বিশ্বযুদ্ধের মৃত্যু-আতঙ্ক
১০ নভেম্বর ২০১২১৯৪৫ থেকে ১৯৪৮ সালের মধ্যে মানুষের প্রাণ বাঁচাতেই একটা কাজ করেছিল ব্রিটিশ সেনাবাহিনী৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের বাহিনী পরাজিত হওয়ায় জার্মানি তখন ব্রিটিশদের দখলে৷ গোটা দেশই যেন ধ্বংসস্তুপ৷ এখানে-সেখানে পড়ে আছে বোমা-মাইন-গোলাবারুদ, শেল৷ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সাধারণ মানুষকে অপঘাত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে ব্রিটিশ সৈন্যরা সব গোলা বারুদ, বোমা, মাইন সাগরের গভীর জলে ফেলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়৷ জার্মানির সব জাহাজ আর নৌকাকে ব্যবহার করা হয় এই কাজে৷ ওভাবে তখন মানুষের প্রাণ বাঁচানো গিয়েছিল ঠিকই৷ কিন্তু ৬৭ বছর পর তা আবার দেখা দিয়েছে বড় সমস্যা হয়ে৷ প্রাণনাশের আতঙ্ক হয়েও৷
জার্মানিতে বায়ুচালিত যন্ত্র অর্থাৎ উইন্ড টারবাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ব্যাপক হারে৷ এসব সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাতেতো হয়ই, এমনকি সাগরেও হয়৷ কিন্তু সাগরতলে সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার বোমা, মাইন, কামানের গোলা ইত্যাদি থেকে যাওয়ায় কাজে ব্যাঘাত ঘটছে৷ একটা-দুটো তো নয়, লক্ষ লক্ষ মৃত্যু আতঙ্ক লুকিয়ে আছে পানির নীচে৷ শ্লেসভিক হলস্টাইন রাজ্যের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানালেন, জার্মানির সাগরের নীচে নাকি ১৬ লক্ষ টন বিস্ফোরণযোগ্য যুদ্ধের রসদ পড়ে আছে৷ এ তথ্য জানলে কে না ভয় পাবে বলুন!
এখনো অবশ্য ব্যাপারটা সবাই জানেন না৷ তাই জার্মানির উত্তরের ছোট্ট এক পর্যটন নগরী নর্ডডাইশে প্রতিদিন ছুটে যান শত শত পর্যটক৷ সাগরের হাতছানিতে ছুটে যেতে হয় এমন জায়গা আরো আছে জার্মানিতে৷ অনেকগুলোরই সৈকতের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে বিশ্বযুদ্ধের রেখে যাওয়া সেই আতঙ্ক৷
ক‘দিন আগে ইয়ান ক্যোলবেলের মনেও আতঙ্ক ছড়িয়েছিল পানির নীচের বোমা, মাইনগুলো৷ ক্যোলবেল বোকালিস হিরডেস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর৷ প্রতিষ্ঠানটির কাজ অবিস্ফোরিত বোমা বা এ জাতীয় যুদ্ধরসদগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো৷ পূর্ব ফ্রিসিয়ান দ্বীপে উইন্ড পার্কের জন্য পানির নিচ দিয়ে বৈদ্যুতিক তারের সংযোগ দিতে যাবার আগে একটা হিসেব কষেছিলেন ক্যোলবেল৷ অনুমাননির্ভর সেই হিসেব অনুযায়ী ৪৫ কিলোমিটার এলাকায় যেখানে বড়জোর হয়তো ৫০ জায়গায় বোমা, মাইন বা কামানের গোলা থাকার কথা গিয়ে দেখেন ওই একই এলাকায় রয়েছে ২,০০০টির মতো এমন জায়গা!
এ অবস্থা অনেক জায়গাতেই৷ পরিবেশবাদীরা ভীষণ চিন্তিত, কেননা, এই বোমা বা মাইনগুলোর বিস্ফোরণ ঘটালেও সামুদ্রিক প্রাণীদের জীবন বিপন্ন হতে পারে৷ আর রেখে দিলে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে, তাছাড়া মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা তো থাকবেই৷