একই সঙ্গে কাজ ও ছুটি!
৭ অক্টোবর ২০১৬থাইল্যান্ডের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলে কো লানটা দ্বীপ৷ সবাই কিন্তু সেখানে ছুটি কাটাতে আসেন না৷ এই হোটেল কমপ্লেক্সে কাজের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো৷ সেখানে তথাকথিত ‘ডিজিটাল যাযাবর'-রা মিলিত হন৷ বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারীর বয়স ২০ থেকে ৪০৷ কাজের জন্য চাই শুধু ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগ৷
তাঁদেরই একজন মার্কিন নাগরিক ডেটা অ্যানালিস্ট নিক ড্যানফর্থ, বয়স ২৪৷ তিনি জানান, ‘‘আমি আসলে সোম থেকে শুক্রবার ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কাজ করার চেষ্টা করি৷ শুনতে অবাক লাগতে পারে, কারণ অনেকেই তো সেই বাঁধাধরা কাজ থেকে পালাতেই এই পথে আসে৷ কিন্তু আমি এভাবেই সবচেয়ে বেশি সৃজনশীল থাকি৷ সপ্তাহান্ত ও সন্ধ্যাগুলি খালি রাখি, আবিষ্কারের নেশায় বেরিয়ে পড়ি৷ যেমন এই দ্বীপের তটে যাই, স্নর্কলিং করি৷''
সমুদ্র কাছে থাকলে স্বাদবদলের এই সুযোগ সত্যি দারুণ৷ স্ত্রী স্টেফ-কে নিয়ে নিক ড্যানফর্থ চার বছর ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন৷ ডেটা অ্যানালিস্ট হিসেবে নিজেই অনলাইন কোম্পানি চালান বলে তিনি এমনটা করতে পারেন৷ নিক ড্যানফর্থের কথায়, ‘‘আমি নিজের টিমের ম্যানেজমেন্ট করে থাকি৷ অ্যামেরিকায় অনেকে আছে, ফিলিপাইন্সেও একটা টিম আছে৷ তারা আমাদের হয়ে গবেষণা করে৷ অর্থাৎ আমার কাজের একটা বড় অংশ অন্যের কাজ পরখ করা, সিস্টেম ম্যানেজ করা, ব্যয়ের অনুমোদন দেওয়া৷ উঁচু পর্যায়ের অনেক কাজ করি, দৈনন্দিন বিষয়ে বেশি মাথা ঘামাই না৷''
মরসুম যখন তুঙ্গে, তখন থাইল্যান্ডের এই ‘কো ওয়ার্কিং স্পেস'-এ ৫০ জনেরও বেশি ‘ডিজিটাল যাযাবর' হাজির হন৷
ইংল্যান্ডের জেমস অ্যাবট বছর দুয়েক আগে এই কেন্দ্রটি খোলেন৷ মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ফাইবার অপটিক সংযোগের ফলে দ্রুতগতির ইন্টারনেট পরিষেবা পাওয়া যায়৷ এমন ট্রপিকাল পরিবেশে কাজের মাশুল ১৪০ ইউরো৷ আর ৬০০ ইউরো দিলে ঘর ও খাবারও পাওয়া যায়৷ হোটেলের মালিক অ্যাবটের কথায়, ‘‘উৎপাদনশীলতার মাত্রা খুবই বেশি৷ রাতেও তাদের এখানে দেখা যায়৷ মানুষ এখানে অত্যন্ত সৃজনশীল হয়ে ওঠে৷ অনেকেই আলাদা করে আমাকে বলেছেন, বাইরে বেরিয়ে – এমনকি ঘরের তুলনায়ও তারা এখানে বেশি উৎপাদনশীল হয়ে উঠেছেন৷ ফলে আমি সত্যি অবাক হয়েছি৷''
বেশিরভাগ অতিথি মাসখানেক থাকেন৷ তারা সাধারণত ইউরোপ, উত্তর অ্যামেরিকা অথবা অস্ট্রেলিয়া থেকে আসেন৷
বার্লিনের ক্রিস্টিনে ম্যুনশ-ও এখানে বিশ্রাম নিতে এসেছেন৷ ওয়েবসাইট ডেভেলপর হিসেবে বাকিদের কাছ থেকেও প্রেরণা পান তিনি৷ বলেন, ‘‘আমি বাড়িতেই কাজ শুরু করি৷ কিন্তু একসময় নিজেকে বড় বিচ্ছিন্ন মনে হলো৷ কিন্তু আশেপাশে যদি এমন লোক থাকে, যারা মন দিয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করছে, তখন তার প্রভাব পড়ে বৈকি৷ ফেসবুক ছেড়ে মন দিয়ে কাজ করা যায়৷''
গোটা বিশ্বে প্রায় ৫০,০০০ মানুষ নিজেদের ডিজিটাল যাযাবর হিসেবে বর্ণনা করেন৷ থাইল্যান্ড ও স্পেন তাদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্য৷ ‘নোম্যাডলিস্ট' নামের এক ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে নানা তথ্য পাওয়া যায়৷ যে সব মানুষ মূলত অনলাইনে তাদের কর্মদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, তারাই দূরে বসে এমন কাজ করতে পারেন৷
ক্রিস্টিনে ম্যুনশ জানান, ‘‘আমি মূলত অ্যামেরিকার গ্রাহকদের সঙ্গেই কাজ করেছি৷ তারা কখনোই আমার কাছে ছিলেন না৷ তাই আমি যে কোনো কাজের জায়গা বেছে নিতে পারি৷''
তবে এমন স্বাধীনতারও মূল্য রয়েছে৷ বেশিরভাগ যাযাবরই কিছুদিন পর বন্ধুবান্ধব অথবা সহকর্মীদের অভাব বোধ করেন৷ ডেটা অ্যানালিস্ট নিক ড্যানফর্থ যেমন বলেন, ‘‘আমি যখন প্রথমে ভ্রমণ শুরু করলাম, তখন প্রায় সবাই যা করে আমিও তাই করতাম৷ অর্থাৎ টাকা বাঁচানোর চেষ্টা করতাম৷ কো-ওয়ার্কিং স্পেসে যাবার বদলে হোটেলের ঘর অথবা ক্যাফে-তেই ওয়াইফাই ও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যায়! কিন্তু ওয়াইফাই এখন প্রায় সর্বত্র রয়েছে৷ কিন্তু ডিজিটাল যাযাবর হিসেবে পথে থাকলে সমাজ, কোনো জায়গার প্রতি টান, বাড়ির অভাব টের পওয়া যায়৷''
এখানে কো-ওয়ার্কিং স্পেস সেই অভাব পূরণ করতে ভারসাম্য আনতে চাইছে৷ সবাই মিলে থাইল্যান্ডের নববর্ষ পালনের মজাই আলাদা৷
প্রতিবেদন: ইয়খেন লোমান/এসবি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ