জাপানে সস্তায় দামী ব্র্যান্ড, টানছে পর্যটক
১ আগস্ট ২০২৪জুলাই মাসে গত ৩৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম দাম হয়েছে ইয়েনের৷ এর ফলে, জাপানে এসে ভিড় করছেন সারা বিশ্বের বিলাস পণ্যপ্রেমী মানুষ৷
বিলাস পণ্যের ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলো এতে অখুশি, কারণ, তাদের কেতাদুরস্ত জুতো, দামী হুইস্কি সবই এখন বিশ্বের অন্যান্য জায়গার তুলনায় জাপানে সস্তা৷ এতে তাদের লাভের পরিমাণও কমছে৷
কিছু পর্যটক, যেমন চীনের পর্যটকরা, নিজের দেশে এমন পণ্য না কিনে জাপানে গিয়ে তা কিনছেন৷ ইয়েনের দামের পরিবর্তনশীলতার কারণে সংস্থাগুলি চাইলেই দাম বাড়াতে পারছে না৷ ফলে, যত দিন ইয়েন দুর্বল থাকবে, তত দিন লাভও বাড়বে না৷
২৯ বছর বয়সি ঝাং লেই চীনের দক্ষিণের রাজ্য হুনান থেকে এসেছেন৷ পেশায় ডিজে ঝাং জাপানে প্রথমবারের মতো এলেও আবার আসতে চান৷ শনিবারে টোকিয়োর গিনজা অঞ্চলে তাকে দেখা যায় কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকতে৷
দুটো লুই ভুঁইত্তো ব্র্যান্ডের ব্যাগ ও স্পোর্টসের পোশাকের ব্র্যান্ড ওনিটসুকা টাইগারের ব্যাগ হাতে ঝাং বলেন, ‘‘এখানে এসব আরো সস্তা৷''
গরম থেকে বাঁচতে হাতপাখা নিয়ে লুই ভুঁইত্তো দোকানের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন আরো জনা ১৫ ক্রেতা৷ তত ক্ষণে ঝাং হাতের দিকে দেখিয়ে বলেন যে তিনি ঘড়ি কিনতে চান৷ কোন ব্র্যান্ড? ‘‘রোলেক্স'', তার জবাব৷
এই ধারা লুই ভুঁইত্তোকে অবাক করেছে৷ সংস্থাটির প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা জাঁ-জাঁক গুইয়োনি বলেন, ‘‘আমাদের ব্যবসা দিক বদল করে এশিয়া থেকে জাপানের দিকে ঘুরেছে৷''
এমন ধারা চীনে এই সংস্থার লাভ ব্যাপকভাবে কমাচ্ছে, জানান তিনি৷ মুদ্রার দামের দ্রুত বদল এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, গুইয়োনি জানান৷
কিন্তু চলতি সপ্তাহে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন তারা কারণ ব্যাংক অফ জাপান সুদের হার বাড়িয়েছে বুধবারে৷
ডিওর, শানেল, মাউন্ট ফুজি
চীনে লুই ভুঁইত্তোর জনপ্রিয় আলমা বিবি হ্যান্ডব্যাগের দাম দু'হাজার মার্কিন ডলারের কিছু বেশি৷ জাপানে তা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮৭৫ ডলারের কাছাকাছি দামে৷ এর আগের মাসে, আরো ১০০ ডলার কম দাম ছিল এই ব্যাগের৷
চীনে এই ব্যাগের দামের সমমানে পৌঁছাতে জাপানের ইয়েনকে ডলারপিছু ১৩৬ ইয়েন ছুঁতে হবে৷ গত বৃহস্পতিবার সাড়ে চার মাসে সবচেয়ে ভালো দাম ছিল ইয়েনের, ডলারপিছু ১৪৯ ইয়েন৷
শুধু ব্যাগ নয়, দামী মদ কেনাতেও ঝুঁকছেন চীনা পর্যটকরা, জানাচ্ছে পানীয় প্রস্তুতকারী সংস্থা রেমি কনত্রো৷
কারটিয়ের ব্র্যান্ডের মালিক সুইস সংস্থা রিশেমঁ জাপানে বছরের প্রথমার্ধ্বে তার বিক্রি বাড়িয়েছে ৬০ শতাংশ৷ এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন চীনা, অ্যামেরিকান ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নানা দেশ থেকে আসা পর্যটকরা৷
ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা ফুমিকো আনিসাকে জিজ্ঞেস করা হয় জাপানে তার পরিকল্পনা কী৷ জবাবে তিনি বলেন, ‘‘শপিং, শপিং, শপিং! দামী ব্র্যান্ড এখানে সস্তা৷ আমরা ডিওর ব্র্যান্ডের জিনিস কিনব, কিন্তু তার আগে শানেল ঘুরে আসব৷''
টোকিয়ো ছাড়াও পশ্চিমের শহর ওসাকায় যাবেন তিনি, মাউন্ট ফুজির কাছে৷ সেখানে একটি বিশাল শপিং মল আছে, যেখানে বিশ্বের নামী ব্র্যান্ডের সমাহার৷
জুন মাসে রেকর্ড সংখ্যক, ৩১ লাখ পর্যটক, আসেন জাপানে, জানাচ্ছে সরকারি পরিসংখ্যান৷ করোনা অতিমারির আগে ২০১৯ সালে জাপানে বেড়াতে আসেন ৩২ লাখ পর্যটক৷
সরকারের মতে, এবছর পর্যটকরা জাপানে প্রায় ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করবেন৷ বার্ধক্যে জর্জরিত জনসংখ্যার দেশ জাপানে পর্যটন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় আয়ের উৎস৷
নিউ ইয়র্ক থেকে আসা পর্যটক ইয়াদভিন্দর সিং বলেন যে তিনি সেভাবে কেনাকাটার পরিকল্পনা নিয়ে না আসলেও জারা ও অন্যান্য দোকানে কম দাম দেখে তার সিদ্ধান্ত বদলাচ্ছেন৷
২৬ বছর বয়সি এই পর্যটক জানান যে ইতিমধ্যেই অনেক কেনাকাটা হয়ে গেছে তার৷ ‘‘জামাকাপড়, গয়না, জুতো...গোটা আউটফিটই কিনেছি৷''
এসএস/এসিবি (রয়টার্স)