তোফায়েল আহমেদের আমল ও আমলাগণ
২৭ আগস্ট ২০২১তাই সংসদ সদস্য হয়েও তোফায়েল আহমেদের কাছে তার বর্তমান জীবন অনেক দুঃখের, অনেক কষ্টের৷
রাজনীতিতে অবসরের নির্দিষ্ট বয়সসীমা না থাকলেও তোফায়েলের এখনকার জীবনযাপন অনেকটা অবসর সময়ের মতোই৷ এমন অবস্থার জন্য তোফায়েল মনের অজান্তে বর্তমান রাজনীতিকে দায়ী করার চেষ্টা করেছেন৷ তার সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্যে এই প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ সরকারের কাছে আমলাদের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়া নিয়ে গত ২৮ জুন সংসদে হতাশা প্রকাশ করে বক্তব্য রেখেছেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য তোফায়েল আহমেদ৷ তার আরও পরিচয়ের মধ্যে আছে তিনি ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি ও উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি ছিলেন৷
সংসদে ঐ বক্তব্যের দুদিন আগে ডেইলি স্টারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তোফায়েল বলেছিলেন, রাজনীতি এখন রাজনীতিবিদদের হাতে নেই৷ বঙ্গবন্ধু সম্পর্কেও একটি উল্লেখযোগ্য মন্তব্য করেছিলেন তিনি৷ তোফায়েল বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু প্রকৃত রাজনীতিবিদদের বেছে বেছে মনোনয়ন দিয়েছেন৷ এক্ষেত্রে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছিলেন তিনি৷ ‘‘যদি সত্তরের নির্বাচনের কথা চিন্তা করি, টাকা নেই, পয়সা নেই৷ বঙ্গবন্ধু ঘুরছেন গ্রামে গ্রামে৷ আমি ভোলার অতি সাধারণ একজন মানুষ-রাজনৈতিক কর্মী, তাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন৷ বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা করে, মানুষের ভালোবাসা আদায় করে নির্বাচনে জিতিয়ে এনেছেন,'' সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তোফায়েল৷
ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী, সাংসদদের অবস্থান আমলাদের উপরে৷ কারণ সাংসদরা ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন৷ কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে সেটা হয়নি৷ নির্বাচনের আগে আমলা ও গোয়েন্দারা কীভাবে অনায়াসে নির্বাচনে জেতা সম্ভব, সেই ছক আওয়ামী লীগের সামনে পেশ করেছিলেন৷ আর আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসার লোভে সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল৷ যার ফল এখন টের পাওয়া যাচ্ছে৷ আমলারা রাজনীতিকদের ঘাড়ের ওপর চেপে বসেছেন৷ কারণ যে আমলাদের আপনার পরামর্শ দেয়ার কথা, সেই আমলাদের পরামর্শই যদি আপনি গ্রহণ করেন তাহলে আমলারা আপনাকে মানবে কেন? আপনাকে গুরুত্ব দিবে কেন?
তোফায়েল আহমেদ, আপনার কি মনে হয়না নির্বাচনটা নির্বাচনের মতো হলে আজকে আপনাদের এই অবস্থায় পড়তে হত না? আপনার কি মনে হয় না, আমলারা একদিনে আজকের এই অবস্থায় আসেননি? তাদের ত্রাণ কার্যক্রমের দায়িত্ব কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে দিয়েছেন৷ কেন তিনি এমনটা করলেন, তা কি আপনি বুঝতে পারেননা? দিনের পর দিন মন্ত্রী, এমপিদের দুর্নীতি, লুটপাটের খবর সাধারণ ভোটাররা জানতে পেরেছেন৷ প্রধানমন্ত্রীর কাছে অবশ্যই এ সম্পর্কে আরও বেশি তথ্য আছে৷ তাই হয়ত তিনি আর নিজ দলের কর্মীদের উপর ভরসা রাখতে পারেননি৷
সুতরাং তোফায়েল আহমেদ, ভাবুন৷ প্রয়োজনে অন্যদের সঙ্গে কথা বলুন৷ এই পরিস্থিতি কীভাবে ঠিক করা যায় চিন্তা করুন৷ নিজ দলের কর্মীদের শুধু দল ক্ষমতায় থাকার মধু খাওয়া বন্ধ করে সত্যিকারের রাজনীতি চর্চা করতে বলুন৷ অন্য দলের নেতাকর্মীদেরও রাজনীতি করার সুযোগ দিন৷ আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করার প্রস্তুতি নিন৷ মনে রাখবেন রাজনীতিকদের সম্মান রাজনীতিকদের হাতে৷
আপনি বলেছেন, সত্তরের নির্বাচনের সময় বঙ্গবন্ধু প্রকৃত রাজনীতিবিদদের বেছে বেছে মনোনয়ন দিয়েছেন৷ কথা হচ্ছে, আপনি যদি জানেন, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে তখন আপনি পথে-ঘাটে-মাঠে রাজনীতি করা ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেবেন৷ আর যদি আপনি আগে থেকেই জানেন নির্বাচনটা কেমন হতে যাচ্ছে (যেমন ২০১৮ সালে) তখন মনোনয়ন কাকে দেয়া হচ্ছে, সেটা আর গুরুত্বপূর্ণ থাকে না৷ ফলে আগামী নির্বাচন যেন ২০১৮-র মতো না হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে৷ কিন্তু তোফায়েল আহমেদের মতো নেতারা কি পারবেন?