1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফিকে হচ্ছে অভিবাসীদের স্বপ্ন

২৭ মে ২০১৭

জার্মানিতে বসবাসকে যে রকম মনে করা হয়, ভয়ংকর আমলাতান্ত্রিক অভিজ্ঞতা কিন্তু সেটাকে অনেকটা ম্লান করে দেয়৷ ডয়চে ভেলের এলিজাবেথ শুমাখার অভিবাসীদের সে রকম গল্পগুলোর দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন, যোগ করেছেন নিজের অভিজ্ঞতাও৷

https://p.dw.com/p/2dY7c
Bildergalerie Von Bagdad nach München
ছবি: Getty Images/AFP/A. Messinis

সাম্প্রতিক সময়ে উদ্বাস্তুদের স্বাগত জানানোর ফলে দেশটি সম্পর্কে ব্যতিক্রমধর্মী বার্তা পাচ্ছে বিশ্ববাসী৷ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে ইংরেজিতে গুরুত্বারোপ, দেশটির বিভিন্ন খাতের জন্য বিদেশে কর্মী খোঁজার মতো বিষয়গুলো এই অবস্থানকে শক্তিশালী করছে৷

তবে বাস্তবতার কষাঘাতে আশ্রয়প্রার্থী ভূক্তভোগীর চোখের জলে বাস্তবে তার অনেকটাই ভেসে যাচ্ছে৷ আমলাতন্ত্রের যে সব জায়গায় ‘স্বাগত জানানো' মানসিকতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সে সব জায়গাই হতাশ করছে তাদের৷

বৈদেশিক দপ্তরগুলো অভিবাসীদের শুনতে হচ্ছে নানা কথা৷ সেখানে কথা উঠছে ব্যক্তির জাত-পাত নিয়েও৷ অনেককে বিদ্বেষপূর্ণ নানা কথাও শুনতে হচ্ছে৷ ‘‘দেয়ালে হেলান দেয়া বন্ধ করো, তোমরা এটাকে নোংরা করে দিচ্ছো'' – চিৎকার করে বলা এমন কথাও শুনে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন একজন আশ্রয়প্রার্থী৷

জার্মানিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ভিড়
জার্মানিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ভিড়ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul

কোলন এবং ফ্রাইবুর্গে লেখক নিজেও এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হয়েছেন, যে অভিজ্ঞতা নিতে হবে – এমনটা তিনি কল্পনাও করেননি৷ যে অভিজ্ঞতায় তিনি খুঁজে পেয়েছেন জার্মান অভিবাসন আইনের গলদও৷

তিনি জানান, নানা ধরনের কাগজপত্র দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি৷ উভয়পক্ষের সম্মতিতে সময় দিয়েও এমনকি তিনঘণ্টা তাকে ঠায় ফ্লোরে বসে অপেক্ষা হয়েছে৷ ১০ লাখ মানুষের শহরে ওয়েটিং রুমে চেয়ার ছিল মাত্র আটটা৷

‘‘স্পষ্টতই বিপরীত প্রমাণ থাকলেও এমন ধারণা করা যে, আমি সম্ভবত জার্মান শিখতে পারবো না৷ এ কারণে একটা বিশেষ কোর্স ধরিয়ে দেয়ার মত ঘটনাও ঘটেছে৷''

‘‘কিন্তু আমি একজন অ্যামেরিকান, এসেছি ‘শিক্ষার্থী-ভিসায়'৷ সাধারণদের যে রকম অবমাননাকর এবং অপমানকর যে সব অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হয়, এটা তার তুলনায় সামান্যই৷''

হিজাবে উদ্বেগ

ভিরাজেশ নামে একজন ভারতীয় একাডেমিককে মাত্র দুই সপ্তাহের ভিসা দেয়া হয়৷ এ জন্য তিনি এখানকার বৈদেশিক দপ্তরে যোগাযোগ করেন৷ যেখান থেকে তাকে বার্লিন অফিসে যেতে বলা হয়৷ সেখানে এক ভদ্রমহিলা আমার কাগজপত্র দেখে বললেন, ‘‘ওহে চিন্তিত হইয়ো না৷ সমস্যা তো তুমি না৷ যারা হিজাব করছে, সমস্যা তারা৷''

রাজেশের মতে, ইসলাম-ভীতিতেই এটা শেষ হয়ে যায় না৷ তারা তোমার ত্বক দেখবে, দীর্ঘশ্বাস ফেলবে, ধীরে ধীরে কথা বলতে শুরু করবে৷ ধরেই নেবে, তুমি জার্মান ভাষা জানো না৷

দক্ষতার জন্য খ্যাতি লাভ করা একটা দেশে এই ক্রান্তিকালে যোগাযোগ ভেঙে পড়েছে৷

ইসরায়েলের সাংবাদিক ইয়েল বলেন, সোজা ভাষায় একটা কথা বলি, এখানকার শুরুটা ভয়ংকর৷ যখন আপনি প্রচণ্ড মানসিক চাপে আছেন, তখন এরা তাদের হাতে আপনার ভবিষ্যৎ নিয়ে বসে আছে৷ কে আগে ডাক পাবে, কিসের ভিত্তিতে এই ক্রম নির্ধারিত হবে –তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই৷ বসার মত কোন জায়গাও নেই৷

ইয়েল যখন কোলনে বিদেশ দপ্তরে তার কাজের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তখন তিনি সেখানে একজন অভিবাসী নারীকে দেখেন, যিনি তার সন্তানকে প্রবোধ দিচ্ছিলেন৷ তিনি জানান, এ সময় এক লোক উঠে আমাদের দিকে আসলো, ক্রম উচ্চস্বরে চিৎকার করতে করতে বলতে লাগলো ‘‘দেয়ালে হেলান দেয়া বন্ধ করো, তোমরা এটাকে নোংরা করে দিচ্ছো৷''

ইয়েল ডয়চে ভেলেকে বলেন, একজন ইহুদি জার্মানিতে কী শুনতে চাইবে-বিষয়টা তেমন নয়৷ তবে সেদিন আমি অনেক কেঁদেছিলাম৷

‘এটা আমার সমস্যা না'

চোখের পানি এখানে খুব সস্তা হয়ে গেছে৷ যারা নিজের কথাগুলো বলতে চায়, এটা কেবল তাদের মধ্যেই না৷ বরং বৈদেশিক দপ্তরের সাধারণ দৃশ্য এটা৷ দক্ষিণের শহর ফ্রাইবুর্গে আমি আমি বেইজিং থেকে আসা এক ব্যক্তিকে কাঁদতে দেখেছি৷

ওই ব্যক্তির বস তাঁর কাজের দৈর্ঘ্য ১০ ভাগ কমিয়ে দিয়েছেন৷ এরফলে তিনি আর জার্মানি থাকতে পারবেন না বলে তাকে জানিয়ে দেয়া হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার বাচ্চারা এখানকার স্কুলে পড়ে৷ আমার স্ত্রীও এখানে একটা খণ্ডকালীন চাকুরি করে৷ তার বন্ধু-বান্ধবরাও এখানেই৷ আমাদের জীবন এখানেই জড়িয়ে আছে৷''

এর জবাবে তাকে বলা হয়, ‘‘এটা আমার সমস্যা না৷ এখানে থাকতে আয়ের যে শর্ত রয়েছে, তোমার সেটা নেই৷''

‘‘এটা আমার সমস্যা না'' – এ রকম কথা আমি ফ্রাইবুর্গে হরহামেশাই শুনেছি৷ লিয়া নামে একজন কানাডিয়ান জানিয়েছেন, ফ্রাংকফুর্টেও তাকে এটা শুনতে হতো৷

পৌঁছানোর সময় তাকে বলা হয়, দু'মাস আগে যেন তিনি ভিসা নবায়নের জন্য আবেদন করেন৷

সে অনুসারে আবেদন করলে তাকে বলা হয়, তোমার ভিসা অগাস্টে শেষ হয়ে গেলে আমি কী করবো৷ আমি তোমাকে জানুয়ারিতে সাক্ষাৎকারের দিন দিতে পারি৷

জার্মানিতে অভিবাসীদের স্বাগত জানানো হচ্ছে বলে প্রচারণার মধ্যে যেখানে সবচেয়ে বেশি স্বাগত জানানো প্রয়োজন, সেখানেই এই মানসিকতার অভাব সবচেয়ে বেশি৷

এলিজাবেথ শুমাখার/এসএন

বন্ধু, কেমন লাগলো প্রতিবেদনটি? জানান নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য