পাইরেটদের পরাজয়
২৮ জানুয়ারি ২০১৩নির্বাচনে হারার পর এতটা হাস্যরসের শিকার সম্ভবত কম দলই হয়েছি, যেমনটা ঘটেছে পাইরেটদের ক্ষেত্রে৷ তরুণ এই দল সম্প্রতি লোয়ার সাক্সনির নির্বাচনে বাজে ভাবে হেরেছে৷ রাজ্য সংসদের একটি আসনও জয় করতে পারেনি তারা৷ এই পরাজয়ের পর থেকেই গণমাধ্যমে তাদের নিয়ে খবর আসছে বিভিন্ন শিরোনামে: ‘ডুবে যাচ্ছে জাহাজ' , ‘পতাকা আর উড়ছে না', ‘পালে হাওয়া নেই' সহ নানা রকম শিরোনামে পাইরেটদের জায়গা দিচ্ছে পত্রিকাগুলো৷
সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ইতিমধ্যে একটি বিষয়ে ঐক্যমত্যেও পৌঁছে গেছেন৷ তা হচ্ছে, রাজনৈতিক অদক্ষতা সত্ত্বেও নজরকাড়া দলটি, যারা কিনা দেড় বছর আগে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিস্ময়কর সব জয় অর্জন করেছে, তারা এখন ধ্বংসের মুখে৷
অল্প কিছু বিশ্বস্ত সমর্থক
পাইরেটদের এই পতনের কারণও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে৷ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ কার্স্টেন কোস্মিডার মনে করেন, পাইরেটরা মানুষের মধ্যে বিস্ময় জাগিয়েছিল, কিন্তু সেই বিস্ময় দীর্ঘস্থায়ী হয়নি৷
সূচনালগ্ন থেকেই এই দলকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন কোস্মিডার৷ তিনি বলেন, পাইরেটদের যারা ভোট দিয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র দুই শতাংশ মানুষ দলটির স্বত্ব সংরক্ষণ নিয়মাবলীর সংস্কারের দাবি সম্পর্কে সচেতন৷ ফলে এই দলটি প্রায়শই সংসদে যেতে প্রয়োজনীয় পাঁচ শতাংশ ভোটের বেড়া অতিক্রমে ব্যর্থ হচ্ছে এবং যেসব অঞ্চলে সাধারণ মানুষ তাদের ভোট দিচ্ছে, শুধুমাত্র সেখানেই আসন দখলে সমর্থ হচ্ছে তারা৷
এখন পর্যন্ত বার্লিন, নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া, সারল্যান্ড এবং শ্লেসউইগ-হল্সটাইনে পাইরেটরা বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়েছে৷ কোস্মিডার বলেন, এসব এলাকার ভোটাররা অন্যান্য দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং পাইরেটদের সুযোগ দিয়েছে৷ তাদের ধারণা ছিল, পাইরেটরা সবকিছুই ভিন্নভাবে করবে৷
অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব
অথচ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্রমান্বয়ে ভুল কারণে সংবাদ শিরোনামে আসছে পাইরেটরা৷ আরো পরিষ্কারভাবে বললে, দলের নেতৃত্বে বিরোধ অত্যন্ত প্রকট আকার ধারণ করেছে৷কোস্মিডার এই বিষয়ে বলেন, ‘এখন বোঝা যাচ্ছে, পাইরেটরা আসলে মোটেই ব্যতিক্রম নন৷ অন্যান্য রাজনীতিবিদদের মতো তাদেরও একই ধরণের সমস্যা রয়েছে৷ তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে এবং কাঙ্খিত পদ প্রাপ্তির জন্য দরাদরি তারাও করে৷ সবকিছু বিবেচনায় আনলে তারা পুরোপুরি বাকিদের মতো৷'
বার্লিনের পাইরেট পার্টির প্রধান মার্টিন ডেলিয়ুস ডয়চে ভেলেকে জানান, তাদের যোগাযোগ ঘাটতি রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা ভুল করেছি৷ সামাজিক প্রশ্ন, নূন্যতম বেতন কাঠামো এবং ঐক্যবদ্ধ ইউরোপ ইস্যুতে আমাদের পরিষ্কার অবস্থান রয়েছে৷ এই অবস্থান ভবিষ্যতে আরো স্বচ্ছভাবে সবার কাছে পৌঁছাতে হবে৷'
কোস্মিডার মনে করেন, পাইরেটদের মধ্যকার ‘উম্মুক্ত লড়াই' আসলে তাদের অদক্ষতার প্রমাণ দেয়৷ আর পাইরেট নেতা তাদের যে অবস্থানের কথা বলছেন, তাঁর সঙ্গে সর্বশেষ নির্বাচনের আগে করা জরিপের তেমন মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ কেননা, পাইরেটদের পরিচিতি মূলত প্রযুক্তি নির্ভর একটি দল হিসেবে যারা ইন্টারনেট স্বত্ব সংস্কারে বদ্ধপরিকর৷ বলাবাহুল্য, রাজনীতির মাঠে পাইরেটদের এই পরিচয় এখন আর যথেষ্ট নয়৷