আরো বাড়বে৷”
"গরুর মাংস খাই না তিন মাস”
পরিস্থিতি সামলাতে সাধারণ মানুষ এখন ভোগ্যপণ্যের ব্যবহার কমিয়েছে।তারা মাছ, মাংস খাওয়া বাদ দিচ্ছে৷ নাজমুল হক তপন নামের একজন বেসরকারি কর্মী বলেন," আমাদের পরিবারে গত তিন মাস ধরে গরুর মাংস খাওয়া হয় না৷ মুরগির মাংসও বলতে গেলে খাইনা৷ যা আয় তা দিয়ে গরুর মাংস কেনা সম্ভব নয়৷ মাছ খাই৷ তবে যেসব মাছের দাম কম যেমন তেলাপিয়া এগুলোই খাচ্ছি৷ বাজারে এখন সবজির দাম কমতে শুরু করেছে৷ যে সব সবজির দাম কম সেগুলো কিনি৷ ফুলকপির দাম বেশি তাই কিনি না৷ আমার বাচ্চাদের কারণে সরু চাল এখনো কিনছি৷ কিন্তু আর মনে হয় পারব না৷ শেষ পর্যন্ত মোটা চালই খেতে হবে৷”
তিনি বলেন, "গত দুই-তিন মানে ভোগ্যপণ্যসহ সব পণ্যের দাম ৪০-৫০ ভাগ বেড়েছে৷ কীভাবে যে টিকে থাকব জানিনা৷”
মানুষ অসহায়
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের(ক্যাব সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন," সরকার যে ভোজ্য তেল এবং চিনির দাম বাড়াল তার প্রতিক্রিয়া পড়েছে বাজারে৷ ওই পণ্যের দাম বাড়ায় অন্য পণ্যের দামও বেড়ে যাচ্ছে৷ ব্যবসায়ীরা মনে করে তারা বাড়ালে আমরা কেন বাড়াব না৷ এই প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে৷ ফলে প্রত্যেক জিনিসের দামই নিয়মিতভাবে বাড়ছে৷”
তার কথায়," সাধারণ মানুষ এখন অসহায়৷ তারা কম কিনে, কম খেয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্টা করছে৷ যারা খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করেন তাদের বিক্রি কমে গিয়েছে৷”