আসছে হিটলারের ‘মাইন কাম্ফ’
২৮ ডিসেম্বর ২০১৫আডলফ হিটলার ও তার নাৎসি ভাবাদর্শের পরিণতি গোটা বিশ্বের ইতিহাসে তুলনাহীন৷ যুদ্ধবিগ্রহ ছাড়াই ঠান্ডা মাথায় সুপরিকল্পিতভাবে ৬০ লক্ষ মানুষের নিধনযজ্ঞের মতো ঘটনা এর আগে অথবা পরে ঘটেনি৷ ইহুদি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হিটলার ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্প' তৈরি করিয়েছিলেন, যেখানে প্রায় কারখানার মতো ‘দক্ষতার সঙ্গে' মানুষ মারার ব্যবস্থা ছিল৷
সেই হিটলারের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘মাইন কাম্ফ' বা ‘আমার সংগ্রাম' যে যুদ্ধোত্তর জার্মানিতে নিষিদ্ধ হবে, তাতে বিস্ময়ের কোনো কারণ থাকতে পারে না৷ এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক বইগুলির মধ্যে একটি হিসেবে পরিচিত৷ বাভেরিয়া রাজ্যের হাতে এই বইটির স্বত্ব ছিল৷ কিন্তু প্রায় ৭০ বছর পর আগামী ৩১শে ডিসেম্বর সেই স্বত্বের মেয়াদ শেষ হচ্ছে৷ তার পর যাতে বইটির বিভিন্ন সংস্করণ বাজারে ছড়িয়ে যেতে না পারে, জার্মানির সব রাজ্যের বিচারমন্ত্রীরা ২০১৪ সালের শুরুতেই তার প্রস্তুতি নিয়েছেন৷ জার্মানির ফেডারেল বিচারমন্ত্রীও এর প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন৷
আগামী ৮ই জানুয়ারি মিউনিখ শহরের ঐতিহাসিকদের এক প্রতিষ্ঠান ‘মাইন কাম্ফ'-এর প্রায় ২,০০০ পৃষ্ঠার এক ‘ক্রিটিকাল এডিশন'৷ অর্থাৎ হিটলারের নিজস্ব লেখার পাশাপাশি থাকবে বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য৷ উদ্দেশ্য, বইটিকে ঘিরে যে ‘মিথ' বা এক ধরনের সম্ভ্রম রয়েছে, তা দূর করে সঠিক প্রেক্ষাপটে হিটলারের বিকৃত মানসিকতা তুলে ধরা৷ আজকের জার্মানিতেও যারা নব্য নাৎসি ভাবধারার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে, তাদেরও এর মাধ্যমে সতর্ক করে দিতে চান মিউনিখের ঐতিহাসিকরা৷ জার্মানির শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে স্কুলেও বইটি পড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন৷
সেই প্রচেষ্টা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে অবশ্য সংশয়ের শেষ নেই৷ বিশেষ করে কিছু ইহুদি সংগঠনের আশঙ্কা, এর ফলে হিতে বিপরীত হতে পারে৷ মানবতা ও গণতন্ত্রবিরোধী ব়্যাডিকাল শক্তি এই বই পড়ে উলটে বাড়তি উৎসাহ পেতে পারে৷ জার্মানির কেন্দ্রীয় ইহুদি সংগঠনের প্রধান অবশ্য এই উদ্যোগের পক্ষে সায় দিয়েছেন৷ ইসরায়েলেও বিষয়টি নিয়ে চর্চা চলছে৷
বাভেরিয়ার রাজ্য সরকারের পক্ষেও এই সিদ্ধান্ত সহজ ছিল না৷ ইন্টারনেটের যুগে সহজেই এই বইয়ের নাগাল পাওয়া যায়৷ স্বত্ব শেষ হবার পর বইটি প্রকাশিত হবার পথে বাধা সৃষ্টি করাও কঠিন৷ অন্যদিকে যে সরকার উগ্র দক্ষিণপন্থি এনপিডি দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণার উদ্যোগ নিচ্ছে, তার পক্ষে সরকারি অর্থে হিটলারের বই প্রকাশ করার বিড়ম্বনাও কম নয়৷
এসবি/ডিজি (ইপিডি, এপি)
বন্ধুরা, হিটলারের ‘মাইন কাম্ফ’ কি আপনি পড়েছেন? জানান নীচের ঘরে৷