জার্মানির অর্থনীতি হঠাৎই মন্থর
১৮ আগস্ট ২০১৪দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শিল্পোন্নত দেশ ও সমৃদ্ধ অর্থনীতি হিসেবে জার্মানির পুনরুত্থানকে বলা হতো জার্মানির ‘‘উইর্টশাফ্ট্স্ভুন্ডার'' বা অর্থনৈতিক আশ্চর্য৷ নতুন সহস্রাব্দের প্রথম দশকে বিশ্ব তথা ইউরোপ যে ঋণ ও আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে, তা থেকেও জার্মান অর্থনীতি নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পেরেছে - জার্মানরা যাকে আখ্যা দিয়েছে, তাদের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক আশ্চর্য৷
জার্মান রাজনীতিকরা তাদের অর্থনীতিকে বলেন ইউরোপের ‘প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন' এবং ইউরো মুদ্রার ‘স্থিতিশীলতার নোঙর'৷ কিন্তু গত সপ্তাহে জার্মানির ফেডারাল পরিসংখ্যান দপ্তর জানায় যে, ২০১৪ সালের দ্বিতীয় তিন মাসে জার্মান অর্থনীতি, অর্থাৎ পণ্য ও পরিষেবার বিচারে দেশের সামগ্রিক উৎপাদন শূন্য দশমিক দুই শতাংশ সংকুচিত হয়েছে৷
এই দুরবস্থার জন্য দায়ী কে? স্বভাবতই রাশিয়ার সঙ্গে কোন্দলকে দোষ দেওয়া হচ্ছে, বিশেষ করে মিডিয়ায়৷ কিন্তু ইউরোপ মাত্র গত মাসে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ঘোষণা করে এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন তার পাল্টা ব্যবস্থা নেন৷ বছরের তৃতীয় কোয়ার্টারের আগে জার্মান অর্থনীতি পুটিনের সেই পাল্টা ব্যবস্থার আঁচ অনুভব করবে না৷ তাহলে কি রোগের সূত্র অন্য এবং অন্যত্র?
অর্থনীতিবিদ এবং সরকারি আমলাদের একাংশ বলছেন, ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পর চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল যে পারমাণবিক শক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে অগ্রাধিকার দিতে শুরু করেন, তা'তেই জার্মান শিল্প নার্ভাস হয়ে পড়েছে৷ নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংক্রান্ত করের বণ্টন নিয়ে যে আইন, সম্প্রতি তার সংস্কার করা হলেও ভবিষ্যতে সরকারি নীতি কি হবে এবং সাধারণভাবে জার্মানিতে জ্বালানির দাম প্রতিযোগিতামূলক কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ দূর হয়নি৷
যে সব শিল্পে প্রচুর পরিমাণ জ্বালানি খরচ হয়, বিশেষ করে তারাই জার্মানির উপর আস্থা হারিয়েছে৷ অপরদিকে চ্যান্সেলর পদে ম্যার্কেলের পূর্বসুরি গেরহার্ড শ্রোয়ডার যে সব অর্থনৈতিক সংস্কার চালু করেছিলেন, ম্যার্কেলের নেতৃত্বাধীন ‘বৃহৎ জোট' সেগুলো ফিরিয়ে নিচ্ছে, বলে লোকের ধারণা হতে চলেছে৷ গত ডিসেম্বরে ক্ষমতায় আসা যাবৎ বৃহৎ জোট এক পর্যায়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের অবসরগ্রহণের বয়স কমিয়েছেন এবং সারা দেশে ন্যূনতম মজুরি চালু করেছেন: দিনে আট ইউরো ৫০ সেন্ট৷
সরকারের এই সব পদক্ষেপের একটি অপ্রত্যাশিত ফল হয়েছে এই যে, জার্মান শিল্পসংস্থাগুলির স্বদেশে বিনিয়োগ করার প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে৷ গতবছর যন্ত্র ও সাজসরঞ্জামের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমে দাঁড়িয়েছে জিডিপি'র ছয় দশমিক দুই শতাংশে - যা কিনা একটা নেতিবাচক রেকর্ড৷ সেই সঙ্গে রয়েছে সরকারি বিনিয়োগের ঘাটতি, যা নাকি জিডিপি'র তিন শতাংশ অর্থাৎ বছরে প্রায় আট হাজার কোটি ইউরো৷
অপরদিকে এ'ও সত্য যে, জার্মানিতে বেকারত্বের হার দুই জার্মানির একত্রীকরণ যাবৎ প্রায় সর্বনিম্ন পর্যায়ে: ছয় দশমিক সাত শতাংশ৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যাবৎ এই প্রথম জার্মানির সরকারি ঋণ কমেছে - ২০১৩ সালে৷ ২০১৫ সালের বাজেটেই আর কোনো নতুন ঋণ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে না৷ কাজেই জার্মানি বিপর্যয়ের মুখে, এ'কথা ভাবলেও ভুল করা হবে৷
এসি/জেডএইচ (রয়টার্স)