টুকরো ও বিচ্ছিন্ন বস্তু দিয়ে অসাধারণ শিল্পকর্ম
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০চোখে না দেখলে অ্যানামরফিক পোর্ট্রেটের বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য বোঝা কঠিন৷ এটা দৃষ্টিকোণ নিয়ে খেলা বটে৷ ত্রিমাত্রিক কোনো মূর্তি টুডি ছবি হয়ে উঠছে৷ যেমন লেখক ফ্রানৎস কাফকার একটি ছবির মধ্যে অনেক বস্তু ঢুকে গেছে৷ এই শিল্পকর্মের স্রষ্টা পাট্রিক প্রশকো৷ তিনি এই শিল্পশৈলির বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘অ্যানামরফিক শব্দটা আসলে গ্রিক৷ এর অর্থ ‘যার কোনো আকার-আকৃতি নেই’৷ এমন ছবি দেখলে প্রথমে বিকৃত মনে হবে৷ দৃষ্টিকোণ বদলালে তবেই তার আকৃতি সৃষ্টি হবে৷ ঘরের মধ্যে নির্দিষ্ট একটি বিন্দুতে দাঁড়ালে তবেই দর্শক ছবিটি চিনতে পারবেন৷’’
চেক শিল্পী পাট্রিক প্রশকো ইলিউশন বা বিভ্রম সৃষ্টির কাজে হাত পাকিয়েছেন৷ তাঁর অ্যানামরফিক ছবিগুলি বেশ কয়েক মিটার দীর্ঘ এবং গোটা ঘর দখল করে নেয়৷ বেশিরভাগ ছবির বিষয়বস্তু খ্যাতনামা চেক ব্যক্তিত্ব৷ যেমন বিশ্বের সবচেয়ে বড় জুতোর কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা বাটা, চেক ভাষায় যার পদবি বাটিয়া৷ পাট্রিক বলেন, ‘‘টোমাশ বাটিয়া আমার সর্বশেষ সৃষ্টিকর্মের একটি৷ এখানে প্রদর্শিত সব অ্যানামরফিক ভাস্কর্য এমন সব বস্তু দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, যেগুলির সঙ্গে সেই ব্যক্তির কোনো সম্পর্ক রয়েছে৷ যেমন টোমাশ বাটিয়ার পোর্ট্রেট পুরোপুরি শুধু জুতো দিয়ে তৈরি করা হয়েছে৷’’
প্রায় ২০০ জুতোর সোল, পুরানো ও নষ্ট হয়ে যাওয়া জুতো, কাপড় ও চামড়ার অংশই পোর্ট্রেটের উপকরণ৷ প্রয়োজনীয় উপকরণ সাজানোর উদ্দেশ্যে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে পাট্রিক সেই সব অংশ সংগ্রহ করেছেন৷ প্রত্যেকটি জুতো যেন তুলির আঁচড়৷ মূল ছবিটি টোমাশ বাটিয়ার৷ পাট্রিক বলেন, ‘‘এত বড় চ্যালেঞ্জ সম্ভবত ভাস্কর্যের অন্য কোনো শৈলির ক্ষেত্রে দেখা যায় না৷ বস্তুগুলি শুধু ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত হলে চলবে না, সেগুলির নির্দিষ্ট মাপ থাকতে হবে, কারণ, সৃষ্টিকর্মের নির্দিষ্ট অংশে সেগুলি শোভা পাবে৷ আলো ও ছায়ার উপর নির্ভর করে আমি মডেল তৈরি করি বলে সঠিক রং থাকাও অত্যন্ত জরুরি৷ আমার সঠিক রং ও একেবারের মানানসই আকৃতির প্রয়োজন হয়৷’’
কম্পিউটার, আলো ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রের স্তূপের পেছনে রয়েছেন নিকোলা টেসলা৷ ইলেকট্রনিক্সের ক্ষেত্রে তিনি পথিকৃত হিসেবে পরিচিত৷ এমন ভাস্কর্য সৃষ্টি করতে পাট্রিকের প্রায় দুই মাস সময় লাগে৷ সব বস্তু জোড়া দেবার ক্ষেত্রে অনুপাত ঠিক রাখা সবচেয়ে জরুরি৷ পাট্রিক জানালেন, ‘‘আমি যখন বিশ্ববিখ্যাত কোনো ব্যক্তির পোর্ট্রেট তৈরি করি, তখন আমাকে প্রত্যেক মিলিমিটারের দিকে নজর দিতে হয়, যাতে শেষে সেই ব্যক্তিকে সত্যি চেনা যায়৷ দর্শকের অবস্থানের বিন্দুতে বার বার দাঁড়িয়ে তা যাচাই করতে হয়৷’’
পাট্রিক মনে করেন, কোনো বস্তু সঠিক জায়গায় না থাকলে পোর্ট্রেটের বদলে সেটি কার্টুন বা ব্যঙ্গচিত্রে পরিণত হবে৷
চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগের পুরানো অংশের মাঝেই ‘ইলিউশন আর্ট মিউজিয়াম’-এ তাঁর ভাস্কর্য প্রদর্শিত হয়৷ পাট্রিক বলেন, ‘‘এই ভাস্কর্য সব দিক থেকেই দেখে চেনা যায়৷ কিন্তু অবস্থান অনুযায়ী মোটিফ বদলে যায়৷ চারিদিকে ঘুরে এটি দেখতে হয়৷ এটা আমার সবচেয়ে জটিল কাজগুলির মধ্যে একটি৷’’
পাট্রিক প্রশকো এরই মধ্যে ছটি অ্যানামরফিক ভাস্কর্য তৈরি করেছেন৷ চলতি বছরেই সপ্তম সৃষ্টিকর্মের কাজ শেষ হবার কথা৷
আন্টিয়ে বিন্ডার/এসবি