ইউরোর বিনিময় মূল্য
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ইউরোর বিনিময় মূল্য
গত বছর আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংকটের সময় অভিন্ন মুদ্রা ইউরোর অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ দেখা গিয়েছিল৷ সেই শঙ্কা কেটে গেছে৷ উল্টে ইউরোর বিনিময় মূল্য যেভাবে বেড়ে চলেছে, তার ফলে রপ্তানির ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করছে ফ্রান্স৷ তাদের যুক্তি, এই অবস্থায় সংকট থেকে বেরিয়ে এসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে চেষ্টা চলছে, তাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ অর্থাৎ উৎপাদনের ব্যয় থেকে শুরু করে বেতন-মজুরি বজায় রেখে বিদেশের বাজারে আকর্ষণীয় মূল্যে ইউরোপের পণ্য বা পরিষেবা বিক্রি করা কঠিন হবে৷ বিনিময় মূল্য কম থাকলেই রপ্তানির বাজারে প্রতিযোগিতায় টিঁকে থাকা সম্ভব৷ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷
তাই ইউরো-র এই উত্থান নিয়ন্ত্রণ করতে ফ্রান্স আন্তর্জাতিক স্তরে সমন্বয়ের দাবি জানিয়েছে৷ ইউরো এলাকার বাকি দেশগুলির সঙ্গে মিলে ইউরো-কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় সে দেশ৷ ইউরোজোনের দেশগুলি আগামী শুক্রবার মস্কোয় জি টোয়েন্টি অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চায়৷
‘বাজারে হস্তক্ষেপ নয়'
ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও জার্মানি অবশ্য নীতিগতভাবে ইউরোর বিনিময় মূল্যের ক্ষেত্রে কোনো রকম রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিরোধী৷ মুদ্রা নিয়ে এমন খেলা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলে অনেক মহলে আশঙ্কা রয়েছে৷ বাজারের নিয়মেই মুদ্রার বিনিময় মূল্য ওঠানামা করে – সেটাই চলতে দেওয়া উচিত বলে তাদের মত৷ ইউরোগ্রুপের নতুন প্রধান নেদারল্যান্ডস-এর অর্থমন্ত্রী ইয়েরুন ডাইসেলব্লুম-ও একক পদক্ষেপ না নিয়ে জি টোয়েন্টি স্তরে এ বিষয়ে আলোচনার পক্ষপাতি৷
জি টোয়েন্টি-র মধ্যে শিল্পোন্নত দেশগুলির গোষ্ঠী জি সেভেন অবশ্য মঙ্গলবার জানিয়ে দিয়েছে, শুক্রবারের আলোচনায় তারা মুদ্রার বিনিময় মূল্যের বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করতে চায় না৷ মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা বিপন্ন না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি বরং তাদের ক্ষমতার আওতায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে বাজারকে সঠিক বার্তা পাঠাতে পারে বলে মনে করছে জি সেভেন৷
অর্থনৈতিক চালচিত্র
ইউরোর বিনিময় মূল্য নিয়ে ফ্রান্সের আশঙ্কা সত্ত্বেও সোমবারই জার্মানির অর্থনৈতিক মন্ত্রণালয় ভবিষ্যতে সুদিনের আশ্বাস দিয়েছে৷ তবে মনে রাখতে হবে, জার্মানির রপ্তানির একটা বড় অংশও ইউরো এলাকার উপর নির্ভরশীল৷ তাই সার্বিক উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ইউরোপের অর্থনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে৷
গত সপ্তাহে ইইউ বাজেট অনুমোদনের সিদ্ধান্তের ফলে সোমবার পুঁজিবাজার বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল৷ তাছাড়া ইউরো এলাকার অর্থমন্ত্রীদের বৈঠককে ঘিরেও বাজারে উৎসাহ দেখা গেছে৷ বিশেষ করে সাইপ্রাসের বেলআউটের প্রশ্নে অগ্রগতির অপেক্ষায় রয়েছে আর্থিক জগত৷ আগামী মার্চ মাসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের আশা করা হচ্ছে৷
সাইপ্রাসকে নিয়ে আশঙ্কা
এদিকে সাইপ্রাসের আর্থিক সংকটের কারণে ইউরো এলাকার স্থিতিশীলতা বিপন্ন হতে পারে বলে বাজারে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ প্রথমে দুশ্চিন্তা ছিল গ্রিসকে নিয়ে৷ এখন সাইপ্রাসের দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কাকে ঘিরে ইউরো এলাকায় অস্বস্তি বাড়ছে৷ গত জুন মাসে সাইপ্রাস ১,৭০০ কোটি ইউরো বেলআউট চেয়েছিল৷ অঙ্কটা তেমন বেশি নয় বটে, কিন্তু অবৈধ আর্থিক লেনদেনের জন্য সাইপ্রাসকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তা নিয়ে ইইউ সন্তুষ্ট নয়৷ তাই সে দেশের ব্যাংকগুলিকেও যে কোনো উদ্ধার কর্মসূচিতে অংশ নিতে হবে, এমন দাবি বাড়ছে৷ রাশিয়ার অনেক কোটিপতি এই সব কার্যকলাপে জড়িত বলে অভিযোগ৷ বিষয়টির নিষ্পত্তির আগে বেলআউট নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন না ইউরোজোনের অর্থমন্ত্রীরা৷
এসবি/এসি (রয়টার্স, এএফপি, ডিপিএ)