বিশ্ব অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩বিশ্বায়নের এই যুগে পারস্পরিক সমন্বয় ও বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্যের প্রয়োজন কীভাবে বাড়ছে, মস্কোয় জি টোয়েন্টি দেশগুলির অর্থমন্ত্রীদের সম্মেলনে তা আরও স্পষ্ট হয়ে গেল৷ কিছুকাল আগে পর্যন্ত এমন বৈঠকে প্রতিটি দেশ তাদের নিজস্ব সংকীর্ণ স্বার্থ রক্ষা করতেই ব্যস্ত থাকতো৷ লাগাতার আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংকটের অভিজ্ঞতা সেই মনোভাবকে যেন অনেকটাই বদলে দিয়েছে৷ মনে রাখতে হবে, বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ৯০ শতাংশই এই ২০টি দেশের অধীনে রয়েছে৷
ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির অর্থমন্ত্রীরা একযোগে বহুজাতিক কোম্পানিগুলির উদ্দেশ্যে তোপ দেগেছেন৷ অনেক মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানি এক দেশে আয় করে অন্য দেশে কর দিয়ে থাকে৷ অর্থাৎ মুনাফা যেখান থেকেই আসুক না কেন, যে দেশে করের হার কম, সেখানে নামমাত্র কর দিয়ে তারা পার পেয়ে যায়৷ যেমন দেখা যায়, বহুজাতিক কোম্পানি যেখানে মাত্র ৫ শতাংশ কর দিচ্ছে, সেখানে ছোট ও মাঝারি আকারের সংস্থাগুলিকে প্রায় ৩০ শতাংশ কর দিতে হচ্ছে৷ এই বৈষম্য বন্ধ করতে ইউরোপের এই তিন দেশ আন্তর্জাতিক সমন্বয়ের মাধ্যমে পদক্ষেপ নিতে চায়৷ উদ্দেশ্য প্রতিটি দেশের রাজকোষেই যেন ন্যায্য কর জমা পড়ে৷ অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা ওইসিডি-ও এই মর্মে এক উদ্যোগ নিচ্ছে৷ চলতি বছরের গ্রীষ্মেই এ বিষয়ে এক বিস্তারিত পরিকল্পনা পেশ করতে চলেছে এই সংস্থা৷
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে আরও একটি ক্ষেত্রে সমন্বয়ের ডাক বাড়ছে৷ কৃত্রিমভাবে মুদ্রার বিনিময় মূল্য কমানোর বা কম রাখার চেষ্টা করে রপ্তানির বাজারে নিজেদের সুবিধা বাড়াতে চাইছে জাপানের মতো দেশ৷ যেমন ইয়েনের বিনিময় মূল্য কম থাকলে জাপানে উৎপাদিত পণ্য বা পরিষেবা সহজেই অন্য দেশে বেচা যাবে৷ অন্যদিকে এর ধাক্কায় ইউরোর বিনিময় মূল্য বেড়ে গেলে সমস্যায় পড়বে ইউরো এলাকা৷ বাস্তবে সেটাই ঘটছে৷ তাই মস্কোর সম্মেলনে এই ‘কারেন্সি ওয়ার' বন্ধ করার অঙ্গীকার করেছে জি টোয়েন্টি৷ বিশেষ করে ফ্রান্স ইউরোর বেড়ে চলা অস্বাভাবিক বিনিময় মূল্য নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তা প্রকাশ করে আসছিল৷
আরেকটি বড় সমস্যা নিয়ে অবশ্য ঐকমত্যে আসতে পারলেন না জি টোয়েন্টি দেশগুলির অর্থমন্ত্রীরা৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে অস্বাভাবিক মাত্রায় বাজেট ঘাটতির ফলেও বিশ্ব অর্থনীতি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না৷ এই অবস্থায় সরকারি ব্যয়ের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ডাক বাড়ছে৷ সম্মেলনের চূড়ান্ত ঘোষণাপত্রে এর প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করা হলেও কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা সম্ভব হচ্ছে না৷ তবে আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে এ ক্ষেত্রে অগ্রগতির আশা প্রকাশ করেছে রাশিয়া৷
এসবি/এসি (রয়টার্স, এএফপি)