ডয়চে ভেলের পুরস্কার পেলেন মেক্সিকোর সাংবাদিক
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯মেক্সিকোতে জন্ম নেয়া হার্নান্দেজ ১৯৯৩ সালে তাঁর সাংবাদিকতার ক্যারিয়ার শুরু করেন৷ তিনি মেক্সিকোর বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা ও মাদক মাফিয়াদের মধ্যকার যোগাযোগ নিয়ে লিখেছেন৷ সেজন্য তাঁকে মূল্যও দিতে হয়েছে৷ এখন তিনি ইউরোপে গা ঢাকা দিয়ে আছেন৷ তিনি ও তাঁর পরিবার অনেকবার মৃত্যুর হুমকি পেয়েছেন৷ তাই মেক্সিকো ছাড়তে হয়েছে তাঁকে৷
২০১২ সালে ‘গোল্ডেন পেন অফ ফ্রিডম’ পুরস্কার নেবার সময়ে দেয়া এক বক্তব্যে হার্নান্দেজ বলেছিলেন, ‘‘মেক্সিকোর ইতিহাসের এমন নাটকীয় সময়ে চুপ থাকা মানে পুরুষ, নারী ও শিশু; সুশীল সমাজের মানুষ ও মানবাধিকার কর্মী; সরকারি কর্মকর্তা ও সাংবাদিক- সবার মৃত্যু৷’’ আবার এই নিরবতা ভাঙতে গেলেও থাকে জীবন হারানোর ঝুঁকি, যোগ করেছিলেন তিনি৷
২০০১ সালে হার্নান্দেজের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধানী কাজটি প্রকাশিত হয়৷ দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিসেন্তে ফক্সের ওপর করা সেই প্রতিবেদনটি জাতীয় সাংবাদিকতা পুরস্কার জিতে নেয়৷ কিন্তু এরপর যে পত্রিকায় তিনি কাজ করতেন সেখানে তাঁর আর কোনো লেখা না ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷
২০০৩ সালে হার্নান্দেজ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় মেক্সিকোর মেয়েদের দাসত্ব ও যৌন নিপীড়ন নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেন এবং ইউনিসেফের সম্মাননা পান৷ এরপর পাঁচ বছর গবেষণা করে ২০১০ সালে ‘দ্য মেক্সিকান ড্রাগ লর্ডস অ্যান্ড দেয়ার গডফাদার্স’ শীর্ষক একটি বই প্রকাশ করেন, যার ইংরেজি অনুবাদ বের হয় ২০১৩ সালে৷ বইতে তিনি দেখিয়েছেন মাদক সম্রাটদের সঙ্গে দেশটির ব্যবসায়ী, সামরিক কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদরা কীভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন৷ তাঁর এই বই বেস্টসেলার হয়েছিল৷
হার্নান্দেজ অসংখ্যবার মৃত্যুর হুমকি পেয়েছেন৷ তাঁর ঘরের সামনে পশুর মাথা কাটা দেহ ফেলে রাখা হয়৷ এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘পরিতাপের বিষয়, এসব হুমকি আসে দেশের প্রশাসনের কাছ থেকে, দেশের সর্বোচ্চ পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে৷’’
২০১৬ সালে ইগুয়ালা শহরে ৪৩ শিক্ষার্থীর গায়েব হওয়া নিয়ে অনুসন্ধান করে আরেকটি বই (২০১৮ সালে ইংরেজিতে অনূদিত) লেখেন তিনি৷ তাঁর বইটি গণহত্যার ফরেনসিক অনুসন্ধান প্রকাশ করে৷
এই বই প্রকাশিত হবার পর তাঁর জীবন আরো ঝুঁকিতে পড়ে৷ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়াতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার একটি প্রোগ্রামে যুক্ত হন৷ গবেষণা চলার সময়ই তাঁর এক সোর্সকে হত্যা করা হয়৷ ২০১৮ সালের অক্টোবরে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করে ইউরোপে পাড়ি দেন৷
নিজের জীবন ঝুঁকিতে রেখে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কাজ চালিয়ে যাওয়ায় ডয়চে ভেলে আনাবেল হার্নান্দেজকে ‘ফ্রিডম অফ স্পিচ অ্যাওয়ার্ড ২০১৯’ প্রদান করে৷
মেলানি হল/জেডএ
গতবছরের অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...