‘তারা চাইলে হলগুলোর ভাড়া সম্পূর্ণ ফ্রি করে দেবো’
২ অক্টোবর ২০২০ডয়চে ভেলে : করোনার কারণে তো সবকিছু বন্ধ ছিল৷ এখন কি সাংস্কৃতিক অঙ্গন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে?
কে এম খালিদ : দেখুন এই মহামারি তো শেষ হয়নি এখনো৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা দেশের স্বাস্থ্য বিভাগও বলছে, দ্বিতীয় ওয়েব শুরু হতে যাচ্ছে৷ এই অবস্থায় এখন ফেরা কঠিন৷ তারপরও দেশে যেহেতু সকল কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে, তাই আমরাও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছি৷ তবে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে যতটুকু করা যায়৷
সিনেমা হল খোলার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে?
সিনেমা হলগুলো খোলার সিদ্ধান্ত তো আমরা নেই না৷ তথ্য মন্ত্রণালয় নেয়৷ তারপরও আমরা যতটুকু জেনেছি তারা খোলার সিদ্ধান্ত দিয়েছে৷ তবে দিন-তারিখ আমি জানি না৷
সাংস্কৃতিক অঙ্গনের স্বাভাবিকতা ফেরাতে সরকার কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?
দেখুন, কোভিড নিয়ন্ত্রণে যদি ভ্যাকসিন বের না হয়, তাহলে তো স্বাভাবিক হওয়া খুব কঠিন৷ কারণ, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড মানেই জনসমাগম৷ আর জনসমাগম মানেই কোভিডকে আমন্ত্রণ করা৷ ফলে ভ্যাকসিন বের না হওয়া পর্যন্ত সম্পূর্ণ স্বাভাবিক করা আসলেই কষ্টসাধ্য৷
সিনেমা হল খুললেও নতুন সিনেমা কি এই সময়ে তৈরি হয়েছে?
কোভিডের মধ্যে কোনো নতুন সিনেমা হয়নি৷ তবে দেখেছি, কিছু সিনেমার শ্যুটিং শুরু হয়েছে৷
সিনেমা হলে দর্শকদের জন্য কী ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে?
সবকিছুই স্বাস্থ্যবিধি মেনে করা হবে৷ এর বাইরে তো সুযোগ নেই৷ আর যেহেতু বন্ধ ঘরে ছবি দেখতে হবে, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করতে হবে এখানে তো আরো কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে৷
মঞ্চ নাটকগুলো কি আবার শুরু হয়েছে?
হ্যাঁ, মঞ্চ নাটকও শুরু হয়েছে৷
করোনার সময় নাটক-সিনেমা বন্ধ থাকলেও অনেকেই ফান ভিডিও তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন৷ এসব কি সুস্থ্ বিনোদনের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে?
এই সময়টাতে তো সবাই ঘরে ছিলেন৷ আসলে সুস্থ বিনোদন তো সব সময়ই সুস্থ৷ আর যদি সেটা সুস্থ না হয়, তাহলে সেটা তো আমাদের সবার জন্য বেদনাদায়ক৷
এখন নতুন করে ওয়েব সিরিজ আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে৷ এটা নিয়ে সরকারের ভাবনা কী?
আপনি তো জানেন, কিছু ওয়েব সিরিজ নিয়ে ভীষণভাবে আপত্তি উঠেছে৷ এই ধরনের অশ্লীল দৃশ্য সম্বলিত ওয়েব সিরিজগুলোর আমরা সবসময় নিন্দা জানাই৷ শুনেছি কিছু কিছু নির্মাতা তাদের কাজগুলো সরিয়ে নিয়েছে৷
নতুন যেগুলো হচ্ছে, সেগুলোর ব্যাপারে আপনাদের কোনো নির্দেশনা আছে?
এই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ ও চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি আমরা৷ এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি৷
এখন অনেক জনপ্রিয় অভিনেতাকেও ছোট্ট একটি ক্লিপ তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমে ছাড়তে দেখা যাচ্ছে...
(করোনার সময়ে) এর বাইরে তো কোনো সুযোগ ছিল না৷ আমরাও তো ঘরে বসে জুমে মিটিং করেছি৷ ওয়েবিনার করেছি৷ ছোট ছোট সভা করেছি৷ এমনকি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও করেছি৷ সবকিছুই তো আমরাও ভার্চুয়ালি করেছি৷ এর বাইরে তো কিছু করার সুযোগ ছিল না৷
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্থকেই মূল উপার্জন মনে করছেন তারা৷ এতে কি মূলধারার বিনোদন ক্ষতিগ্রস্থ হবে?
ইতিমধ্যেই তো ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গেছে৷ হয়তো সময় লাগবে৷ কিন্তু কোভিড-উত্তর সবকিছু আমরা আগের ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবো বলেই আশা করছি৷
করোনার মধ্যে অনেক শিল্পী অসহায় অবস্থায় পড়েছেন৷ সরকার কি তাদের কোনো আর্থিক সহযোগিতা করেছে?
আমরা সারা বাংলাদেশের প্রায় ১২ হাজার শিল্পীকে আর্থিক অনুদান দিয়েছি৷ পরিমাণ হয়তো খুব বেশি নয়, কিন্তু অর্থের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এটাকে তাদের এক ধরনের স্বীকৃতি বলেই আমি মনে করি৷
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কী ধরনের সুবিধা দিয়েছেন?
সংগঠনগুলো যেন কার্যক্রম চালাতে পারে, সে কারণে আমরা তারা যে হলে কাজ করে, সেই হলগুলোর ভাড়া অর্ধেক তো করবোই৷ তারা চাইলে সম্পূর্ণ ফ্রি-ও করে দেবো, যাতে তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেন৷
অনেক সিনেমা হলেও আমরা দেখেছি, করোনার সময় কর্মচারীদের বেতন হয়নি৷ তাদের জন্য কি আপনারা কিছু করেছেন?
এটা আসলে তথ্য মন্ত্রণালয়ই বলতে পারবে, তারা কোনো সহযোগিতা করেছে কিনা৷
সাংস্কৃতিক অঙ্গনের যে প্রাতিষ্ঠানিক জায়গা আছে, সেখানে কতটুকু সহযোগিতা করেছেন?
আমাদের যে শিল্পকলা একাডেমি আছে, সেখানে আমরা কাজ করা শুরু করবো৷ পাশাপাশি প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর আমরা খুলে দিয়েছি, জাদুঘর খুলে দিয়েছি, যদিও সীমিত আকারে খুলেছি৷ এগুলোতে দর্শনার্থী যেতে পারবেন, কিন্তু সীমিত আকারে৷
মানসম্মত নাটক বা সিনেমা তৈরিতে সরকারি কোনো পদক্ষেপ আছে?
আপনারা তো জানেন, সেই কাজটা আমরা সবসময়ই করি৷ সিনেমার কথা আমি বলতে পারবো না৷ এটা তথ্য মন্ত্রণালয় বলতে পারবে৷ তারপরও আমি জানি, তারা সিনেমায় অনেক ভর্তুকি দিয়ে থাকে৷ অনেক সময় পুরো সিনেমার খরচও সরকার অনুদান হিসেবে দিয়ে থাকে৷
ভালো নাটক তৈরিতে আপনাদের ভূমিকা কী?
টিভি নাটক আমার সঙ্গে সম্পৃক্ত না৷ মঞ্চ নাটকের কথা আমি বলতে পারি৷ আমি তাদের ভর্তুকি দিচ্ছি এবং আরো ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷
মঞ্চ নাটকের শিল্পীরা কি আপনাদের কাছে কোনো দাবি জানিয়েছেন?
না, তেমন কোনো দাবি করেনি৷ তাদের দাবি একটাই, ‘‘আমরা শুরু করতে চাই৷’’ সে কারণেই তো আমরা সীমিত আকারে খুলে দিয়েছি সবকিছু৷
স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা সেটা আপনারা কিভাবে মনিটরিং করছেন?
এটা যখন অনুমতি দেওয়া হয় তখন আমরা বলে দেই৷ এবং যেখানে অনুষ্ঠান হয় সেখানে কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়৷ যেখানে হল আছে, সেখানেই তো আমাদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে৷ তারা কিন্তু এগুলো দেখেন৷ দর্শকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসছেন৷ এমনকি যেসব শিল্পী অংশ নিচ্ছেন তারাও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন৷