জার্মানিতে যেভাবে সস্তায় ভালো খাবার মেলে
১৯ জুলাই ২০১৯কিছুক্ষেত্রে সেটা সত্যি বটে৷ জার্মানিতে আলডি এবং লিডলের মতো ডিসকাউন্টারগুলোতে কিছু খাবার পাওয়া যায় যেগুলোর দাম বাংলাদেশে একই ধরনের খাবারের চেয়ে কম৷ উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি আলু, পেয়াজ আর দুধের কথা৷ এগুলো বাংলাদেশের চেয়ে সস্তায় জার্মানিতে কিনেছি আমি৷ মাঝে মাঝে ভাবি, জার্মানরা খাদ্যের দাম কম রাখে কীভাবে?
জার্মানিতে রেভে বা হিট এর মতো সুপারমার্কেটগুলোর তুলনায় আলডি, লিডলের মতো ডিসকাউন্টারে পণ্যের দাম কম থাকে৷ তবে পণ্যের দাম কম মানেই কিন্তু খারাপ পণ্য নয়৷ আসলে ডিসকাউন্টারে অধিকাংশ পণ্যই কম দামে বিক্রি করা হয়৷ সেখানে পণ্যের বৈচিত্র কম থাকে৷ অর্থাৎ আপনি যদি রেভেতে যান, সেখানে হয়ত বিশটি প্রতিষ্ঠানের পিজ্জা পাবেন যেগুলো নানা দামে বিক্রি হচ্ছে৷ অন্যদিকে, আলডিতে পাবেন পাঁচ প্রতিষ্ঠানের পিজ্জা, যেগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে কম৷
আলডি থেকে আমি নিয়মিত বাজার করি এবং দামের কারণে মাঝেমাঝেই বিস্মিত হই৷ পুরো কার্ট ভর্তি করে বাজার করেছি এবং বিল একশো ইউরো হয়েছে, এমন ঘটনা এখন অবধি একবারও ঘটেনি আমার ক্ষেত্রে৷ অথচ একই বাজার যদি কোন সুপারমার্কেটে করতাম, তাহলে বিল নিশ্চিতভাবে শত ইউরো পার হতো৷
মাঝেমাঝে চিন্তা করি, আলডি সস্তায় পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে খদ্দেরদের ঠকাচ্ছে নাতো? এটা নিয়ে অনেক ঘেটেছি৷ আলডি এবং লিডলের ক্ষেত্রে যেটা নিশ্চিত হয়েছি তা হচ্ছে প্রতিষ্ঠান দু'টো এমন এক ফুড চেইন অনুসরণ করে যেখানে ম্যানেজমেন্ট এবং লজিস্টিকের খরচ কমানো হয় প্রযুক্তির সহায়তায়৷
খেয়াল করলে দেখবেন, জার্মানির ডিসকাউন্টারগুলোর পণ্যে একাধিক বারকোড থাকে৷ এতে করে ‘চেকআউটে' সময় কম লাগে৷ আবার পণ্যগুলো এমন করে প্যাকেটে ভরা হয় যাতে ডিসকাউন্টারগুলোতে কম শ্রমশক্তি ব্যয় করে স্বল্পসময়ে সেগুলো গুছিয়ে রাখা যায়৷ ফলে একেকটি বিশাল আলডি স্টোর পরিচালনায় সাত থেকে আটজনের বেশি কর্মীর প্রয়োজন হয়না৷ পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক বড় হওয়ায় একজন সরবরাহকারীর কাছ থেকে অনেক পণ্য কেনে৷ অনেক সরবরাহকারী কাছে যারা শুধু এসব প্রতিষ্ঠানের জন্যই পণ্য উৎপাদন করে৷ এতে করে কম দামে পণ্য বিক্রি করা যায়৷
আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়৷ সেটি হচ্ছে ডিসকাউন্টারগুলো দীর্ঘদিন পণ্য জমিয়ে রাখতে চায় না৷ যে কারণে একবার কোন একটি পণ্য স্টোরে পাঠানোর পর সেটির মেয়াদোর্ত্তীণের বা বিক্রি শেষ করার তারিখ যত ঘনিয়ে আসে, ততই সেটির দাম কমিয়ে দেয়া হয় যাতে বিক্রি হয়ে যায়৷
খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অবশ্য ডিসকাউন্টার বা সুপারমার্কেটগুলোর চেয়েও বেশি সচেষ্ট ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকার এবং স্থানীয় রাজ্য কর্তৃপক্ষ৷ ইউরোপে কোন পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়া পরীক্ষানিরীক্ষার বিধান রয়েছে৷ মূলত সমুদ্রপথে খাদ্য পণ্য আসে ইউরোপের দেশগুলোতে৷ যেসব বন্দরে এসব পণ্য খালাস করা হয় সেখানে সেগুলো নিয়মিত পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়৷
কোন একটি পণ্যে কোন কর্তৃপক্ষ যদি ক্ষতিকারক কিছু পায় সাথে সাথে সেটি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত সব কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়ার নেটওয়ার্ক রয়েছে৷ ফলে খুব দ্রুতই সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা যায়৷
জার্মানিতে গত একদশকে এরকম কয়েকবার ঘটতে দেখেছি৷ ২০১৭ সালে ডিমে একধরনের ক্ষতিকারক উপাদানের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস এবং জার্মানিতে কয়েক কোটি ডিম বাজার থেকে তুলে নিয়ে নষ্ট করে ফেলা হয়৷ একইবছর ব্রাজিল থেকে জার্মানিতে গরুর মাংস আমদানি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল কেননা পচা মাংস পেয়েছিল কর্তৃপক্ষ৷ এরকম উদাহরণ অনেক৷
আর স্থানীয় পর্যায়ে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব থাকে বিভিন্ন শহর কর্তৃপক্ষের উপর৷ সেসব কর্তৃপক্ষ চাইলে হঠাৎ করে যেকোনো স্টোরে পণ্য পরীক্ষা করার জন্য যেতে পারে, যেতে পারে সেসব প্রতিষ্ঠানের গুদামেও৷ পাশাপাশি একজন খদ্দেরও কোন অসঙ্গতি পেলে নির্ভয়ে অভিযোগ জানাতে পারেন৷
জার্মানিতে তাই সস্তায় খাদ্যপণ্য কিনলেও মানের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকা যায়৷ প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ এমন নিশ্চিন্তে খাদ্য পণ্য কিনতে পারবে কবে?