‘জামায়াত নিষিদ্ধ করতেই হবে'
২৭ মার্চ ২০১৪জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দেয়ার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত মাত্র৷ খুব শিগগিরই তা বাস্তবায়ন করা হবে৷ আর যখন হবে তখন আপনাদের জানানো হবে৷'' এর একদিন আগে মঙ্গলবার যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নিষিদ্ধের আবেদন করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা৷ এখন যে কোনো সময় তদন্ত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে বিচার শুরু হবে৷
জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, গণতন্ত্রের যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল সে গণতন্ত্র এখন আর এ দেশে নেই৷ তবে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ বলেছেন, ‘‘সবাই এগিয়ে যাচ্ছে, আমরাও এগিয়ে যাব৷'' আর বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ বললেন, ‘‘জামায়াতের ব্যাপারে দেশ ও জনগণের নেয়া সিদ্ধান্ত জাতীয় পার্টি (এ) মেনে নেবে৷ আমরা দেশবাসীর সঙ্গেই আছি৷''
স্মৃতিসৌধে আসা মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘১৯৭১ সালে যে ভয়াবহ দৃশ্য দেখেছি, তা ভোলার নয়৷ অসুস্থ শরীর নিয়েও এসেছি শহীদদের স্মরণে৷ রাজাকারের বিচার চাই৷'' তবে তিনি মনে করেন, স্বাধীনতার ৪৩ বছরেও দেশে হানাহানি বন্ধ হয়নি৷ এখনো জীবনের নিরাপত্তা নেই৷ রাজনীতিবিদদের শুধু ফুল দিয়ে গেলেই চলবে না৷ দেশে হানাহানি বন্ধ করার প্রতিজ্ঞা করতে হবে৷
আরেকজন মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এতদিন পর মনে হচ্ছে স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়নে কাজ শুরু হয়েছে৷ লাখো কণ্ঠে গাওয়া হচ্ছে জাতীয় সংগীত, প্রায় ২৭ হাজার মানুষ একসঙ্গে মাথার উপর তুলে ধরছে জাতীয় পতাকা, একজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, অন্যদেরও বিচার হচ্ছে – এগুলো চেতনা বাস্তবায়নেরই অংশ৷ তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া আরো দ্রুত করতে হবে৷ আর জামায়াত নিষিদ্ধ করার কথা শুধু মুখে বললেই হবে না, বাস্তবে উদ্যোগও নিতে হবে৷'' আওয়ামী লীগ সরকারের ৫ বছরেরও বেশি সময়ে জামায়াত কেন নিষিদ্ধ হয়নি – এমন প্রশ্নও তোলেন এই মুক্তিযোদ্ধা৷
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে শ্রদ্ধাবনত জাতি ফুলে ফুলে ভরে দেয় সাভারস্থ জাতীয় স্মৃতিসৌধ, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং টুঙ্গিপাড়ার বঙ্গবন্ধুর মাজারের বেদিমূল৷ লাল-সবুজ পতাকা হাতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের কণ্ঠেই ধ্বনিত হয়েছে একই স্লোগান – ‘সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চাই, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে৷'
সত্যিই এক নতুন রূপে ও চেতনায় ৪৪তম স্বাধীনতা দিবস পালন করল দেশবাসী৷ বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টির প্রচেষ্টার পাশাপাশি ৪৩ বছর ধরে যার জন্য অপেক্ষা করেছিল গোটা দেশ, সেই একাত্তরের ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় গত ১২ই ডিসেম্বর কার্যকর হওয়ায় বাঙালির জীবনে এবার যেন নতুন করে এসেছিল স্বাধীনতা দিবস৷ সবার চোখে-মুখে ছিল স্বস্তির ছাপ, রক্তের ঋণ শোধ করার গর্ব, নিষ্ঠুরতার বিচার করতে পারার এক ধরনের তৃপ্তি৷ ‘রুখে দাঁড়াও পরাজিত শক্তির হুংকার, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি এবার' – এমন স্লোগান নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ছিল নতুন প্রজন্মের বাঁধভাঙ্গা স্রোত৷ সারাদেশেই নতুন প্রজন্মের অভূতপূর্ব জাগরণ নতুন মাত্রা যোগ করে৷
এদিকে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে গণজাগরণ মঞ্চের রাজপথ সংলাপে অংশ নিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশের তরুণরা মিলে আন্দোলন করে রাষ্ট্রীয় আইন সংশোধন করতে সরকারকে বাধ্য করেছে৷ একজন যুদ্ধাপরাধীর রায় পরিবর্তন করিয়ে তাকে ফাঁসির দড়িতে ঝোলাতে বাধ্য করেছে৷ পৃথিবীর ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত আর একটাও খুঁজে পাওয়া যাবে না৷ তরুণরাই আমাদের গ্লানিমুক্ত বাংলাদেশ উপহার দিয়েছে৷''
সংলাপের শুরুতে ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, গণজাগরণ মঞ্চের ৬ দফা ও আমরা কোথায়' শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার৷ প্রবন্ধে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রমের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এ প্রক্রিয়াকে আরো দ্রুত করার আহ্বান জানান৷ প্রয়োজনে তিনি ‘ট্রাইব্যুনাল সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলেন৷