একসঙ্গে বেতন চান শ্রমিকরা
৪ আগস্ট ২০১৪তুবা গ্রুপের ১,৬০০ পোশাক শ্রমিক মে, জুন ও জুলাই – এই তিন মাসের বকেয়া বেতন এবং ভাতার জন্য ঈদের আগের দিন, অর্থাৎ ২৮শে জুলাই থেকে অনশন শুরু করেন৷ ঈদের আগে তাঁদের কয়েক দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েও বেতন-ভাতা দেয়া হয়নি৷ তুবা গ্রুপের মালিকসহ বিজিএমইএ নেতারা নানা অজুহাত তৈরি করে শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা আটকে দেন৷ বলেন, ব্যাংক ঋণ পাওয়া না যাওয়ায় বেতন দেয়া যায়নি৷ মালিক দেলোয়ার হোসেন জেলে থাকায় বেতন আটকে গেছে৷ অথচ তুবা গ্রুপের পাঁচটি পোশাক কারখানার উৎপাদন এবং রপ্তানি কখনোই বন্ধ থাকেনি৷
তুবা গ্রুপের রপ্তানি এবং ব্যাংকের হিসাব থেকে জানা যায় যে, গত জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত তারা মোট ৩৯ কোটি ২১ লাখ টাকার পোশাক রপ্তানি করেছে৷ গত তিন মাস মানে এপ্রিল, মে এবং জুন মাসে নিট আয় করেছে ৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা৷ এছাড়া গত তিনমাসে তুবা গ্রুপের পাঁচটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া বেতন হলো ৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা৷ তাই তুবা গ্রুপ চাইলে তাদের শ্রমিকদের বেতন দিতে পারত, কিন্তু দেয়নি৷
তুবা গ্রুপের মালিক দেলোয়ার হোসেন তাজরিন ফ্যাশানস-এরও মালিক৷ ২০১২ সালের ২৪শে নভেম্বর তাজরিন ফ্যাশানস-এ আগুনে ১১৩ জন শ্রমিক নিহত হন৷ সেই মামলায় জেলে যেতে হয় দেলোয়ারকে৷ শ্রমিক নেতারা জানান, সেই মামলায় জামিন পেতে এবং কারাগার থেকে বের হতে কৌশলে শ্রমিকদের বেতন আটকে তাঁদের মাঠে নামানো হয়েছে৷ প্রচার করা হয়েছে যে, মালিক দেলোয়ার কারাগার থেকে ছাড়া না পাওয়ায় বকেয়া বেতন দেয়া যাচ্ছে না৷ আর তাঁদের সেই উদ্দেশ্য সফলও হয়েছে৷
শ্রমিকদের টানা সাত দিন অনশনের মাথায় রবিবার সচিবালয়ে বিজিএমইএ নেতারা বণিজ্য, শ্রম এবং নৌ-পরিবহণ এই তিন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ঘোষণা দেন আগামী রবিবার ১০ই আগস্ট তুবা গ্রুপের শ্রমিকদের বকেয়া মে ও জুন মাসের বেতন দেয়া হবে৷ ১৬ই আগস্ট জুলাই মাসের বেতন দেয়া হবে৷ আর বকেয়া বোনাস দ্রুত পরিশোধের ব্যবস্থা করা হবে৷ বিজিএমইএ-র সহ সভাপতি এস এ মান্না কচি জানান, ‘‘এবার প্রতিশ্রুতি মতো শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হবে৷'' তবে সামর্থ্য থাকার পরও শ্রমিকদের কেন তিন মাসের বেতন দেয়া হয়নি সাংবাদিকরা জানতে চাইলে বিজিএমইএ সহসভাপতি বলেন, ‘‘তুবা গ্রুপের আয়-ব্যয়ের হিসাব তাঁর জানা নেই৷''
আন্দোলনরত শ্রমিকরা বিজিএমইএ-র এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন৷ একসঙ্গে পাওনা তিন মাসের বেতন ও বোনাস না দেওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা৷
গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, ‘‘আমরা বিজিএমইএ-র প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি৷ আমরা আমরণ অনশন চালিয়ে যাব৷''
তিনি জানান, ‘‘শ্রমিকদের তিন মাসের বাড়িভাড়া বাকি, দোকানে বাকি৷ তাঁরা ধার করে সংসার চালাচ্ছেন৷ তাঁদের পরিবারের ভরণপোষণ দিতে হয়৷ এ অবস্থায় দুই মাসের বেতন দেওয়ার যে প্রস্তাব তা অন্যায্য৷''
শ্রমিকরা অনশন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সোমবার বিকেলে সব গার্মেন্টস শিল্পাঞ্চলে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং মঙ্গলবার বিজিএমইএ ভবন ঘোরওয়ের কর্মসূচি দিয়েছেন৷ এদিকে গত সাত দিনের অনশনে ৯৭ জন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন৷ তাঁদের মধ্যে ২০ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷