জার্মানিতে শিশুর যৌন নিপীড়কদের বিচার শুরু
১৭ জুন ২০১৮শিশু নির্যাতনের এই ঘটনায় কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার ব্যাপারেও কেউ কেউ অভিযোগের আঙুল তুলেছেন৷
গেল সপ্তাহে জার্মানির আদালত তদন্তকারীদের হাতে আটক শিশুটির মা ও তার প্রেমিকের বিরুদ্ধে ৫৫টি ঘটনার ১০০ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র পড়ে শোনান৷ এর মধ্য দিয়ে ঘটনার জন্য দুই প্রধান অভিযুক্তের বিচার শুরু হলো৷
এ বছরের জানুয়ারিতে ইন্টারনেটের ডার্ক ওয়েবসাইটগুলোতে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে তদন্তে নামার পর জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ফ্রয়েরবুর্গ শহরের কাছে স্টাউফেন এলাকায় ৯ বছর বয়সি ওই বালকের ওপর যৌন নিপীড়নের ব্যাপারটির সত্যতা পান তদন্তকারীরা৷
অভিযোগপত্রে বলা হয়, শিশুটির ৪৮ বছর বয়সি মা বেরিন টি-র সহায়তা নিয়ে তার প্রেমিক ৩৯ বছর বয়সি ক্রিশ্চিয়ান ল যৌন নিপীড়ন চালিয়েছে শিশুটির ওপর৷ এর সাথে আরও বেশ কয়েক ব্যক্তিও জড়িত ছিল৷ এক পর্যায়ে ছেলে শিশুটিকে ধর্ষণ ও নিপীড়নের ভিডিও ডার্ক নেটে ছাড়া হয়৷
ডার্ক নেট হচ্ছে এমন এক ইন্টারনেট ব্যবস্থা, যাতে বিশেষ সফটওয়্যার ছাড়া ঢোকা সম্ভব নয়৷
শিশুটির মা বেরিন এবং প্রেমিক ক্রিশ্চিয়ান ল কেবল শিশুটির ওপর নির্যাতনচালিয়েই থেমে যায়নি৷ ডার্ক নেটের মাধ্যমে যৌনাচার করতে আগ্রহীদের কাছেও অর্থের বিনিময়ে তারা শিশুটিকে যৌনসঙ্গী হতে বাধ্য করেছেন নানাভাবে৷
জার্মান পত্রিকা জুডডয়েচেস সাইটুং জানিয়েছে, এর আগেও ক্রিশ্চিয়ান ল ২০০৫ সালে তার কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনে শিশুদের পর্নোগ্রাফি থাকার কারণে এক বছরের সর্তকতামূলক শাস্তি পেয়েছিলেন৷ ২০১০ সাল ১৩ বছর বয়সি এক নাবালিকাকে যৌন হয়রানি করায় চার বছর জেল খাটতে হয় তাকে৷
দুই ক্ষেত্রেই ক্রিশ্চিয়ানকে মানসিক চিকিৎসা নেওয়ার কথা বলা হয় এবং সে তাতে রাজি হয়৷ ২০১৪ সালে ক্রিশ্চিয়ান যখন কারাগার থেকে ছাড়া পায়, তখনও সে মানসিক বিকারগ্রস্ত ছিল এবং তাকে আইন কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছিল শিশুদের সাথে মেলামেশার ব্যাপারে৷
বলা হয়েছিল, ক্রিশ্চিয়ান তখনই কোনও শিশুর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবেন যখন ওই শিশুর বাবা-মা অথবা আইনগত অভিভাবক উপস্থিত থাকবে৷
২০১৭ সালের মার্চ মাসে একজন পুলিশ কর্মকর্তা যখন বলেন, ক্রিশ্চিয়ান যৌন নিপীড়নের শিকার ওই শিশুটির সাথে একই ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন, তখন শিশুটিকে রাষ্ট্রীয় হেফাজতে নেওয়া হয়৷ কিন্তু শিশুটির মা বেরিন ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করলে তাকে আবার রাষ্ট্রীয় হেফাজত থেকে বাড়িতে পাঠানো হয়৷ আদালতের আদেশ উপেক্ষা করেই ক্রিশ্চিয়ান ল ওই শিশুটির সাথে যোগাযোগ রাখতে শুরু করে৷
স্থানীয আদালত এবং ইউথ ওয়েলফেয়ার অফিসের বিরুদ্ধে এ জন্য দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে৷
কিন্তু ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে যখন ফেডারেল পুলিশ অফিসের কাছে ৯ বছর বয়সি শিশুটিকে যৌন নিপীড়নের ব্যাপারে বেনামি একটি বার্তা আসে, তখন ক্রিশ্চিয়ান ল এবং বেরিন টিকে গ্রেপ্তার করে জোর তদন্তে নামা হয়৷
কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তারা নিপীড়কদের আরও ছয়জনকে শনাক্ত করে ফেলে৷ ফলে শিশুটির যৌন নিপীড়নকারীদের সংখ্যা দাঁড়ায় আট৷ তারা প্রত্যেকেই পৃথকভাবে শিশুটিকে যৌন নিপীড়ণন করেছেন বা সেই চেষ্টায় জড়িত ছিলেন৷ এদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে বিচারের সম্মুখীন হয়েছেন৷
৪১ বছর বয়সি এক জার্মানকে মধ্য এপ্রিলে ধর্ষণ এবং ওই শিশুটির ওপর নিদারুণ যৌন নিপীড়ন চালানোর অভিযোগে দশ বছরের জেল দেওয়া হয়৷
জার্মান সেনাবাহিনীর একজন ৫০ বছর বযসি সিপাহীকে ওই বালককে দুইবার ধর্ষণ এবং তার পর্নোগ্রাফিক ভিডিও অনলাইনে প্রকাশ করার অভিযোগে ৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়৷
এছাড়া অপর এক সুইস নাগরিক জুনের প্রথম সপ্তাহে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অপরাধ স্বীকার করে বলেন, শিশুটির প্রতি মোট তিনবার যৌন নিপীড়ন চালিয়েছেন তিনি৷ আর এজন্য তার দিতে হয়েছে ৫০ ইউরো এবং শিশুটিকে একটি চিজ বার্গার এবং একটি ব্যবহৃত কম্পিউটার৷
গেল সোমবার ৪৪ বছর বয়সি আরও একজন জার্মান নাগরিকের বিচার শুরু হয়েছে৷ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ডার্ক নেটে ক্রিশ্চিয়ান ল-কে শিশুটিকে যৌন নিপীড়নের পর হত্যার প্রস্তাব দিয়েছিল সে৷
দুই বছর ধরে স্টাউফেনের ওই বালকের ওপর চলা নিপীড়ণের ভয়ঙ্কর সব তথ্য বেরিয়ে আসছে৷ আর এর মধ্য দিয়ে ওই বালকের নিরাপত্তার ফাটলগুলোও জনসমক্ষে আসছে৷
রেবেকা স্টাউডেনমায়ার /এইচআই