জার্মান নির্বাচন নিয়ে পথে পথে
১২ জুন ২০১৭নির্বাচনকে সামনে রেখে দুজন রিপোর্টার ৬টি বিষয়ে দেশের নানা প্রান্তে পথে পথে ঘুরে সাধারণ মানুষের মনোভাব জানবেন৷ একটি সুনির্দিষ্ট স্থানে এক সপ্তাহ ধরে তারা থাকবেন, কথা বলবেন সেখানকার মানুষের সঙ্গে৷ এরপর তা জানাবেন সকলকে৷
এই নির্বাচন কভারেজের জন্য #GermanyDecides এবং #Deutschlandwählt নামে দুটি হ্যাশট্যাগ ঠিক করা হয়েছে৷
ডয়চে ভেলের দুইজন প্রতিবেদক সুমি সমাস্কান্দা এবং নিনা হাসে তাদের ৬ সপ্তাহের এই ‘রিপোর্টিং ট্রিপ’ ১২ জুন বার্লিন থেকে শুরু হচ্ছে৷
ফল্কসভাগেন বাসে করে সেখান থেকে তারা যাবেন স্যাক্সনি অঙ্গরাজ্যের রাজধানী ড্রেসডেনে৷ ২৪ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনকে কোন কোন বিষয় প্রভাবিত করতে পারে, তান নিয়ে তারা একটা আলাপ শুরু করতে চান৷ সেখানে জার্মানি সম্পর্কে আসা প্রশ্নেরও জবাব দেবেন৷
‘ছয় শহর, ছয় প্রশ্ন’
কোন দিকে যাচ্ছে জার্মানি? রাজধানী বার্লিনে এই প্রশ্নের জবাব খোঁজা হবে৷
জার্মানিতে ডানপন্থি রাজনীতি কতটা শক্তিশালী? ড্রেসডেন এবং এর আশেপাশের এলাকায় এই প্রশ্নের জবাব খোঁজা হবে৷ সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানিতে গড়ে উঠা ডানপন্থি পেগিডা আন্দোলন কেন্দ্রীভূত হয়েছে এই শহরেই৷
উদ্বাস্তুদেরকে কি এখনো স্বাগত জানানো হয়? ভেগশাইডসহ বাভারিয়া অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন স্থানে এই প্রশ্ন ধরে অনুসন্ধান চলবে৷ বাভারিয়া রাজ্যে সামাজিক রক্ষণশীলতা বেশি৷ এই রাজ্যভিত্তিক দল খ্রিষ্টীয় সামাজিক ইউনিয়নের (সিএসইউ) চাপেই ক্ষমতাসীন সরকারকে উদ্বাস্তু নীতিতে কঠোরতা আনতে হয়েছে বলে মনে করা হয়৷
জার্মান অর্থনীতি কি ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত? বাডেন-ভুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের রাজধানী স্টুটগার্ট এবং আশপাশের এলাকায় এই প্রশ্ন ধরে কাজ হবে৷ এই জায়গাটি নির্মাণ শিল্পের জন্য বিখ্যাত৷
ইসলাম কি জার্মানিকে বদলে দিচ্ছে? জার্মানির দুই হাজার বছরের পুরাতন শহর কোলন এবং আশপাশের এলাকায় এই অনুসন্ধান চালানো হবে৷ কোলনকে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মনে করা হয়৷
জার্মানিতে সমতা ও স্বচ্ছতা কতটা রয়েছে? বাণিজ্যিক ও শিল্প শহর ব্রেমেনে এই অনুসন্ধান চালানো হবে৷
জার্মানির মানুষ এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোই টিভি এবং অনলাইন-উভয়ক্ষেত্রে মনোযোগের কেন্দ্রে থাকবে৷ রাজনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকারের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কনটেক্সট দেয়া হবে৷
এই ‘সুপার ইলেকশন ইয়ারে’ প্রতিবেদকরা এমন বিষয়েও দৃষ্টি দেবেন, যেগুলো সাধারণত আড়ালে থেকে যায়৷ সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন নির্বাচন এবং ব্রিটেনের ব্রেক্সিট গণভোটের মাধ্যমে বোঝা গিয়েছিলো যে, বড় শহরগুলোর বাইরে মানুষের মানসিকতা বোঝা ও তুলে ধরা গণমাধ্যমের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ৷
টুইটার, ফেসবুক (লাইভ), ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করে ইংরেজি ও জার্মান ভাষায় যে কেউ রিপোর্টারদেরকে ফলো করতে পারেন৷ তাদের অনুসন্ধানের ফলাফল অনলাইন এবং টিভিতেও পাওয়া যাবে৷
যে দুই প্রতিবেদক ঘুরবেন দেশজুড়ে
সুমি সমাস্কান্দা ২০১১ সাল থেকে ডয়চে ভেলে ইংরেজি বিভাগের উপস্থাপক হিসাবে কাজ করছেন৷ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অনলাইন এবং টিভিতে তাঁর বহু বছরের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণকারী এই সাংবাদিক শিকাগোতে পড়াশোনা করেন৷ কর্মজীবন শুরু করেন সান ফ্রান্সিসকোতে৷ বশ কোম্পানির ফেলোশিপে কাজ করতে এসে তিনি জার্মানিতে থেকে যান৷ ৯ বছর যাবত তিনি বার্লিনে বাস করছেন৷
তিনি বলেন, ৮০ মিলিয়নের বেশি মানুষের জার্মানি তাঁর ব্যাপক বৈচিত্র্য দিয়ে সব সময়ই আমাকে বিস্মিত করেছে৷ এই বৈচিত্র্য কেবল ভৌগলিকভাবেই নয়, বরং সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ভাষাগত দিক থেকেও৷ জার্মানির এপার-ওপার, উত্তর থেকে দক্ষিণে, পূর্ব থেকে পশ্চিমে আমি ভোটারদের সাথে কথা বলতে যাবো৷
এই যাত্রা কেন গুরুত্বপূর্ণ-এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচনকে ঘিরে জার্মানদের বিভিন্ন ধারা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে জার্মানদের বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে৷ আসলেই সেটা হয়েছ কি-না, হলে কেন হয়েছে? কোন কোন ইস্যুগুলো আগামী সেপ্টেম্বরের নির্বাচনকে তাড়না দেবে? জাতীয় পর্যায়ে যেমনি এই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি বৈশ্বিক ক্ষেত্রেও এটা সত্য৷ পথে ঘাটে ঘুরে প্রতিবেদন সংগ্রহে এর চেয়ে ভালো সময় আর হতে পারে না৷
নিনা হাসে ২০০৫ সাল থেকে ডয়চে ভেলের ইংরেজি এবং জার্মান সংস্করণে প্রতিবেদক, সম্পাদক, অনলাইন লেখক এবং উপস্থাপক হিসাবে কাজ করছেন৷ তিনি জার্মানির নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন৷ দেশের রাজনৈতিক অবস্থা কতটা স্থিতিশীল রয়েছে – এই যাত্রায় এটা তার মূল জিজ্ঞাসা৷
তিনি বলেন, সব জায়গায় রাজনৈতিক চালচিত্র বদলে যাচ্ছে৷ প্রশ্নের মুখে পড়ছে পুরাতন জোটগুলো৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন এবং ব্রেক্সিট গণভোটে দেখা গেছে, প্রথাবিরোধী বক্তব্য দিয়ে রাজনীতিকরা জিতে যাচ্ছেন৷ অন্যদিকে জার্মানির মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলো পশ্চিমা মূল্যবোধকে বহন করে চলেছেন৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেল বিদেশী গণমাধ্যমের দৃষ্টিতে বিশ্বনেতা বনে গেছেন৷ তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এসপিডির মার্টিন শুলৎস৷
তিনি বলেন, তবে একের পর এক প্রাদেশিক নির্বাচনে জার্মানির জন্য বিকল্প (এএফডি) দলটি আসন পেয়ে চলছে৷ জার্মানিতে আসলে কতটা অসন্তোষ রয়েছে? মাঠে নেমে মানুষের সাথে কথা বললেই এর সবচেয়ে ভালো জবাব পাওয়া যাবে৷
মার্টিন মুনো/এসএন