পারমাণবিক শক্তি বর্জনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ জার্মানি
২৪ জুন ২০১১২০২২ সাল পর্যন্ত পারমাণবিক শক্তিকেই সাশ্রয়ী প্রযুক্তির পথে যাত্রার বাহন হিসেবে ধরা হচ্ছে৷ যার মধ্য দিয়ে জার্মানি নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগে প্রবেশ করতে পারবে৷ এই যুক্তিতেই চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল এবং তাঁর জোটসঙ্গী এফডিপি পারমাণবিক শক্তি থেকে বের হয়ে আসার জন্য এই সময়টাকে বেছে নিয়েছেন৷
জার্মানিতে বিভিন্ন উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়৷ এরমধ্যে এক চতুর্থাংশ আসে পারমাণবিক শক্তি থেকে৷ ১৭ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় বায়ু, সৌর, জল ও জৈব উপাদান থেকে৷ এছাড়া ৫০ শতাংশ কয়লা ও গ্যাসের মতো জীবাশ্ম থেকে আসে৷ জার্মানি যদি জলবায়ু পরিবর্তন রোধের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে চায়, সেক্ষেত্রে জীবাশ্ম জ্বালানি বিশেষ করে কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের হার বাড়াতে পারবে না বলে মত দিলেন জার্মান জ্বালানি সংস্থার প্রধান স্টেফেন কোহলার৷
জার্মানির বন শহরে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. আনসারুল করিম৷ জার্মানির পারমাণবিক শক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পরিকল্পনা এবং বিকল্প জ্বালানির উৎস সম্পর্কে তিনি ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বললেন, ‘‘বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের উপর এর প্রভাব যদি আমরা বিবেচনা করি তাহলে আমাদেরকে দেখতে হবে যে, জলবায়ু পরিবর্তনে পারমানবিক শক্তি কেন্দ্রগুলোর ভূমিকাটি কি? পারমানবিক শক্তি কেন্দ্রকে আমরা জলবায়ুর পরিবর্তন রোধের অন্যতম একটা লক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করার আমরা পরামর্শ দিয়েছিলাম৷ কিন্তু তার নিরাপত্তাজনিত কারণে এই বিষয়টিকে আমরা অনুৎসাহিত করছি৷ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশও একে নিরুৎসাহিত করছে কেবল নিরাপত্তার কারণে৷ কার্বন নির্গমন রোধে এর ভূমিকা থাকলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে সেই ভূমিকাটা এখন আমাদের কাছে গৌণ হয়ে গেছে৷''
জার্মান কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, ২০২০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ কার্বন নির্গমন কমাবে৷ এটার কারণে পারমাণবিক জ্বালানির বিকল্প খুঁজতে গিয়ে মিশ্র মতামত পাওয়া যাচ্ছে৷ কোহলারের মতে, পারমাণবিক শক্তি থেকে বেরিয়ে আসার ফলে শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনই নয়, বরং জ্বালানি এবং বিদ্যুতের চাহিদা, সংরক্ষণ ও বিতরণের উপরও এর প্রভাব পড়বে৷
তবে জার্মান সরকারের পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের মুখপাত্র মার্টিন ফাউলসটিশ বলেন, অর্থনৈতিক দিক থেকে সবচেয়ে সাশ্রয়ী জ্বালানি পেতে এখনও বেশ সময় লাগবে৷ তবে তাঁরই সহকর্মী ওলাভ হোমায়ার আরো একধাপ এগিয়ে বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে জ্বার্মানি পুরোপুরি সবুজ জ্বালানি পেতে পারে, যদি সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংরক্ষণ ও উৎপাদন কারখানা সম্প্রসারিত করতে পারে৷
বিজ্ঞানীরা অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করেছেন এইজন্য যে তাঁরা এখনও বিকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহের সাশ্রয়ী বিকল্প পরিকল্পনা তুলে ধরতে পারেনি৷
কার্বনের তুলনায় গ্যাসকে যদি বিকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয় সেক্ষেত্রে অবশ্য কার্বন নির্গমনের মাত্রা কম থাকে৷ ফলে গ্যাসকে সবুজ জ্বালানির জন্য পরবর্তী সেতুবন্ধ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে৷
অধ্যাপক ড. আনসারুল করিম বললেন, ‘‘২০২২ সালে যদি তারা সুইচ অফ করে, সেক্ষেত্রে বিকল্প দু'টি পথ আছে৷ নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যেতে পারে৷ কিংবা যেতে পারে জীবাশ্ম বা কয়লা, তাল ইত্যাদির মত প্রথাগত জ্বালানির দিকে৷ এই দু'টোর মধ্যে তারা কোনটাতে যাচ্ছে সেটার উপর নির্ভর করবে জলবায়ু পরিবর্তনের উপর এর প্রভাবটা কী হবে? প্রযুক্তিগত দিক থেকে তারা অনেক দূরে এগিয়ে গেছে৷ তারা যদি শুধু নবায়নযোগ্য জ্বালানির সুইচ অফ করে তাহলে আবহাওয়ার উপর এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে৷ আর তারা যদি এটা না করে পেট্রোল বা কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভর করে তাহলে এটা জলবায়ুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে৷''
প্রতিবেদন: জান্নাতুল ফেরদৌস
সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দোপাধ্যায়