1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে লোকসংস্কৃতির অর্থ কী?

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

ইউরোপ মানে প্রায় তিন হাজার বছরের একটানা ইতিহাস৷ জার্মানির মতো একটি ইউরোপীয় দেশের লোকসংস্কৃতিতে অতীতের হাজার পদচিহ্ন আঁকা রয়েছে৷ বাণিজ্য আর শিল্পায়েনের চাপে সেই পদচিহ্ন কি আজ মুছে যেতে চলেছে?

https://p.dw.com/p/2psLf
ছবি: Stadtmarketing Herne

জার্মানির স্যাক্সনি রাজ্য আর চেক প্রজাতন্ত্রের বোহেমিয়ার মধ্যে পাওয়া যাবে তথাকথিত এর্ৎস পর্বতমালাকে৷ পর্বতমালা বলতে মাঝারি উচ্চতার কিছু পাহাড়ি – খুব আহামরি কিছু নয়, এককালের গরিব এলাকাই বটে৷ কিন্তু ক্রিসমাসের মরশুম এলে এই এর্ৎস বা আকর পর্বতমালার দু'টি জিনিসকে বাদ দিয়ে জার্মানির চলবে না৷ প্রথমটি হলো নাটক্র্যাকার বা বাদাম ভাঙার জাঁতি – তবে জাঁতির মতো দেখতে নয়, বরং পুরনো আমলের প্রাশিয়ান সৈন্যদের আদলে একটি কাঠের মূর্তি, যার চোয়ালের মধ্যে আখরোট রেখে চাপ দিয়ে সেই বাদাম ভাঙা যায়৷ জার্মান রূপকথা-উপকথায় নাটক্র্যাকারের উপস্থিতি সর্বত্র; পশ্চিমি মার্গসংগীতের জগতেও পাবেন প্রখ্যাত নাটক্র্যাকার সিম্ফনি৷

এর্ৎস পাহাড়ি থেকে আর আসে তথাকথিত ক্রিসমাস পিরামিড৷ এ হলো এক ধরনের ছোট রথ, যার চূড়ায় বসানো প্রপেলারটি মোমবাতির শিখার উত্তাপে ঘুরপাক খায় ও গোটা পিরামিডটিকে ঘোরায়৷ পিরামিডের প্রতিটি তলায় পরী আর পুতুলদের ভিড়৷ ক্রিসমাসে ঘর সাজানোর জন্য এত সুন্দর আর এক টুকরো লোকসংস্কৃতি জার্মানিতে খুঁজে পাওয়া ভার৷

এসে পড়া গেল আমাদের ব্লগের মূল বিষয়ে: লোকসংস্কৃতি৷ নাৎসি আমলের বাড়াবাড়ির পর জার্মানির মানুষজন বহুদিন লোকসংস্কৃতি থেকে একটু গা বাঁচিয়েই চলেছেন৷ আজ সে দ্বিধা ঘুচেছে বটে, কিন্তু তার জায়গায় এসেছে বাণিজ্য ও শিল্পায়নের চাপ – অর্থাৎ আপনার নাটক্র্যাকার বা ক্রিসমাস পিরামিড যদি শেষমেষ মেড ইন চায়না হয়, তো আশ্চর্য হবেন না৷ বলতে কি, গোটা জার্মানির ক্রিসমাস ডেকরেশানের কতো শতাংশ যে চীন থেকে আসে, সেকথা ভাবলে আর নাটক্র্যাকারের ওপর রাগ করতে পারবেন না, লোকসংস্কৃতির ওপরে তো নয়ই৷

আবার চীন দেশের মানুষ যে শুধু জার্মান লোকসংস্কৃতির বুনিয়াদি রসদ সরবরাহ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে, এমন তো নয়৷ চীনের মানুষ আজ সমৃদ্ধির মুখ দেখেছেন, তারা ইউরোপীয়দের মতো দুনিয়াটাকে ঘুরে দেখতে চান – বিশেষ করে ইউরোপকে৷ আর ইউরোপ – ধরুন জার্মানি, মানেই তো তার লোকসংস্কৃতি, নয় কি? কাজেই ট্রেন-ট্রেন চীনা টুরিস্ট ব্ল্যাক ফরেস্টে গিয়ে সেখানকার প্রথাগত ‘কাকু ক্লক' কিনে ফেলছেন, সেই ‘কোকিল ঘড়ি' শেষমেষ চীনে তৈরি কিনা, তা পরখ না করেই৷ টিটিজে লেকের পাশের সুভেনিরের দোকানের জার্মান মালিকও খুশি, কেননা টুরিজমের চাকা ঘোরাচ্ছে লোকসংস্কৃতি...৷

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
অরুণ শঙ্কর চৌধুরী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

ধরুন নুরেমবার্গের সুবিখ্যাত লেবকুখেন বা ক্রিসমাস বিস্কুট অর্থাৎ জিঞ্জারব্রেড৷ বস্তটি আজ শুধু বড়দিনে নয়, বরং প্রায় সারা বছর ধরে পাওয়া যায়; বড় বড় কারখানায় বড় বড় মেশিনে তৈরি কোটি কোটি লেবকুখেন প্যাকেটে ভর্তি হয়ে বিক্রির জন্য যায় হাজার হাজার সুপারমার্কেটে৷ যার অর্থ, লেবকুখেন চিরকালই জার্মান লোকসংস্কৃতির অঙ্গ ছিল এবং আজও আছে – অন্তত জার্মান বাণিজ্যের অঙ্গ হিসেবে, বিশেষ করে যদি অরিজিনাল জার্মান লেবকুখেনের রপ্তানির পরিমাণটাও দেখেন৷

বিশেষ বিশেষ পণ্যের কথা না বলে আসা যাক সর্বজনপ্রিয় ‘ফোল্ক্সফেস্ট' বা মোচ্ছবে – যেমন কোলোনের কার্নিভাল কিবা মিউনিখের অক্টোবরফেস্ট৷ দ্বিতীয়টিতে পুরুষদের লেডারহোজে আর মহিলাদের ডির্ন্ডল পোশাক তো প্রায় বাধ্যতামূলক বলা চলে৷ বাভেরীয়দের প্রিয় মেলা হলো বিশ্বের বৃহত্তম ফোল্কসফেস্ট; ১৮১০ সাল থেকে চলে আসছে; ২০১৭ সালের অক্টোবরফেস্টে এসেছিলেন প্রায় ৭২ লাখ অতিথি, তারা পান করেছেন ৭০ লাখ লিটার বিয়ার৷ অক্টোবরফেস্টের আয়োজক হলো মিউনিখ পৌর প্রশাসনের শ্রম ও অর্থনীতি বিভাগ৷ মিউনিখের কিছু কিছু ব্রুয়ারি অক্টোবরফেস্টের জন্য একটি বিশেষ বিয়ার বাজারে ছাড়তে শুরু করেছে...৷

লোক সংস্কৃতির হদ্দ আর কি!

এ বিষয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য