জার্মানিতে কেউ ‘চাষি’ হতে চায় না...
২৯ নভেম্বর ২০১৬পরিস্থিতি নতুন কিছু নয়৷ বছর পাঁচেক আগে একটা ধুয়ো উঠেছিল যে, জার্মান কৃষিতে একটা ‘নাখভুক্স-প্রবলেম' দেখা দিয়েছে বা দিতে চলেছে৷ ‘নাখভুক্স' বলতে বোঝায় তরুণ প্রজন্ম বা পরের প্রজন্ম – এক কথায় কমবয়সি লোকজন, তা তাঁরা খামারমালিকই হন আর খামারের কর্মচারী বা প্রশিক্ষণার্থীই হন৷
বহু কৃষিজীবী নাকি চিন্তায় পড়েছিলেন, তাঁরা ছেড়ে দেবার পর তাঁদের সাধের খামারের কী হবে, কে তার ভার নেবে অথবা কিনবে৷ ২০১০ সালের একটি জরিপ অনুযায়ী নাকি ৪৫ বছরের বেশি বয়সের খামারমালিকদের ক্ষেত্রে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ মোটামুটি জানতেন, তাঁদের পর কে খামারের দায়িত্ব নেবে৷ খামারগুলোয় ‘আউসসুবিল্ডেন্ডে' বা প্রশিক্ষণার্থীদের সংখ্যাও কমছে বছরের পর বছর৷ ওদিকে জার্মান কৃষিজীবীদের এক-তৃতীয়াংশের বয়স নাকি ৫৫ পেরিয়েছে৷ আগেই বলা হয়েছে, এ সব হল ২০১০ সালের খবর৷
২০১২ সালে দক্ষিণ জার্মানির বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ রাজ্য থেকে খবর আসে, মাত্র ২০ শতাংশ খামারের ক্ষেত্রে বর্তমান কৃষিজীবী অবসর নেবার পর কে খামারের ভার নেবেন, তা নিশ্চিত৷ এর পিছনে যে মানবিক ট্র্যাজেডি লুকিয়ে রয়েছে, তা বোঝা যায় গেবহার্ড হাইম ও তাঁর স্ত্রীর কাহিনি থেকে৷ হাইম দম্পতি বোডেনজে হৃদের কাছে একটি পশুপালনের খামার চালাতেন৷ তাঁদের পাঁচ সন্তানের মধ্যে কেউই সেই খামারের ভার নিতে রাজি নন৷ কৃষিকাজ মানে নাকি বড় বেশি পরিশ্রম, বড় কম অবসর, বড় নীচু পারিশ্রমিক৷ কমবয়সিদের তাতে রুচি নেই৷
পূর্বাঞ্চলে
পুনর্মিলনের পর জার্মানির পূর্বাঞ্চলে এই সমস্যা ধীরে ধীরে আরো সঙ্গীন হয়ে দাঁড়ায়, কেননা কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানিতে চাষ করা হতো কৃষি উৎপাদন সমবায়ের ভিত্তিতে, সরকারি পরিভাষায় যার নাম ছিল এলপিজি৷ পুনর্মিলনের পরেও পূর্বাঞ্চলের খামারগুলো অপেক্ষাকৃত বড় আকারের রয়ে গেছে; কর্মচারীরাই এখানে মূলত খামারের কাজ সারেন৷ কাজেই এখানে ‘নাখভুক্স' বলতে বোঝাবে প্রধানত ট্র্যাক্টর-চালক থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়ার বা খামার ম্যানেজার অবধি সব ধরনের কর্মচারী৷ ওদিকে পূর্ব জার্মানি থেকে তরুণরা পশ্চিমে পালাতে আকুল৷
বুলগেরিয়া কিংবা রাশিয়ার মতো পুবের কৃষিধর্মী দেশ থেকে লোক এনে কৃষি কর্মচারীর অভাব পূরণের আশা আশাই থেকে গেছে৷ এমনকি সিরিয়া বা ইরাক থেকে সম্প্রতি যে সব উদ্বাস্তুরা এসেছেন, তাদের দিয়েও সে অভাব মেটানো যায়নি, কেননা জার্মান কৃষি অনেক বেশি আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর; উদ্বাস্তুরা কৃষিকাজ বলতে যা বোঝেন, পশ্চিমের আধুনিক কৃষিকাজের সঙ্গে তার সাদৃশ্য কম৷ কাজেই জার্মানির পূর্বাঞ্চলের খামারগুলিতে আরো বড় আকারের যন্ত্রপাতি ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নিয়োগ করে পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা করা হয়েছে৷
আরটিএল টেলিভিশনের একটি প্রোগ্রাম গত কয়েক বছর ধরে জার্মানিকে মাতাচ্ছে; সেটি হলো ‘বাউয়ার্ন সুখ্ট ফ্রাউ', বা ‘চাষি খুঁজছেন সঙ্গিনী'৷ সাথীহীন কৃষিজীবীদের খামারে আসছেন মহিলারা, এই হলো অনুষ্ঠানের কাঠামো৷ জার্মান কৃষিজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি গ্যার্ড সনলাইটনার অনুষ্ঠানটিকে বিশেষভাবে অপছন্দ করতেন৷ তাঁর যুক্তি ছিল, ঐ অনুষ্ঠানে কৃষিজীবীদের স্থূল ও বুদ্ধিহীন হিসেবে দেখানো হয়েছে৷
সনলাইটনার স্মরণ করিয়ে দেন যে, কৃষি হলো বিশ্ব অর্থনীতির প্রাচীনতম অংশগুলির মধ্যে একটি এবং কৃষি চিরকালই থাকবে, এমনকি মোটর গাড়ি নির্মাণ শিল্প অন্তর্হিত হবার পরেও৷ বিশ্বের জনসংখ্যা বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে খাদ্যের প্রয়োজন৷ জার্মানি আজ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম খাদ্য রপ্তানিকারক দেশ৷ সেদেশে কৃষিজীবীদের নিয়ে মশকরা?
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷