জার্মানির জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে গ্যাস স্টোরেজ
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩জার্মানির গ্যাস সংরক্ষণ ভাণ্ডার সম্পর্কে কিছুদিন আগেও মানুষের তেমন ধারণা ছিল না৷ বর্তমানে এমন গ্যাস স্টোরেজ সবার নজর কাড়ছে৷ তার যথেষ্ট কারণও রয়েছে৷ জার্মানির জ্বালানি নিরাপত্তা এগুলির উপর নির্ভরশীল৷
বাভারিয়ার লাইপফিঙার বাডার ব্রিক মেকার্স নামের কোম্পানির ইটভাটার মতো উৎপাদন কেন্দ্র ভবিষ্যৎ গ্যাস ভাণ্ডারের মাত্রার উপর নির্ভর করছে৷ গ্যাস না পেলে পারিবারিক এই কোম্পানির চুলা বন্ধ হয়ে যায়৷ কোম্পানির প্রতিনিধি কাটেরিনা বাডার বলেন, ‘‘এই হলুদ রেখাগুলির মধ্য দিয়ে গ্যাস ওভেনে চলে যায়৷ তারপর ইট গরম হয় ও পোড়ানো হয়৷''
গ্যাস স্টোরেজ পরিপূর্ণ থাকলে উৎপাদন নিশ্চিত থাকে৷ এমনকি শীতের মাসগুলিতে জার্মানিতে আমদানির তুলনায় গ্যাসের চাহিদা বেড়ে গেলেও ঘাটতি মেটানো সম্ভব হয়৷
কিন্তু এমন গ্যাস স্টোরেজ কীভাবে কাজ করে? ইটভাটা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ভল্ফার্সব্যার্গে জার্মানির গভীরতম গ্যাস স্টোরেজ অবস্থিত৷ সেটি আসলে পোর স্টোরেজ৷ নক্সায় শুধু চূড়া দেখা যায়৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি মাটির ৩,০০০ মিটার গভীরে রয়েছে৷ সেখানে ছিদ্রযুক্ত শিলার মধ্যে গ্যাস জমা রাখা হয়৷ কোটি কোটি বছর পুরানো পাথর স্পঞ্জের মতো গ্যাস শুষে নেয়৷ পাথর ও মাটির স্তর এবং সেইসঙ্গে পানি গ্যাস লিক হতে দেয় না৷
সেখানে গ্যাসের পরিমাণ প্রতিনিয়ত পরিমাপ করা হয়৷ ভল্ফার্সব্যার্গ গ্যাস স্টোরেজের টোমাস রুপরিশ বলেন, এ দিনের মাপ ৯৯ দশমিক দুই শতাংশ৷ পোর স্টোরেজ ভরতে বা খালি করতে ১৫০ দিন সময় লাগে৷
তথাকথিত স্টোরেজ প্রক্রিয়া শুধু সময়সাপেক্ষ নয়, বেশ জটিলও বটে৷ বিশাল এক পাইপের মধ্যে সেই কাজ শুরু হয়৷ ভল্ফার্সব্যার্গ গ্যাস স্টোরেজের প্রতিনিধি হর্স্ট গাইয়ার বলেন, ‘‘গ্রীষ্মকালে এখানে গ্যাস ভরা হয় এবং শীতকালে এখান থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস বেরিয়ে যায়৷ আগে মূলত রাশিয়া থেকেই গ্যাস আসতো৷ পরিমাপের মাত্রার ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি, যে রাশিয়া থেকে আর গ্যাস আসছে না৷ নরওয়ে বা এলএনজি সূত্রে গ্যাস আনা হচ্ছে৷''
শিলার ক্ষুদ্র ছিদ্রের মধ্যে যতটা সম্ভব গ্যাস জমা রাখতে গ্যাসের চাপ বাড়িয়ে দেওয়া হয়৷ তথাকথিত কম্প্রেসার নামের বিশাল যন্ত্রের মাধ্যমে সেই কাজ করা হয়৷ চাপ বাড়ানোর ফলে গ্যাস উত্তপ্ত হয়ে ওঠে৷ শেষে গ্যাস আবার শীতল করা হয়৷ তারপর পাতালের দ্বারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷ দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে গ্যাস গন্তব্যে পৌঁছয়৷ টোমাস রুপরিশ বলেন, এটা স্টোরেজের শিলা৷ এই শিলার মধ্যে অনেক স্তর রয়েছে, অর্থাৎ অনেক ছিদ্রে ভরা৷ উচ্চ মাত্রায় চাপের মাধ্যমে আমরা সেই ছিদ্রে গ্যাস জমা রাখি৷''
জোগানের তুলনায় চাহিদা বেড়ে গেলে স্টোরেজ থেকে গ্যাস বার করে উষ্ণ করা হয়৷ চাপ কমিয়ে দেওয়া হয়৷ তারপর সেই গ্যাস বাইরে পাঠানো হয়৷ সবকিছু ঠিকমতো চললে ভল্ফার্সবার্গের গ্যাস স্টোরেজ এক বছর ধরে তিন লাখ ঘরবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ করার ক্ষমতা রাখে৷ রুপরিশ বলেন, ‘‘কোনো বছর সত্যি ভীষণ শীত পড়লে কী হবে, সেটা ভাবলেই শুধু অস্থিরতা সৃষ্টি হয়৷ কারণ গ্যাস স্টোরেজ পুরো ভরা থাকলেও এমন শীতকালে আমাদের সমস্যা হবেই৷''
অত্যাধুনিক গ্যাস স্টোরেজ সত্ত্বেও সে ক্ষেত্রে চুলা বন্ধ রাখতে হবে এবং অনেক কারখানার কাজ থেমে যাবে৷
মারি সিনা/এসবি