ডিজিটাল আয়না বদলে দিচ্ছে জীবনযাত্রা
১৫ নভেম্বর ২০১৬এ যেন সৌন্দর্যের নন্দনকানন৷ স্টার হেয়ারড্রেসার শান রহিমখানের এই সেলুনটি বার্লিনের জনদার্মেনমার্ক্ট এলাকায়; শহরের হাই সোসাইটি এখানে আসেন করাতে৷ চুল কাটার দোকানে আয়না থাকবে, সে তো জানাই কথা৷ কিন্তু কিছুদিন হলো এখানে একটি ‘ডিরর', মানে ডিজিটাল মিরর বা ডিজিটাল আয়না ঝুলছে৷ টাচস্ক্রিন ও ভয়েস ইনপুট দিয়ে এটা সক্রিয় করা যায়৷ ডিরর-এর প্রথম খদ্দেরদের মধ্যে ছিলেন শান রহিমখান৷ তিনি বলেন, ‘‘খুব সাধারণ সব কাজে লাগতে পারে ডিরর৷ আপনার যদি মনে হয় ‘আমি একটা নতুন হেয়ারস্টাইল ট্রাই করতে চাই', তাহলে নিজের একটা ফটো তুলে তার ওপর পছন্দের ডিজিটাল চুলের ছবি বসিয়ে দেখা যায়, দেখতে কেমন লাগছে৷ একটা খেলা আর কী!''
অ্যানালগ আর ডিজিটাল জগতের ঠিক মাঝখানে এই ডিরর৷ বানিয়েছেন ডানিয়েল-ইয়ান গির্ল৷ ডিরর-কে ওয়াইফাই-এর মাধ্যমে ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত করা যায়৷ চলে উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেমে৷
এতে নানারকম অ্যাপ্লিকেশনের জন্য রয়েছে বিভিন্ন বোতাম বা আইকন৷ ডিরর-এ প্রায় ছয় লাখ অ্যাপ আছে৷ তাই ব্যবহারকারীরা তাঁর পছন্দের অ্যাপগুলি বেছে নিয়ে আইকনগুলো বাড়িয়ে-কমিয়ে নিতে পারেন৷ একদম কম্পিউটার, আইপ্যাড বা স্মার্টফোনের মতো৷
ডিরর দিয়ে নিজের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ডায়েরি খোলা যায়; রুট প্ল্যান করা যায়; আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখা যায়; এমনকি অনলাইন শপিং-ও করা যায়৷ ডিরর-এর স্রষ্টা ডানিয়েল-ইয়ান গির্ল বলেন, ‘‘ডিরর তো শুধু একটা আয়না নয়, ডিরর আমি নিজে৷ আসলে আমাদের কাছে প্রযুক্তি নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষটা৷ মানে আমি, আমার ব্যক্তিত্ব৷ আমি যখন আয়নায় নিজের মুখ দেখি আর প্রশ্ন করি, ‘আমার দিনটা আজ কেমন যাতে?' তখন আমি ডিরর থেকে নিজের জীবনযাত্রা সম্পর্কে সব রকম খবর পাই৷ তখন আমি সঙ্গে সঙ্গেই সিদ্ধান্ত নিতে পারি, তৈরি হয়ে নিতে পারি দিনটার জন্য৷''
ইন্টারঅ্যাক্টিভ
তবে শুধু ডিরর-ই যে দৈনন্দিন জীবনে অ্যানালগ আর ডিজিটালের মিলন ঘটিয়েছে, তা নয়৷ ফ্রান্সের ব্লু ফগ রোবোটিক্স কোম্পানি ‘বাডি' নামের একটা রোবট সৃষ্টি করেছে৷ বাডি-ও প্রবীণদের দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করে৷ লন্ডনের ‘ইনামো' রেস্টুরেন্টে অতিথিরা ইন্টারঅ্যাক্টিভ টেবিলগুলিতে যে শুধু খাবারের ফরমায়েশ দিতে পারেন, এমন নয়, সেই সঙ্গে বদলে দিতে পারেন চারপাশটা৷ ডিরর-ও তাই শুধু একটা কাজ নয়, ভবিষ্যতে বাড়ির সমস্ত ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির সুইচবোর্ড হিসেবে কাজ করার উচ্চাশা রাখে৷
ডানিয়েল-ইয়ান গির্ল বলেন, ‘‘নানা ছোটখাটো অথচ মজার কাজের জন্য ডিজিটাল সাহায্যকারী তৈরি হচ্ছে৷ উদ্দেশ্য একটাই: দৈনন্দিন জীবনের উন্নতি ঘটানো৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, আসলে এই যন্ত্রগুলো করে কী? কী ধরনের তথ্য এগুলো সংগ্রহ করে অথবা এর থেকে আমার কী লাভ হয়....আমার বিশ্বাস, ডিরর কী করতে সক্ষম, তা বোঝার জন্য আমাদের একটা কেন্দ্রীয় ইন্টারফেসের প্রয়োজন৷''
এই মুহূর্তে তিন সাইজের ডিরর পাওয়া যায়, তিন ধরনের কাঠের ফ্রেমে৷ সাইজ অনুযায়ী এর দাম পড়ে ৬০০ থেকে ১,৪০০ ইউরো৷ একক গ্রাহকরা ছাড়াও রেস্টুরেন্ট, হোটেল ও সরকারি অফিস থেকে ডিরর-এর অর্ডার আসে৷ তারকাদের হেয়ারড্রেসার শান রহিমখান ডিরর কিনে খুবই সন্তুষ্ট৷ বললেন, ‘‘এটা একটা আয়না, তবে অতটা স্বচ্ছ নয়৷ আমরা খদ্দেরদের মাথার চুলে যে রং দিই, তা এখানে ঠিকমতো দেখা যায় না৷ আইডিয়াটা হলো, সেলুনের মধ্যে ডেকরেশন হিসেবে রইল, কিন্তু এটা দেখতে দারুণ, কম্পিউটার স্ক্রিনের মতো বোকা বোকা নয়৷ আমি চিরকালই নতুন কিছু করতে চাই৷ আগে যা ছিল, তাই ছিল ভালো, বলে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে চাই না৷''