জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোয়ারান্টিনে
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ইউরোপে করোনা মহামারির ‘দ্বিতীয় ঢেউ’-এর আশঙ্কা যতই বাড়ছে ভ্রমণ ও পর্যটনের উপর বাধাও ততই বাড়ছে৷ জার্মানির সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণের হার বিবেচনা করে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল চিহ্নিত করছে৷ বুধবার রাতে রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট ১১টি এমন এলাকার তালিকা প্রকাশ করেছে৷ তার মধ্যে আয়ারল্যান্ড, পর্তুগাল ও ডেনমার্কের রাজধানীও রয়েছে৷ জার্মানির প্রতিবেশী দেশ নেদারল্যান্ডস ও অস্ট্রিয়ার একটি করে অঞ্চলকেও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ চেক প্রজাতন্ত্রের প্রায় সব অঞ্চলও সেই তালিকায় রয়েছে৷ উল্লেখ্য, ইইউ দেশগুলির কোনো অঞ্চলে সপ্তাহে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৫০ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেই জার্মানি সেই অঞ্চলকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে সতর্কতা জারি করে থাকে৷
জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো অঞ্চলে ভ্রমণ সম্পর্কে সতর্কতা জারি করলে একদিকে সে সব যাত্রীর সুবিধা হয়, যারা সেখানে যাবার জন্য টিকিট অথবা হোটেল বুকিং করেছেন৷ কোনো জরিমানা ছাড়াই সেই অর্থ ফেরত পাওয়া যায়৷ অন্যদিকে সতর্কতা উপেক্ষা করে সে সব জায়গা ভ্রমণ করলে নানারকম সমস্যার মুখে পড়তে হয়৷
এদিকে খোদ জার্মানিতেই করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে চলেছে৷ এমনকি সরকার ও প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরাও রেহাই পাচ্ছেন না৷ এবার জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস কোয়ারান্টিনে যেতে বাধ্য হলেন৷ তাঁর এক দেহরক্ষী করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকেও বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে৷ প্রাথমিক পরীক্ষায় অবশ্য তাঁর দেহে করোনা শনাক্ত করা যায় নি৷ বুধবার তিনি বাসা থেকেই কাজ করেছেন এবং ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়েছেন৷ বুধবারই তাঁর জর্ডানের রাজধানী আম্মানে ফ্রান্স ও জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের কথা ছিল৷
জার্মানির অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী পেটার আল্টমায়ারও এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, যে তিনি স্বেচ্ছায় বিচ্ছিন্ন থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ তবে শুক্রবার তাঁর করোনা পরীক্ষার ফল নেতিবাচক ছিল৷ নিজের শরীর ভালো আছে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন৷ এর আগে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল মার্চ মাসে করোনায় আক্রান্ত এক ডাক্তারের সংস্পর্শে এসে দুই সপ্তাহের কোয়ারান্টিনে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন৷
বুধবারই জার্মান সরকারের করোনা সতর্কতা অ্যাপের একশো দিন পূর্তি উপলক্ষ্যে সরকার জনসাধারণকে আরও সচেতন হবার আহ্বান জানিয়েছে৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান বলেন, ‘‘মহামারির সময় দয়া করে এই টুল ব্যবহার করুন৷'' জার্মানির মানুষ তাঁদের মোবাইল ফোনে স্বেচ্ছায় এই অ্যাপ ডাউনলোড করে আগাম সতর্কবার্তা পেতে পারেন৷ করোনা পরীক্ষা হলে সেই ফলাফলও অ্যাপে নথিভুক্ত করার সুযোগ রয়েছে৷ পরিচয় প্রকাশ না করেও করোনায় আক্রান্ত কোনো মানুষের সংস্পর্শে এলে এই অ্যাপ সতর্ক করে দেয়৷ জার্মান স্বাস্থ্যমন্ত্রী অবশ্য স্বীকার করেন, যে এখনো পর্যন্ত মাত্র অর্ধেক ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হচ্ছে৷ প্রায় ৫,০০০ অ্যাপ ব্যবহারকারী এমন সতর্কবার্তা পেয়েছেন৷ প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ সেই অ্যাপ ডাউনলোড করেছেন৷ জার্মান সরকার এই অ্যাপকে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সংগ্রামে বড় সাফল্য হিসেবে তুলে ধরলেও সমালোচকদের মুখ বন্ধ হচ্ছে না৷ তাঁদের অভিযোগ, ঢাকঢোল পিটিয়ে অ্যাপ চালু করার পর সরকার সেই অ্যাপের উপযোগিতা নিয়ে যথেষ্ট প্রচার না চালানোয় মানুষ যথেষ্ট সচেতন হচ্ছে না৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)
১৫ সেপ্টেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...