ঝুঁকি এড়াতে গর্ভপাত
২৬ জুলাই ২০১৪আখেন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে জন্মের আগে শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন ড. টামে গ্যোকে৷ চিকিৎসাবিদ্যার অগ্রগতির ফলে এখন তিনিও আগেভাগেই রোগ প্রায় নিখুঁতভাবে শনাক্ত করতে পারেন৷ এখন তিনি জেনেটিক বিশ্লেষণ প্রক্রিয়াও কাজে লাগাচ্ছেন৷
‘প্রি-নাটাল ডায়াগনোসিস'-এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি খোঁজ পড়ে ‘ডাউন সিনড্রোম-এর৷ ভবিষ্যৎ সন্তানের শরীরে এটা ধরা পড়লে জার্মানিতে প্রায় ৯০ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা নারী গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নেন৷ ড. টামে গ্যোকে বলেন, ‘‘এটা একটা কঠিন পরিস্থিতি৷ কারণ গর্ভবতী নারীর অবশ্যই নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেবার, নিজের ভবিষ্যৎ স্থির করার অধিকার রয়েছে৷ আমাদেরও সেটা মেনে নিতে হয়৷ অন্যদিকে আমাদের মূল কাজ জীবন রক্ষা করা – অনেকটা ভাবী শিশুর হয়েও ওকালতি করা৷''
ফার্স্ট ট্রিমেস্টার স্ক্রিনিং-এর ক্ষেত্রেও ডাউন সিন্ড্রোম রোগের ঝুঁকি নির্ণয় করা হয়৷ এর জন্য আলট্রা-সাউন্ড ও রক্ত পরীক্ষা করা হয়৷ ড. গ্যোকে বলেন, ‘‘ফার্স্ট ট্রিমেস্টার স্ক্রিনিং-এর আলট্রা-সাউন্ড পরীক্ষায় আমরা মূলত শিশুর উচ্চতা মেপে দেখি৷ তার আকার ও অবয়ব ভালো করে লক্ষ্য করি৷ নিউকাল স্ক্যান করাও খুব জরুরি৷ নাকের হাড়ের মতো অঙ্গগুলির উপরও নজর রাখতে হয়, যাতে ভবিষ্যতে ঝুঁকি বিশ্লেষণের সময় এগুলিও বিবেচনা করা যায়৷''
নাকের হাড় ছোট হলে সেটা ডাউন সিন্ড্রোমের ইঙ্গিত হতে পারে৷ সেইসঙ্গে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ হৃদযন্ত্রের ত্রুটিও এই পরীক্ষায় ধরা পড়ে৷
ডাক্তাররা অন্তঃসত্ত্বা নারীর রক্ত পরীক্ষায় দু'রকম বায়োকেমিকাল ভ্যালু খোঁজেন৷ সেই পরীক্ষা থেকেও আগাম ধারণা পাওয়া যায়৷ ড. গ্যোকে বলেন, ‘‘প্রায় ৯৫ শতাংশ নারীর ফার্স্ট ট্রিমেস্টার স্ক্রিনিং-এর ক্ষেত্রে কোনো অস্বাভাবিক ফল পাওয়া যায় না৷''
পরীক্ষায় কোনো শিশুর ক্রোমোজোমের ত্রুটির ঝুঁকি ধরা পড়লে অ্যামনিয়টিক ফ্লুইড পরীক্ষায় স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়৷ কিন্তু সেটা করতে গেলে গর্ভপাতের ভয় থাকে৷ ড. গ্যোকে বলেন, ‘‘তখন আমরা দেখি, সূচ কী ভাবে অ্যামনিয়টিক ফ্লুইড পর্যন্ত ঢুকে গেছে৷ এখানে সমস্যা হলো কিছু ক্ষেত্রে শিশুও জখম হতে পারে৷''
সম্প্রতি অ্যামনিয়টিক ফ্লুইড পরীক্ষার বিকল্প খুঁজে পাওয়া গেছে৷ তখন থেকে জার্মানিতে ট্রাইসোমি রক্ত পরীক্ষা শুরু হয়েছে৷ ভাবী বাবা-মায়েদের এর জন্য প্রায় ৬৪০ ইউরো গুনতে হয়, যা স্বাস্থ্য বিমার আওতার বাইরে৷ ড. গ্যোকে বলেন, ‘‘ফিটাল ডিএনএ টেস্টের ক্ষেত্রে মায়ের শরীরে সূচ ঢুকিয়ে রক্ত বার করা হয় না৷ এই রক্তে শিশুর কোষের অংশ থাকে৷ তা পরীক্ষা করে জানা যায় – তার ক্রোমোজোমে কোনো অস্বাভাবিক বিষয় ধরা পড়ছে কি না৷''
এই রক্ত পরীক্ষার সমালোচকদের আশঙ্কা, শিশুর শরীরে ডাউন সিন্ড্রোম ধরা পড়লে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের উপর গর্ভপাতের জন্য চাপ বাড়বে৷ কারণ এই পরীক্ষা খুবই সহজ৷ ড. গ্যোকে বলেন, ‘‘বিষয়টি অত্যন্ত ভেবে চিন্তে মূল্যায়ন করতে হবে৷ আমার মতে, বিচ্ছিন্নভাবে শুধু এই পরীক্ষার উপর নির্ভর করলে চলবে না৷ এতে শুধু ক্রোমোজোমের অনুপাত পরীক্ষা করা যায়৷ তার সঙ্গে আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ত্রুটি ধরা পড়বে, যা আরও ঘনঘন দেখা যায়৷''
শুরু থেকেই হাসপাতালে ট্রাইসোমি রক্ত পরীক্ষার চাহিদা বাড়ছে৷ প্রতিবন্ধীদের সংগঠন বিষয়টি সম্পর্কে অত্যন্ত সন্দিহান৷ কারণ অনেক অন্তঃসত্ত্বা নারী ডাউন সিন্ড্রোম সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন নন৷ তখন তাঁদের কাছে মনে হয়, গর্ভপাতই একমাত্র পথ৷