1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘‌তিন তালাক'‌-‌মুক্ত হচ্ছে ভারত

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
২২ আগস্ট ২০১৭

‌ভারত থেকে বিদায় নিল তিন তালাক৷ সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের ৩৯৫ পাতার রায়ে বলা হয়েছে, আগামী ছ’মাসের মধ্যে সরকার নতুন আইন না আনলে তিন তালাক দেওয়া যাবে না৷ দিলে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া যাবে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷

https://p.dw.com/p/2idML
Symbolbild Indien Mitgift Massenhochzeit
ছবি: picture alliance/AP Photo

আদালতের দ্বারস্থ হলেই তালাক খারিজ হয়ে যাবে৷ মামলাটি চলেছিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জগদীশ সিং খেহরের নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চে৷ ভারতীয় মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত এই প্রথার বিরুদ্ধে একগুচ্ছ আবেদন জমা পড়েছিল শীর্ষ আদালতে৷ তিন তালাকের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন আফরিন রহমান, সায়রা বানু, ইসরাত জাহান, গুলশান পারভিন ও ফারহা ফয়েজ৷ জয় হলো তাঁদের৷

তবে রায় ঘোষণা নিয়ে পুরোপুরি ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারেনি পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ৷ পাঁচ সদস্যের মধ্যে তিন বিচারপতি ইউ ইউ ললিত, আর এফ নরিম্যান ও কুরিয়েন জোসেফ এই প্রথাকে ‘অসাংবিধানিক', ‘ইসলাম বিরোধী', ‘কোরান বিরুদ্ধ', ‘বে-‌আইনি' বলে মন্তব্য করেছেন৷ অন্যদিকে, প্রধান বিচারপতি জগদীশ সিং খেহর ও বিচারপতি এস আবদুল নাজির তিন তালাক প্রথাকে অ-‌ইসলামি ঘোষণার বিরুদ্ধে ছিলেন৷ যদিও, খেহর এবং নাজিরের মন্তব্য মানতে চাননি অপর তিন বিচারপতি৷

তানবীর নাসরিন

এই স্পর্শকাতর বিষয়ে আইন প্রণয়নে সুপ্রিম কোর্ট কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করবে না৷ গত মে মাসে টানা এক সপ্তাহ ধরে ম্যারাথন শুনানির পর রায়দান স্থগিত রাখা হয়েছিল৷ এই রায় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পীযূষকান্তি রায় বলছেন, ‘‌‘তিন তালাক প্রথাটি তুলে দেওয়া নিয়ে ‌সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কোথাও কোনো দ্বন্দ্ব নেই৷ তাছাড়া সংবিধানের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী, সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতি যে রায় দেবেন সেটাই রায় হিসেবে গণ্য হবে৷'‌'

এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের রায়কে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরযেওয়ালা থেকে শুরু করে বলিউড অভিনেত্রী শাবানা আজমিসহ অনেকেই সমর্থনের পাশাপাশি দীর্ঘ আইনি লড়াই যাঁরা চালিয়েছেন তাঁদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন৷ তাৎপর্যপূর্ণভাবে শীর্ষ আদালত কিন্তু তিন তালাককে ‘‌অসাংবিধানিক'‌ বলা নিয়ে দ্বিমত তৈরি হয়েছে৷ প্রধান বিচারপতি খেহরের মন্তব্য,  তিন তালাক সুন্নিদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাঁদের সংস্কৃতির পক্ষে জরুরি৷

পীযূষকান্তি রায়

এই প্রথা সংবিধানের ২৫,২৪ ও ২১ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করছে না৷ ব্যক্তিগত আইন মেনে চলা এই প্রথা সাংবিধানিক নিয়মনীতি দেখিয়ে বিচারবিভাগীয় হস্তক্ষেপে বন্ধ করা যায় না৷ যদি তা করতে হয়, তবে সংসদকে এগিয়ে আসতে হবে বলে এদিন জানিয়েছে শীর্ষ আদালত৷

সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়েছে, মুসলিম সমাজে বিবাহবিচ্ছেদ কীভাবে হবে, তা নিয়ে বিকল্প আইন তৈরি করা দরকার৷ কিন্তু আইন তৈরির দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকার এবং সংসদের৷ তাই কেন্দ্রের উপর সেই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে আদালত৷ এ বিষয়ে কেন্দ্রকে সংসদে আলোচনা করে ছ’মাসের মধ্যে আইন তৈরি করতে বলেছে বেঞ্চ৷ এদিনের রায়ের পর ভারত-‌পাকিস্তান-‌বাংলাদেশ একই তালিকায় চলে এলো৷

মুসলিম সম্প্রদায়ের মহিলাদের সুবিচার পাইয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ‘‌প্রগতিশীল মুসলিম সমাজ'‌, ‘‌রিফর্মিং মুসলিম সোসাইটি'‌ এবং ‘‌সেকুলার মিশন'‌-‌এর মতো সংগঠনগুলি৷ এঁদের পক্ষে তানবীর নাসরিন জানালেন, ‘‌‘‌এ রায় ঐতিহাসিক৷ প্রাচীন অমানবিক প্রথার অবসান হলো৷ দীর্ঘ লড়াইয়ের জয় হলো৷ কিন্তু, সেই সঙ্গে সরকার যে নতুন আইন আনবে, তার ওপর নজর রাখতে হবে৷ সেই অর্থে আসল লড়াই শুরু হলো৷'‌

তিন তালাককে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে আবেদনের প্রেক্ষিতেই বিষয়টির বিচার শুরু করে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ৷ সুপ্রিম কোর্ট মামলাকারী এবং বিরোধী অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল'‌ বোর্ডের বক্তব্য শুনেছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্যও শোনা হয়েছে৷ গত মে মাসের ১১ তারিখ থেকে শুরু হয় শুনানি পর্ব৷ টানা ছয় দিন ধরে চলে শুনানি৷ তারপর গত ১৮ মে এই বিষয়ে রায়দান স্থগিত রেখেছিল আদালত৷ এই ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের বিষয় নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি৷ এমনকি সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা জমা দিয়ে তিন তালাক প্রথায় আদালতের হস্তক্ষেপ ঠেকানোর শেষ চেষ্টা করেছিল অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল'‌ বোর্ড৷

তিন তালাক প্রথার প্রয়োগ মুসলিমদের মধ্যে এমনিতেই কমে এসেছে বলে আইনজীবী কপিল সিবাল আদালতে দাবি করেছিলেন৷ আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করলে তার ফল উলটো হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তিনি৷ সেসব আশঙ্কা উড়িয়ে আজ এক ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করল সুপ্রিম কোর্ট৷ রায় ঘোষণার পর এআইএমপিএলবি জানিয়েছে, পরবর্তী কর্মপন্থা ঠিক করতে ১০ সেপ্টেম্বর তারা বৈঠকে বসবে৷

এখন প্রশ্ন, ছ'মাসের মধ্যে কেন্দ্র যদি আইন তৈরি করতে না পারে তা হলে কী হবে? এ প্রসঙ্গে আইনজীবীদের বক্তব্য, যেহেতু বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মত তিন তালাকের বিরুদ্ধে গেছে, ফলে পরিস্থিতি বদলের কোনো সম্ভাবনা নেই৷ ছ’মাসের মধ্যে বিকল্প আইন তৈরি না হয়, সেক্ষেত্রে সময় বাড়ানোর জন্য আদালতে আবেদন জানাতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার৷

বন্ধু, আপনি তিন তালাক প্রথাকে কি সমর্থন করেন? জানান আপনার মন্তব্য, নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য